ঢাকা | অক্টোবর ২৪, ২০২৫ - ৫:৫০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

নওহাটায় ছেলের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করলেন বাবা

  • আপডেট: Thursday, October 23, 2025 - 10:38 pm

স্টাফ রিপোর্টার: নওহাটায় এক অসহায় পিতা নিজের ছেলের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ না দেয়া, নির্যাতন ও বাড়ি থেকে উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন।

বৃহস্পতিবার পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন,“আমির হোসেন সরকার নামে এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ আইনে মামলা করেছেন। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। পবা থানায় এ ধরনের মামলা এবারই প্রথম দায়ের হলো।” মামলার বাদী আমির হোসেন সরকার (৭০) পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা। তিনি ছেলেকে জমি লিখে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন।

এ বিষয়ে তিনি জানান,বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতার মধ্যেও দীর্ঘদিন ধরে অভাব-অনটনে জীবনযাপন করছেন। নিজের শেষ সম্বল ৬ শতাংশ জমি তিনি বড় ছেলে বোরহান উদ্দিনের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন এই শর্তে যে ছেলে তাঁর ও স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নেবে। কিন্তু ছেলে বিদেশ থেকে ফিরে সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। আমির হোসেন বলেন, “আমার সহায়-সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম।

সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকে অনেক টাকা-পয়সা রোজগার করেছে। দেশে ফিরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা করে। আমি বাধা দিলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে, গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। পরে প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করে।”তিনি আরও জানান, “ছেলে ও ছেলের বউ এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজও নেয় না। ভরণ-পোষণ চাওয়ায় উল্টো হুমকি-ধামকি দেয়। সমাজে এমন সন্তান দেখে লজ্জা লাগে।”

মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে- স্থানীয়ভাবে বারবার মীমাংসার চেষ্টা করেও সমাধান না হওয়ায় গত ৬ অক্টোবর তিনি পবা থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে আদালতের নির্দেশে পবা থানায় গত ২০ সেপ্টেম্বর ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, ২০১৩’-এর আওতায় ছেলে বোরহান উদ্দিন ও তার স্ত্রীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, আসামি বোরহান উদ্দিন সৌদি আরবে যাওয়ার সময়ে তার নামে জমি লিখিয়ে নেন এবং পিতার নামে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি করে দেন। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি সেই জমির দখল নিতে চান এবং পিতা-মাতাকে ঘর থেকে বের করে দিতে একাধিকবার শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পুত্রবধূও এসব ঘটনার প্ররোচক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, “২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন’ প্রণয়ন করে। এই আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তার পিতা-মাতার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই মামলা সমাজে একটি বার্তা দেয়। বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অবহেলা শুধু নৈতিক নয়, আইনগতভাবেও দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেক বৃদ্ধ পিতা-মাতা পারিবারিক চাপে পড়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন, মামলা করতে সাহস পান না। আমির হোসেন সরকারের এই মামলা হয়তো অন্যদেরও সচেতন করবে।”