ঢাকা | নভেম্বর ৪, ২০২৫ - ১২:২৫ অপরাহ্ন

কুয়াশার নরম ঘোমটা উঠেছে প্রকৃতির মুখে

  • আপডেট: Monday, November 3, 2025 - 10:19 pm

রাজশাহীতে শীতের আগমনী বার্তা:

জগদীশ রবিদাস: অসীম লাবণ্য আর স্নিগ্ধতার আঁচল পেতে সম্প্রতি বিদায় নিয়েছে শরৎ। চলছে সেই ঋতু, যার পদরেখা বেশ শান্ত হলেও তার স্পর্শেই প্রকৃতি পায় পরিপূর্ণতার সোনারং, সে আমাদের প্রিয় হেমন্ত। রাজশাহীসহ পুরো উত্তর জনপদে স্থীর এই হেমন্তেই যেন শুরু হয়ে গেছে শীতের আমেজ। সন্ধ্যার পর শুরু হয়ে রাতভর ঝরছে হালকা কুয়াশা।

সেই কুয়াশা থাকছে সকাল আটটা-নটা অবধি, তাপমাত্রাও নেমে এসেছে। রাজশাহী শহরের ডাবতলা এলাকায় সকালে হাঁটতে বের হওয়া ওয়াজেদ আলী (৪৪) ঘন কুয়াশা দেখে বললেন, ‘মনে হচ্ছে শীত নেমে এসেছে।’ হেমন্তের ভোরের বাতাস জানিয়ে দিচ্ছে তার শীতল স্পর্শ।

সকালবেলায় ঘাসের ডগায়, শিউলি ফুলের পাপড়িতে জমে থাকা শিশিরকণা মুক্তার মতো ঝিকমিক করে ওঠে প্রথম সূর্যের সোনালি আভায়। সে এক অপার্থিব দৃশ্য! যেন প্রকৃতির বুকে কেউ বিছিয়ে দিয়েছে হিরের দ্যুতিময় কণা। শিউলিগাছের তলায় বসে ফুলের মেলা, রাতভর ঝরে পড়া শিউলির মিষ্টি সুবাসে ভরে থাকে চারপাশ।

সোমবার ভোর থেকেই রাজশাহী নগরীতে ডানা মেলেছে কুয়াশা। দক্ষিণের পদ্মাপাড় থেকে আমচত্বর, নওদাপাড়া, বারোরাস্তা, শহিদ কামারুজ্জামান সড়ক, সিপাইপাড়া, বোয়ালিয়া, লক্ষ্মীপুর, ভদ্রা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা; সবখানেই কুয়াশার সাদা আস্তরণে ঢাকা পড়ে যায় চতুর্দিক। সড়কে চলাচলরত যানবাহনগুলোকেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হয়। কুয়াশার সকাল ঘিরে শহরজুড়েই যেন জমে উঠেছে শীতের আমেজ। নগরীর বিভিন্ন মোড়ের চা দোকানগুলোতে ভিড় জমেছে চায়ের কাপে উষ্ণতা খুঁজতে আসা মানুষের। কেউ গল্পে মেতে আছেন, কেউ আবার ভাপা পিঠার ধোঁয়ায় মিশে যাচ্ছেন আগাম শীতের স্বাদে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত দিনের তুলনায় প্রায় দুই ডিগ্রি কম। আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলেও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী উম্মে তাবাস্সুম বলেন, ভোরে বাইরে বেরিয়ে দেখি চারপাশ কুয়াশায় ঢেকে গেছে। গাছের পাতায় শিশির আর কুয়াশার মিশ্রণটা দারুণ লাগে। এতদিনের গরম শেষে এ ঠান্ডা হাওয়া সত্যিই প্রশান্তি দিচ্ছে। তাই ভোরেই বেরিয়ে পড়েছি কুয়াশা দেখতে। শালবাগান এলাকার মতিউর রহমান মামুন বলেন, রাতে ফ্যান চালিয়ে ঘুমালেও ভোরের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে শীতকাল চলছে। শীদের আগাম এই আমেজ নিতে কাকডাকা ভোর থেকেই চায়ের দোকানগুলো জমজমাট।

পদ্মা নদীর তীরে সকালে হাঁটতে আসা নারগীস বেগম বলেন, নদীর ওপরে কুয়াশার সাদা পর্দা ঝুলে ছিল অনেকক্ষণ। সূর্য উঠলেও তার আলো ভেদ করে কুয়াশা কেটে যেতে সময় লেগেছে। সেই দৃশ্য সত্যিই মোহনীয়।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষক তারেক আজিজ বলেন, এটি মৌসুমের প্রথম সকালের কুয়াশা। মূলত মেঘ সরে যাওয়ার কারণে এমনটা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিন রাজশাহীতে আরও কুয়াশা পড়তে পারে। আজ (গতকাল সোমবার) সকালে কুয়াশার ভিজিবিলিটি ছিল ৪ কিলোমিটার, যা চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার (গতকাল) ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন গত রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।