ঢাকা | ডিসেম্বর ২৭, ২০২৫ - ৭:৪১ পূর্বাহ্ন

বাগমারায় সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে তিন হাজার মানুষ

  • আপডেট: Saturday, December 27, 2025 - 12:29 am

বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহী বাগমারা উপজেলার নিচু কাতিলা এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। এই জনগোষ্ঠীর জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষিকাজ, ক্ষুদ্র ব্যবসা, দিনমজুরি ও শিক্ষা-নির্ভর কর্মকাণ্ড পরিচালনায় যাতায়াতের একমাত্র মুলিভীটা রাস্তার অবস্থা এখন বেহাল। হাজারো মানুষের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আজও কাঁচা ও কর্দমাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘ যুগ ধরে।

এটি শুধু যোগাযোগের ব্যবস্থার সমস্যা নয়; এটি একটি দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি বলেও দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাগমারার বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলের রাস্তা পাকা হলেও এটি অবহেলিত থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এই রাস্তা পাকা করণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাতিলা গ্রামের কিনুরমোড় এলাকায় অবস্থিত নাগা বাজার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র। কাতিলা গ্রামটি মূলত দুই ভাগে বিভক্ত উপার কাতিলা ও নিচু কাতিলা। এই দুই অংশের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত নাগা বাজারকে কাতিলা গ্রামের কেন্দ্রবিন্দু বলা হয়।

এখান থেকেই আশপাশের গ্রামের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। নাগা বাজার থেকে মৌলভীভিটা পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ১২০০ মিটার। দৈর্ঘ্যে ছোট হলেও এই সড়কটির গুরুত্ব ব্যাপক। কারণ মৌলভীভিটার সঙ্গে নাগা বাজার উপজেলার সবচেয়ে বড় বাজার ভবানীগঞ্জ ও বীরকুৎসা সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি ত্রিমুখী যোগাযোগ কেন্দ্র তৈরি করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি মূলত কাতিলা গ্রামের নিচু অংশ, যা স্থানীয়ভাবে “নিচু কাতিলা” নামে পরিচিত। ভৌগোলিকভাবে এলাকাটি নিচু হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিবদ্ধতা একটি নিয়মিত সমস্যা। বছরের একটি বড় সময় জুড়েই সড়কটি কাঁদা ও পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে থাকে। ফলে গাড়ি রাস্তায় চলাচলে বেগ পেতে হয় সবশ্রেণির মানুষকে। তাই এলাকায় প্রায় তিন হাজার মানুষের প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছে রাস্তাটি পাকা করণের।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকলেও কর্তৃপক্ষের নজর নেই। এটি শুধু যোগাযোগের সমস্যা নয়; এটি একটি দীর্ঘদিনের উন্নয়ন বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি। এই সড়কের আশপাশে স্কুল, মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যা এলাকার সামাজিক ও নৈতিক কাঠামো গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা মাহিনুল ইসলাম বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই নাগা বাজার– মুলিভিটা সড়কটি কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কাঁদা ও পানিতে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন রোগী, গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্ক মানুষ। জরুরি রোগীকে বাজার বা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে বাঁশের খাট বা ভ্যানগাড়িতে করে রোগী বহন করতে হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও অমানবিক। গর্ভবতী নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। প্রসবকালীন জটিলতায় সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় জীবনঝুঁকি বেড়ে যায়। এখানকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশু, কিশোর, নারী ও বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তায় যাতায়াত করেন। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে কাঁদা ও পানিতে রাস্তা এতটাই দুর্গম হয়ে ওঠে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় যেতে পারে না এবং বয়স্করা ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশ নিতে বাধাগ্রস্ত হন বলে দাবি স্থানীয় দের।

তাদের অভিযোগ, বিগত বছরগুলোতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য (এমপি) এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার নাগা বাজার–মুলিভিটা সড়ক পাকা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নির্বাচনী সভা, প্রচারণা ও আশ্বাসে এই সড়কের কথা উঠে এলেও বাস্তবে আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, নিচু এলাকা ও রাজশাহী জেলার শেষ সীমান্তে অবস্থান কিংবা রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের অজুহাতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। শেষ প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় যেন এই অঞ্চলের মানুষ উন্নয়নের তালিকায় শেষ সারিতে পড়ে আছে। এই সড়কটি পাকা করা হলে অন্তত তিনটি গ্রামের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। নওগাঁ ও নাটোর জেলার সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে এবং এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড গতিশীল হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাগমারা উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল জলিল বলেন, বর্তমানে দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় খুব বেশি প্রকল্প চলমান নেই। তাই সব রাস্তার কাজ করাও সম্ভব হয় না। নাগা বাজার-মুলিভিটা/মৌলভীভিটা সড়ক পাকাকরণের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করবো। যেহেতু জনবহুল এলাকায় এই সড়কটি অবস্থিত আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার থাকবে।