ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫ - ২:১২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

তৃতীয় দিনেও পূর্ণাঙ্গ শাটডাউনে অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • আপডেট: Tuesday, September 23, 2025 - 10:27 pm

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: শিক্ষক-কর্মকর্তাদের লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিবাদে ও পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে ডাকা পূর্ণাঙ্গ শাটডাউনে তৃতীয় দিনেও অচল ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মঙ্গলবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও অ্যাকাডেমিক ভবনসহ সব দপ্তরে তালা ঝুলেছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ক্যাম্পাস ছিল শিক্ষার্থীশূন্য। এই অচলাবস্থার মধ্যেই গ্রন্থাগার খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশকে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রশাসন ভবনের পাশে অবস্থান নেন। তাঁদের কর্মসূচির ফলে বিদ্যুৎ ও পানির মতো জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের দাপ্তরিক ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্ অ্যাকাডেমিক ভবনসহ অধিকাংশ ভবনের প্রধান ফটক খোলেনি।

শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক জীবনে। পরিবহন মার্কেটের দোকানপাট ছিল বন্ধ। হাতে গোনা কয়েকটি চায়ের দোকান ছাড়া বসেনি ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানও। শিক্ষার্থী না থাকায় বিপাকে পড়েছেন দোকানি ও রিকশাচালকরা। জামাল নজরুল বিজ্ঞান ভবনের পাশের দোকানি ময়না খাতুন বলেন, ‘লোকজন না আসলে, বেচাকেনা না হলে, দোকান খুলে কী করব! ক্লাস নাই, তাই শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে আসে না।’

গ্রন্থাগার খোলার দাবি

এদিকে, শাটডাউনের মধ্যেও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষ খোলার দাবিতে সকালে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশী। সামনে বিশেষ বিসিএসসহ একাধিক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তাঁরা অন্তত দুটি পাঠকক্ষ খোলা রাখার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সকাল সাড়ে নয়টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার খুলে দেওয়া হয়।সমাধানে প্রশাসনের বৈঠক

ক্যাম্পাস সচল করার লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন ও অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে প্রশাসন আন্দোলন কারীদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। বৈঠক শেষে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় সচল রাখার স্বার্থে কর্মস্থলে ফেরার আহ্বান জানিয়েছি। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং নিজেদের ফোরামে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।’

অফিসার্স সমিতির সভাপতি মোক্তার হোসেন বলেন, ‘উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দিন স্যার আমাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য ডেকেছিলেন। আলোচনায় তারা শাটডাউন কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা আমাদের সমিতিতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত জানাব।’

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দশটি শর্তে বাতিল হওয়া পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে শনিবার বিকেলে জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে রবিবার শিক্ষক-কর্মকর্তারা কর্মবিরতি এবং সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের শাটডাউন শুরু করেন।

ক্যাম্পাসের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৫ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে আগামী ১৬ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নির্বাচন পেছানোর গুঞ্জনে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।