গোদাগাড়ীতে জমির পানি নিষ্কাশন বিরোধে সংঘর্ষ, গ্রেপ্তারের পরও হামলা
গোদাগাড়ী প্রতিনিধি: রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে জমির পানি নিষ্কাশনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মারধর, ফসল নষ্ট ও চুরির অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তারের পরও ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর পুনরায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটে গত বুধবার রাতে আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় মা ও ছেলেসহ অন্তত দুইজন গুরুতর আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়, যেখানে তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়নের গড়ডাইং গ্রামের বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম (৪৮)-এর ভোগ-দখলীয় সরিষার জমি গত ৩১ অক্টোবর টানা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। পরদিন গত ১ নভেম্বর সকালে তিনি পার্শ্ববর্তী জমির মালিক মাহাবুলের পতিত জমি দিয়ে জমির পানি বের করার চেষ্টা করেন। অভিযোগে বলা হয়, পাশের জমিতে কোনো ফসল না থাকা সত্ত্বেও মাহাবুল পানি নিষ্কাশনে বাধা দেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে বিষয়টি সংঘর্ষে রূপ নেয়। অভিযোগ অনুযায়ী, মাহাবুলের নির্দেশে লোহার রড, হাতুড়ি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে একদল লোক মনিরুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং রক্তাক্ত হন। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাঁর দুই ছেলে মো. শাকিল (২৫) ও মো. নুরুজ্জামান (২০)-কেও মারধর করা হয়। স্থানীয়দের চিৎকার ও হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হলে আহতদের উদ্ধার করে গোদাগাড়ী উপজেলার প্রেমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, আহতদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ঘটনার পর গোদাগাড়ী মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযোগের পর অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বলে দাবি তাঁদের। পরিবারের অভিযোগ, গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অভিযুক্তরা গরু ও ছাগল ছেড়ে দিয়ে মনিরুল ইসলামের জমিতে চাষ করা সরিষা নষ্ট করে। এতে প্রায় পাঁচ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে মনিরুল ইসলাম ও তাঁর বড় ছেলে আবারও হামলার শিকার হন।
ভুক্তভোগী পরিবারের আরও অভিযোগ, এর আগেও একই আসামিরা বসতবাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে টিনের বাক্সে রাখা মহিষ বিক্রির নগদ এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে যান। এসব ঘটনায় পরিবারটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। সর্বশেষ, ১৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাতটার দিকে গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ মামলার প্রধান আসামি আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। তবে গ্রেপ্তারের পরও মামলার অন্যান্য আসামিসহ আরও কয়েকজন শাকিল ও তাঁর মা রুনা বেগমের ওপর পুনরায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে তাঁরা গুরুতর আহত হন। পরে স্বজনেরা তাঁদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জমির পানি নিষ্কাশনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছিল। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে গোদাগাড়ী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান বাসির বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।











