ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫ - ৪:৫৩ অপরাহ্ন

শাটডাউনে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

  • আপডেট: Thursday, September 25, 2025 - 12:22 am

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ছুটি শুরু হচ্ছে।

এর আগে ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্র ও শনিবার হওয়া, পোষ্য কোটা ইস্যুতে ক্যাম্পাসে অস্থিতিশিলতা ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টানা চারদিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচে পড়া ভিড় থাকা জায়গাগুলো এখন প্রায় জনমানবশূণ্য। এ দিকে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচির প্রতিবাদে গতকাল ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। পরে দুপুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৭ দিনের জন্য শাটডাউন স্থগিত করেছেন। তবে কর্মসূচিতে বহাল রয়েছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা।

শাটডাউন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের আমন্ত্রণে আমরা আলোচনায় বসেছিলাম। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন এবং আহ্বান করেছিলেন প্রশাসন ও একাডেমিক কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে কয়েকদিন যেন সময় দেয়া হয়।

সেই বিবেচনায় আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যদূরীকরণ ও ২০ সেপ্টেম্বর উপ-উপাচার্যসহ অন্যান্যদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য সাতদিনের সময় দিতে চাই। সাত কর্মদিবসের মধ্যে যদি সন্ত্রাসীদের ন্যায় বিচার এবং প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া না হয়, আমরা আরও বৃহত্তর ও কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি গ্রহণ করব।’

কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও কর্মসূচিতে অনড় থাকে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় সন্ত্রাসীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সকল সাধারণ শিক্ষকদের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আলিম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রতিবাদে বিগত চারদিন ধরে আমাদের কর্মবিরতি চলছে। আমরা প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখার মতো কিছু পাইনি। আমরা সাধারণ শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করি এবং সাধারণ শিক্ষকদের ব্যানারেই আন্দোলন করছি। সাধারণ শিক্ষকদের সবাই ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চায়। তারা আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে এবং এর ফলেই তারা ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছেন না। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবেই।’

তবে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে নেই বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, ‘গত শনিবার উপ-উপাচার্যের হেনস্তার ঘটনার বিচারের দাবিতে আমরা একদিন কর্মবিরতি পালন করেছিলাম এবং সোমবার মানববন্ধনেও সকলেও এক সঙ্গে ছিলাম।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা আমাদের কথা দিয়েছিলেন, শিক্ষার্থীদের রাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে তারা সহযোগিতা করবেন এবং কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন। তবে তারা সেটি না করে শাটডাউন কর্মসূচিতে গেছেন। তাদের এই কর্মসূচিতে আমাদের সংহতি নেই। গত সোমবার বিকালেই ইসলামী মূল্যোবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আমাদের শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা রুটিন মোতাবেক চলমান রেখেছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে সোমবার সকাল থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত বেশির ভাগ দপ্তরে তালা ঝুলেছে। পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বর ও ক্যাম্পাসের অধিকাংশ দোকানই ছিল বন্ধ। খোলা হয়নি ক্যাম্পাসের বেশিরভাগ ভ্রাম্যমাণ খাবার ও চায়ের দোকান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবনসহ অনেক ভবনের ফটকের তালা খোলা হয়নি।

এদিকে গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাকসু নির্বাচন পেছানোর কারণে ২৪ ও ২৫ সেপ্টেম্বরে ছুটি বাতিল করা হয়েছে এবং দুর্গাপূজার ছুটি শুরু হচ্ছে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে। এ দিকে আগামী ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্র ও শনিবার। ফলে লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসের

অচলাবস্থা ও আসন্ন দুর্গাপূজার ছুটির কারণে বিভিন্ন হল থেকে ব্যাগপত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস ছাড়তে দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেট, টুকিটাকি চত্বরসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও ছিল খুবই সীমিত। প্রাণচঞ্চল এসব জায়গা অনেকটাই প্রাণহীন ছিল। তবে এর মাঝেও সমাজকর্ম বিভাগে হত দুদিনে দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
এদিকে ক্যাম্পাস শাটডাউনের প্রতিবাদে গতকাল সকাল ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। এ সময় সংগঠনটির সেক্রিটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, টানা তৃতীয়বারের মতো পেছানো হয়েছে রাকসু নির্বাচন। সিন্ডিকেট মিটিংয়ে পোষ্য কোটা আপাতত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারমানে আবারও ১৬ অক্টোবরের আগে পোষ্য কোটার মতো একটা মীমাংসিত ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হতে পারে।

আর সেই হালে বাতাস দিচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই ষড়যন্ত্র আর মেনে নিবে না। রাকসু নির্বাচন যদি না হয় তাহলে এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা রাকসু পেছানোর আন্দোলনের ফাঁদে পা দিয়েছিল, তাদের কাউকেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষমা করবে না।