হারিয়ে যেতে বসেছে লাজুক পাখি হরিয়াল
ধুনট প্রতিনিধি: হাজারো রূপসী পাখির মধ্যে হরিয়াল বাংলাদেশে অত্যন্ত প্রাচীন ও পরিচিত একটি পাখি। এক সময় সবুজ রঙের সুন্দর এই পাখিটি দেশের সর্বত্রের মতো বগুড়ার ধুনট উপজেলার গ্রামাঞ্চলেও প্রচুর দেখা যেত। পথের প্রান্তে বটগাছের উঁচু ডালে সকালে দলবেঁধে হরিয়ালদের রোদ পোহাতে দেখা গেলেও এখন সেই দৃশ্য খুবই বিরল। বর্তমানে এই পাখির দেখা পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর।
তারা অধিকাংশ সময় গাছের সবুজ পাতার আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রাখে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বিচারে গাছ কাটা ও অবৈধ শিকারের কারণে হরিয়ালের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। শান্ত স্বভাবের এই পাখিটি এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে।
হরিয়াল মূলত ফলভোজী পাখি। তারা গাছের ডুমুর, জাম, বটফলসহ বিভিন্ন বন্য ফল খেয়ে থাকে এবং বীজ ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে বনজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামাঞ্চলের বড় গাছ, বন ও ফলের বাগান হরিয়ালের প্রধান আবাসস্থল।
কৃষিজমির সম্প্রসারণ, ঘন জনবসতি গড়ে ওঠা ও নগরায়নের ফলে এসব আবাসস্থল দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে। একই সঙ্গে কিছু এলাকায় হরিয়াল শিকারও উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের ভৌগোলিক আবহাওয়া ও পরিবেশ হরিয়াল পাখির জন্য বেশ উপযোগী।
সম্প্রতি ধুনট উপজেলায় একটি বটগাছের ডালের পাতার ফাঁকে বসে ডানা মেলতে দেখা গেছে একটি হরিয়ালকে। প্রকৃতি থেকে ধীরে ধীরে বিপন্ন হতে চলা লাজুক পাখি খ্যাত হরিয়ালের নতুন করে দেখা পাওয়া পরিবেশের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ।
পরিবেশ সচেতনদের মতে, অসচেতনতা ও সংরক্ষণের অভাবে এই পাখি আজ হুমকির মুখে। এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে এদের দেখা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘তীর’ এর সদস্য ফারজানা খানম রিতু বলেন, হরিয়াল পাখিটি পাহাড়ি অঞ্চলে কিছুটা দেখা গেলেও সমতল ভূমি থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পথে।
এর মূল কারণ হলো বট, পাকুড় ও ডুমুর গাছের মতো তাদের আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া এবং খাদ্য সংকট। এরা মূলত বট, ডুমুর, পাকুড় ও খেজুর গাছে বাসা বাঁধে এবং এসব গাছের ফলই তাদের প্রধান খাদ্য।
মানবসম্পদের প্রয়োজনে এসব গাছ কেটে ফেলায় তাদের বাসস্থান ও খাদ্যের উৎস ক্রমেই কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার জন্য গাছ কাটা ও বিভিন্ন কারণে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন এই পাখি বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে হরিয়ালসহ অন্যান্য বন্যপাখি নিধন অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পাখিদের নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করা সহজ হবে।









