ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৫ - ৩:৪৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

রাজশাহীতে পিস্তল হাতে ভাইরাল ছাত্রলীগ নেতা, পুলিশের দাবি নজরে আসেনি

  • আপডেট: Friday, September 19, 2025 - 9:32 pm

স্টাফ রিপোর্টার: জুলাই অভুত্থানে হামলাকারী রাজশাহীর এক দুর্ধর্ষ ছাত্রলীগ ক্যাডারের পিস্তুল হাতে থাকা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তোলপাড়। তবে তিনি এখনও গ্রেপ্তার হননি। পুলিশের দাবি, ছবিটি তাদের নজরেই আসেনি।

যদিও গত কয়েক দিন থেকে মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক উপসম্পাদক ইয়াসির আরাফাত আপনের পিস্তল হাতে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি তাকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

ইয়াসির আরাফাত আপন ছিলেন ২০২২ সালের ১১ মার্চ অনুমোদিত রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির নেতা। ওই কমিটির সভাপতি রকি কুমার ঘোষের বাহিনীর সবচেয়ে আস্থাভাজন অস্ত্রধারী ক্যাডার তিনি। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগের পরের কমিটির নেতাদেরও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন আপন। রাজশাহীতে আপন ইয়াবা ব্যবসার ডিলার হিসেবেও পরিচিত।

ব্যবহার করেন প্রাইভেটকার এবং দামি ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, দামি মোটরসাইকেল। আপনের অস্ত্র হাতে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, কালো পাঞ্জাবি পরে মাস্ক দিয়ে মুখ ঢেকে হাতে পিস্তুল নিয়ে সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন আপন। একটি রাস্তায় দাঁড়ানো অবস্থায় ভাইরাল হওয়া ছবিটি রাতের। এ সময় আশেপাশে মানুষের উপস্থিতি ছিল না।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আপনের ব্যবহৃত মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সংযোগ পাওয়া যায়নি। আপনের এ ছবি সম্পর্কে অনেকেই বলছেন, গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়ের আগের মুহূর্তের এ ছবিটি। শহরের আলুপট্টি মোড়ে গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার ওপর ভয়াবহ আক্রমণ চালায় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের অস্ত্রধারী ক্যাডাররা। হামলার সময় এ আগ্নেয়াস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে। হামলায় জুলাই আন্দোলনের পক্ষের দুইজন নিহত হন।

আহত হন শতাধিক। এদের মধ্যে অনেকেই শারীরিক সীমাবদ্ধতা নিয়ে পঙ্গু হয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। ওই হামলায় মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষের ক্যাডার আপন ছাড়াও তার বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন বলে অভিযোগ আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত আপনের বাড়ি শহরের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপাড়া এলাকায়। এলাকাবাসী জানান, আপনের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। তার পাশাপাশি এ বাহিনীর অনেকের কাছেই রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও এ বাহিনীর সদস্যরা এখনও সক্রিয়। সন্ধ্যা হলেই শুরু হয় এদের অবাধ বিচরণ। দামি ব্রান্ডের কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে শহরজুড়ে দেয় মহড়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ক্ষমতার দাপটে রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন (সড়কপথ) ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়নের ভোটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদটি দখল করেন আপন। আর এক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা আওয়ামী লীগের অর্থের যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত শাহ আলম।

আওয়ামী লীগের নেতাদের ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন শাহ আলম। ছেলে আপনকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আমরা খোঁজ নেব। এ রকম ঘটনা ঘটলে অবশ্যই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার হবে।’