ঢাকা | নভেম্বর ৫, ২০২৫ - ৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

সার নিয়ে নতুন নীতিমালা: বির্তকে দুই বিতরণ সংস্থা, বিপাকে কৃষক

  • আপডেট: Tuesday, November 4, 2025 - 10:32 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ব্যুরো: চলমান সমন্বিত সার নীতিমালা-২০২৫ বাস্তবায়নকে ঘিরে মাঠে মাঠে চলছে বিতর্ক ও মতপার্থক্য। নতুন নীতিমালায় আসছে বড় পরিবর্তন-লক্ষ্য, স্বচ্ছ ও কৃষকবান্ধব বিতরণ ব্যবস্থা। কিন্তু বিতরণের দুই সংস্থা, বিসিআইসি ও বিএডিসি’র অবস্থান ভিন্ন। ডিলাররা বলছেন, এতে কমবে প্রাপ্যতা; বাড়বে সঙ্কট। প্রশ্ন উঠেছে, সারের ঘাটতি রেখে এই পরিবর্তনে হাসবে কি কৃষকের মুখ, নাকি আগের মতোই চলবে সঙ্কটের গল্প?

জানা গেছে, চলমান সমন্বিত সার নীতিমালা-২০২৫ নিয়ে মাঠে মাঠে এখন প্রশ্ন একটাই-নীতিমালা বদলালেই কি বদলাবে বাস্তবতা? সরকার বলছে, ইউনিয়নভিত্তিক ডিলার নিয়োগের মাধ্যমে বিতরণ হবে আরও স্বচ্ছ, আরও কৃষকবান্ধব। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন-অনেকে এখনো জানেন না নতুন নীতিমালার বিষয়বস্তু। চাহিদার তুলনায় সার সরবরাহে সারাবছর জুড়েই ছিলো ঘাটতি-দামও বেসামাল। ফলে নীতিমালা নিয়ে কৃষক সমাজে বাড়ছে শঙ্কা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক জানান, সরবরাহ ঘাটতি থাকলে নীতিমালা ফলপ্রসূ হবে না। তিনি আরো বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে ঋতু, ফসলভেদে এবং মাসওয়ারী চাহিদার বিপরীতে এই জেলায় সার বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না বলে, তাদেও জানিয়েছেন বিসিআইসি’র একাধিক ডিলাররা। তাই জেলার ৫টি উপজেলায় শতভাগ সরবরাহ নিশ্চিত না হলে কোনো নীতিমালাই মাঠে কাজে আসবে না। তাদের পরামর্শ-আমদানি উন্মুক্ত এবং নীতিনির্ধারণে প্রকৃত কৃষকদের সম্পৃক্ত করা জরুরি।

আর প্রান্তিক কৃষক মজিবুর রহমান জানান, মাস দুয়েক আগে তার আমবাগানে ২ বস্তা ডিএপি সারের জন্য বেশকিছু খুচরা ডিলারের দোকানে গিয়েছিলাম, কিন্তু সময়মত সার পায়নি। তাদের বক্তব্য চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ করছে না কর্তৃপক্ষ। সদর উপজলার কৃষক আবু তাহের জানান, আমরা প্রান্তিক চাষি, বাড়ির দোরগোড়ায় এবং নায্যমূল্যে কিভাবে সার পাবো সেটাই আমাদের চাওয়া-পাওয়া। এর বাইরে আমরা অন্য কিছু ভাবিনা। তবে, শুনছি নতুন সার নীতিমালায় খুচরা সার ডিলার বাতিল করা হবে।

সেক্ষেত্রে, আমার ঝিলিম ইউনিয়নে একাধিক খুচরা সার ডিলার ছিল এবং আমরা চাহিদা অনুযায়ী জমির কাছাকাছি ডিলারদের কাছ থেকে সার নিয়ে জমিতে দিতাম।এখন যদি ডিলার কিমিয়ে দেয়, সেখানে আমাদের দূর থেকে সময় এবং বাড়তি খরচ দিয়ে সার নিতে হবে। এতে কৃষকদের ভোগান্তি এবং লাইন ধরে সার নিতে হলে মাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কবে। আর বর্তমানে আমার এলাকার পরিচিত ডিলারের কাছ বাকি এবং ফোন করেই সহজেই সার পেতাম।

এদিকে, নতুন নীতিমালায় ডিলার সংখ্যা বাড়ানো হলেও; খুচরা সার ডিলার কমানোর সিদ্ধান্তে উদ্বেগ বাড়ছে মাঠপর্যায়ে। সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আতাহির এলাকার খুচরা সার ডিলার নুরুজ্জামান জানান, বাস্তবতা না জেনে নিয়োগ বাতিল করা হলে ভেঙে পড়বে তৃণমূল পর্যায়ের সার বিতরণ ব্যবস্থা।

তিনি মনে করেন, খুচরা সার ডিলারই মাঠ পর্যায়ে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে সময়মত সার পৌছিয়ে দিচ্ছে, এর বাইরে নতুন খসড়া নীতিমালা আরোপ হলে ভেঙে পড়বে তৃণমূল পর্যায়ের সার বিতরণ ব্যবস্থা। অন্যদিকে, সবচেয়ে বড় মতপার্থক্য এখন বিএডিসি ও বিসিআইসি ডিলারদের মধ্যে। বিএডিসি ডিলাররা নতুন নীতিমালাকে স্বাগত জানালেও, বিসিআইসি ডিলাররা কমিশন বৃদ্ধি ও ২০০৯ সালের পুরনো নীতিমালা বহালসহ পাঁচদফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের আশঙ্কা-খুচরা ডিলার কমে গেলে থমকে যাবে পুরো বিতরণ ব্যবস্থা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. ইয়াছিন আলী জানান, কৃষকদের দৌড়ঝাঁপ কমিয়ে সহজে সার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতেই-নতুন সমন্বিত সার নীতিমালা বাস্তবায়নের পথে সরকার। তিনি আরো বলেন, এতে ডিলারদের মধ্যে আসবে সমন্বয়-বিতরণ হবে একই নিয়মে। এতে মনিটরিং সহজ হবে, কমবে মাঠের বিশৃঙ্খলাও। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিএডিসি সার ও বীজ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ সোহেল জানান, নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে কৃষক সহজেই সময়মতো সার পাবেন এবং তা ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। এতে কোনো জটিলতা বা বৈষম্য থাকবে না। তিনি আরও বলেন, এই নীতিমালা কার্যকর হলে বিএডিসি ও বিসিআইসি-উভয় প্রতিষ্ঠানের অধীন ডিলারদের মধ্যে সমতা নিশ্চিত হবে। সকল ডিলার সমান মর্যাদা পাবেন এবং সার বরাদ্দ- বিতরণ ও তদারকিতে আর কোনো সমন্বয়হীনতা থাকবে না। এতে স্বচ্ছতা ফিরে আসবে।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম জানান, বিদ্যমান সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০০৯ বহাল রাখলে মাঠে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। বিদ্যমান খুচরা সার ডিলারদের বহাল রাখলে প্রান্তিক কৃষক পর্যায়ে সার পৌছানো দ্রুত সম্ভব। নতুন নীতিমালায় প্রান্তিক কৃষকদের সার পেতে সময়, বাড়তি খরচ এবং হয়রানির শিকার হতে হবে। তিনি সার ডিলারদের কমিশন বৃদ্ধি এবং সার মনিটরিং ব্যবস্থ্য আরো জোরদার এবং চাহিদা মোতাবেক শতভাগ সার সরবরাহ নিশ্চিত করেলেই মাঠপর্যায়ে কোন সমস্যা থাকবে না বলে জানান।