রাণীনগরে শুরু হচ্ছে তিনশ বছরের পুরনো কুজাইল মেলা

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর রাণীনগরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহতম ধর্মীয় উৎসব লক্ষীপূজা উপলক্ষে উপজেলার কুজাইল বাজারে অবহমান বাংলার প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী ৪দিন ব্যাপী মেলা আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে।
শারদীয় দুর্গাপূজার ৫ দিন পর কোন প্রকার ঢাক-ঢোল ও প্রচারণা ছাড়াই বিভিন্ন রকমারি সামগ্রী নিয়ে শত শত দোকানি এসে এই মেলায় ইতিমধ্যে পাসরা সাজিয়ে বসেছে। মেলা শুরুর দুই-তিন দিন আগে থেকে ফার্নিচার, কসমেটিকস, মিষ্টি, খেলনা সামগ্রীর দোকানসহ শিশুদের চিত্র বিনোদনের জন্য আকর্ষনীয় নাগর দোলা মেলায় এসে স্থান দখল করে নিয়েছে।
নানা ধরণের ব্যবসায়ীদের আগাম উপস্থিতির কারণে কুজাইল ফুটবল মাঠে জাগরণ সংসদের মেলা পরিচালনা কমিটিরা দোকানিদের জায়গা করে দিতে হিমশিম খাচ্ছে। নওগাঁর ছোট যুমনা নদীর তীরে অবস্থিত কুজাইল মেলার ইতিহাস-ঐহিত্য দীর্ঘ দিনের হওয়ায় বয়বৃদ্ধরাও এর জন্মের ইতিহাস বলতে পারে না। তবে কথিত আছে প্রায় ৩শ’ বছর ধরে একই তারিখে নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর পূর্বপাশে কুজাইল নামক স্থানে এই মেলা বসে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার একমাত্র ঐতিহাসিক স্থান ছিল কাশিমপুর রাজবাড়ী। কথিত আছে এখানকার রাজার শাসনামলে রাজবাড়ীর আশে-পাশের এলাকা আতাইকুলা, হরিশপুর, কৌনজ, মিরাট, কাশিমপুর, বেতগাড়ী, ত্রিমোহনী, শৈলগাছীসহ বেশকিছু এলাকার সনাতন ধর্মালম্ভীদের লক্ষী পূজা উপলক্ষে রাজার প্রত্যক্ষ নির্দেশে কুজাইল বাজারের গাঁ-ঘেষে বয়ে যাওয়া নওগাঁর ছোট যুমনা নদীরপূর্ব পাশে ৪দিন ব্যাপী এই মেলা বসে।
মঙ্গলবার বিকেল থেকে এই নদীতে শতশত নৌকা প্রতীমা বিসর্জন দেয়ার জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে গেয়ে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে প্রতীমা বিসর্জন সম্পন্ন করেন পূজা আয়োজক কমিটির সদস্যরা। আশে-পাশে গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় জামাই মেয়ে আত্নীয় স্বজন বাড়ি বাড়ি আসায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলার দ্বিতীয় দিনে হবে বৌ মেলা। এমনও প্রবাদ আছে এখানকার জামাই-মেয়ে লক্ষীপূজার মেলায় না নিয়ে আসলে স্বজনদের মধ্যে কেমন যেন আত্মীয়তার কমতি দেখা দেয়।
একে অন্যের বাড়িতে অতিথিদের অপ্যায়নের জন্য তিল ও নারিকেলের নাড়ু বেশ প্রচলিত সাথে যুক্ত হয় মিষ্টি আর মচমচে জিলাপি আছে। মেলা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ২নং কাশিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আজাদ বলেন, এই মেলার শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মেলা কমিটির পাশাপাশি কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ। মেলা সুষ্ঠু ভাবে আয়োজনের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন করে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মাঝে জায়গা বরাদ্দ প্রক্রিয়া চলছে। রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ রায়হান বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে লক্ষীপূজা প্রতীমা বিসর্জন পর্যন্ত এই মেলায় কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে; তার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে কোন ধরনের নাচ-গান, জুয়ার আসর ও লটারি বসতে দেয়া হবে না।