চারঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার: ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিম ও পিলারের অংশ ভেঙে ভেতরের রড বেরিয়ে এসেছে। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদে জমে থাকা পানি চুইয়ে পড়ছে শ্রেণিকক্ষে। এতে ভিজে যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বই-খাতা, চেয়ার-টেবিলসহ সবকিছু। এমন চিত্র রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সীমান্ত ঘেষা মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের।
চরম আতঙ্কে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছে না বলে জানান শিক্ষকরা। শিক্ষকদের ভাষ্য, জীর্ণ ভবনের কারণে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে। এতে তাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণে সরকারের কাছে দাবি করেন তারা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৮১১ সালে বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির শুরুর দিকে টিনশেডের একটি ভবন ছিল। ১৯৯৪ সালে চার কক্ষের ভবনটি তৈরি করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। তিনটি কক্ষে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস চলে। অপরটিতে শিক্ষা উপকরণ রাখা আছে। ১৯৯৬ সালে নির্মিত দুই কক্ষ বিশিষ্ট ভবনের একটিতে চতুর্থ শ্রেণি অপরটিতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস চলে। ২০০৪ সালে দুই কক্ষের ভবন নির্মাণ করা হয়। যার একটিতে তৃতীয় শ্রেণি অপরটিতে অফিস কক্ষ।
বিদ্যালটির তিনটি ভবনের ছয়টি শ্রেণিকক্ষের পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, খুদে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস করছে। তাদের কক্ষের ছাদের পলেস্তারা খসে রড বেরিয়ে আছে। এ ছাড়া পাশের আরেকটি কক্ষের বিমেও রয়েছে ফাটল-পলেস্তারাও খসে পড়েছে। বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে শ্যাওলা জমেছে। এসব কক্ষ স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। ছাদ থেকে বইয়ের ওপর ঝুরঝুর করে পড়ছে বালু-সিমেন্টের কনা।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নুর এ আফিয়া মৌ জানায়, বর্ষাকালে জল পড়ে, বালু পড়ে। ক্লাস করতে তাদের ভীষণ ভয় করে। কখন যে তাদের ওপর ভেঙে পড়ে! চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী পল্লব ও আশিকের ভাষ্য, ক্লাসে অনেক সময় ওপর থেকে বালু আর ইটের কণা পড়ে। গত মাসে তাদের ক্লাসের এক ছাত্রের মাথায় খোয়া পড়েছে।
এ কারণে তাদের সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয়। সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহেল বাকী বলেন, ভবনটির এখন করুন অবস্থা। কমলমতি শিক্ষার্থীদের চরম আশঙ্কার মধ্যে দিয়ে ক্লাস নিতে হচ্ছে। আর এ কারনে দিন দিন ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ক্রমে কমে যাচ্ছে। আরেক সহকারী শিক্ষক নাসির উদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ায় মনোযোগ থাকে না।
এমনিতে বিদ্যালয়ে পড়ার পরিবেশ ভালো। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে দিন দিন শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। প্রধান শিক্ষক পারভিন নাহার বলেন, যে কোনো মুহূর্তে বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বিষয়টি বারবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা সুন্দর পরিবেশে সুন্দর অবকাঠামোর একটি বিদ্যালয় চাই। শিশুদের কথা চিন্তা করে দ্রুত নতুন ভবন তৈরি হোক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মীর মামুনুর রহমান জানান, গত মে মাসে শিক্ষা কমিটির সভায় উপজেলার যে কয়েকটি বিদ্যালয়ের নাম উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকায় শিক্ষা অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে মীরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী আক্তার বলেন, যে স্কুলগুলো সংস্কারের প্রয়োজন, শিক্ষা কমিটির সভায় সেগুলোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে।