পুঠিয়ায় নকল প্রসাধনীর রমরমা ব্যবসা, নীরব প্রশাসন
পুঠিয়া প্রতিনিধি: রাজশাহীর পুঠিয়ায় রং ফর্সাকারী ভেজাল ও নামি-দামি দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের নকল কসমেটিকস তৈরির কারখানাগুলো আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় দুই ডজন কারখানায় প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে এই অবৈধ কর্মযজ্ঞ। দীর্ঘ আট বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেয়া হলেও, রহস্যজনক কারণে পুঠিয়া উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ এখনো নীরব ভূমিকা পালন করছে।
অভিযোগ উঠেছে, উৎপাদিত এসব ভেজাল ও অবৈধ প্রসাধনী প্রতিদিন কুরিয়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড়-বড় জেলা শহরের নামি-দামি দোকান এবং বিউটি পার্লারগুলোতে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন ও বাহারি মোড়ক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৬ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন যুগ্ম সচিব স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্রে পুঠিয়া ও চারঘাট এলাকার ১২টি ভেজাল ক্রিম কারখানার নাম উল্লেখ করে সেগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।
নির্দেশপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মডার্ন হারবাল, রূপসী গোল্ড, মেডোনা স্পট ক্রিম, চ্যালেঞ্জার হারবাল, ডিজিটাল হারবাল, সীনা স্পট ক্রিম, রোমাঞ্চ হারবাল, ডায়মন্ড স্পট ক্রিম, ঝিলিক সলিউশন, লাউস স্টার গোল্ড, আইকন হারবাল, লাকি সেভেন এবং জ্যোতি বিউটি হারবাল। নির্দেশনা আসার পর অনেক মালিক কারখানার নাম পরিবর্তন করে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএসটিআই থেকে মাত্র দু-একটি পণ্যের অনুমোদন নিয়ে আড়ালে তারা কয়েক ডজন অবৈধ পণ্য তৈরি করছেন।
কারখানার মালিকরা বাজার থেকে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী, রেমি স্পট ক্রিম ও তিব্বত স্নো সংগ্রহ করে সেগুলোর সাথে মানবদেহের জন্য চরম ক্ষতিকারক স্টিলম্যান, টিয়ারিক অ্যাসিড, আইসোপ্রোপাইল, মাইরিস্টড, স্পিরিট ও আরসি মিশিয়ে নতুন মোড়কে বাজারজাত করছে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মাহমুদা হোসেন জানান, স্টিলম্যান ও টিয়ারিক অ্যাসিডের মতো রাসায়নিক মিশ্রিত এসব ক্রিম ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো ব্যবহারে ত্বকের স্থায়ী ক্ষতিসহ ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। তাই বাজারে পাওয়া যায় এমন নামসর্বস্ব হারবাল ও রং ফর্সাকারী ক্রিম পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার মাসোহারা বা মদদ পাওয়ার কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হচ্ছে না। এতে করে দিন দিন ভেজাল কারখানার সংখ্যা আরও বাড়ছে।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, কারখানাগুলো বন্ধের আগের নির্দেশনার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে অতি দ্রুত এসব নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।









