ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ - ২:৫৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

নিয়ন্ত্রণহীন অটোরিকশা: স্বস্তির বাহন এখন বিষফোড়া

  • আপডেট: Wednesday, September 17, 2025 - 11:30 pm

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে ইজিবাইক চলাচল শুরু হয় ২০০৯ সালের মাঝামঝি সময়ে। তখনো সড়কে দাপিয়ে বেড়াতো টেম্পু। কালের আবর্তে ইজিবাইকের দাপটে বিলুপ্ত হয় টেম্পু। এরপর সড়কে নামে দুই আসনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ফলে যাত্রীদের আগ্রহ ও চালকের সুবিধায় বিলুপ্তপ্রায় প্যাডেল রিকশা।

সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে ইজিবাইক ও অটোরিকশা গুলো সড়কে নামানো হচ্ছে। অনুমোদনহীন অটো লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের হাতে থাকায় ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব গাড়ি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

রাজশাহী জেলায় ইজিবাইক ও অটোরিকশা কত চলাচল করে তার সঠিক পরিসংখান নেই। তবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ১০ হাজার ইজিবাইক এবং ৬ হাজার অটোরিকশা নগরীতে চলাচলের অনুমতি দেয়। এই অটোগুলো রাসিক লাল ও সবুজ রঙ করে দেয়। এই দুই রঙের অটোগুলো দিনে দুই সিফটে চলাচল করে।

তবে রাসিকের দেওয়া পরিসংখানে একমত নয় খোদ চালকরাই। অপরদিকে রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলায় আরও ৫০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। তবে বিপুল সংখ্যক এই গাড়ির অনুমোদন না থাকায় সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব হয়নি। গড়ে প্রতিটি উপজেলায় ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। উপজেলা পর্যায়ের এই গাড়ির চালকরা জীবিকার তাগিদে শহরে চলে আসে। তাই তুলনামূলক উপজেলার সড়কগুলোতে এই গাড়ি কম।

অটোচালক সাইদুল ইসলাম জানান, সিটি কর্পোরেশনের হিসাবের বেশি ইজিবাইক ও অটোরিকশা রাজশাহী নগরীতে চলাচল করে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদহীন গাড়িগুলো নগরীতে চলাচল করে। তবে এই গাড়িগুলো ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্ট এড়িয়ে চলে। রাসিক নিবন্ধন না দিলেও প্রতিদিন নতুন নতুন এসব ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো সড়কে নামছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ৯৬ বর্গকিলোমিটারের নগরীতে প্রায় ৬০ হাজার ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল করে। যদিও সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন আছে মাত্র ১৬ হাজার। চ্যাসিস নম্বর না থাকায় একই রেজিস্ট্রেশন (নম্বর) দিয়ে চলছে একাধিক গাড়ি। ফলে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, লক্ষ্মীপুর মোড়, গোরহাঙ্গা রেলগেট, বন্ধগেট, কাদিরগঞ্জ-দড়িখরবোনা মোড়, বর্ণালীর মোড়, লোকনাথ স্কুল মার্কেট মোড়, রাজশাহী কলেজ গেট, সোনাদিঘীর মোড়, আলুপট্টির মোড়, কাজলা মোড়, বিনোদপুর বাজার, শালবাগান বাজার, নওদাপাড়া বাজার ও কোর্ট বাজারগুলোতে অটোরিকশার জট লেগেই থাকে। এই জটলা থামাতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ।

ব্যাটারিচালিত দুই শ্রেণির অটোরিকশা চলে রাজশাহীতে। এর মধ্যে ৮ জন যাত্রী ধারণের ইজিবাইক আছে প্রায় ৩০ হাজার এবং দুইজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা আছে আরও প্রায় ৩৫ হাজার। সবমিলিয়ে অন্তত ৬০ থেকে ৬৫ হাজার। এগুলোর মধ্যে ১৪ হাজার ২৬২টি ইজিবাইকের নিবন্ধন দেওয়া হয় ২০১১-১৩ সালের মধ্যে। পরে সব নিবন্ধন বাতিল করে ২০২১ সালে অনলাইনে আবেদন জমা নিয়ে ৮ হাজার ৯০০টির ইজিবাইককে নিবন্ধন দেয় রাসিক। সর্বশেষ ইজিবাইক-অটোরিকশা মিলে ১৬ হাজারের নিবন্ধন রয়েছে। তবে আগের সব নিবন্ধন বাতিল হলেও সেই অটোরিকশাগুলো ভুয়া নিবন্ধন নম্বর দিয়ে রাস্তায় রয়েছে।

রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রাজশাহী মহানগরে ইজিবাইক (অটো) আছে ১০ হাজার। আর অটোরিকশা আছে ৬ হাজার। এই সংখ্যক অটো ও অটোরিকশা চালানোর লাইসেন্স (অনুমোদন) দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩০০টির মতো গ্যারেজ রয়েছে।

ইমরান হোসেন নামে এক স্কুলশিক্ষক জানান, যানজটের মূল কারণ অতিরিক্ত অটো ও অটোরিকশা। অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি অটো-অটোরিকশা চলাচল করে সড়কে। ফলে যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া চালকের প্রশিক্ষণ না থাকায় যেনতেনভাবে গাড়ি চালানোর কারণে ঘটে দুর্ঘটনা। অটোরিকশা চালকরা বেপরোয়া। সড়কে যেখানে-সেখানে থেমে যায়। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাতে গিয়ে ঘটে দুর্ঘটনা। অতিরিক্ত যানজটের কারণে নগরবাসী এবং পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত গতি ও বেপরোয়া চালকদের কারণে দুর্ঘটনাও বেড়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সমাধানের জন্য পদক্ষেপ হিসেবে অনেকেই বলছেন- পরিকল্পিত স্ট্যান্ড স্থাপন। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশাগুলো রাস্তায় চলাচল করলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে। আইন ও নিয়ম-কানুনের প্রয়োগ করতে হবে। অটোরিকশা চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলতে বাধ্য করা এবং তাদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। পুলিশ ও সিটি কর্পোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া গেলে যানজট নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

বিআরটিএ রাজশাহী সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমকে বলেন, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন বলছে ব্যাটারিচালিত অটো রয়েছে ১০ হাজার। আসলেই কি তাই? সড়কে দেখে মনে হয় না। বাস্তবে আরও বেশি রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময় শুনি একটা কাগজে কয়েকটা অটো চলে। কারণ অটোগুলোর চ্যাসিস নম্বর নেই। অনায়াসে সড়কে নামানো যায়। এর কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আমাদের কাছে ব্যাটারিচালিত অটো বা অটোরিকশার কোনো তথ্য নেই। কারণ এটি অনুমোদনহীন গাড়ি।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই পিএলসি (নেসকো) এর সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, একটা অটো চার্জ দিতে ১ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ লাগে। এটা ব্যাটারি নতুন অবস্থায়। তবে পুরোনো ব্যাটারিতে বেশি বিদ্যুৎ লাগে। কত অটোর গ্যারেজ আছে সেটার পরিসংখ্যান নিতে হলে আরও সময় দিতে হবে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মুখপাত্র রফিকুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, গেল এক বছরে রাজশাহী জেলায় অটো চুরি কেন্দ্রিক ১২টি মামলা হয়েছে। এছাড়া দুটি দস্যুতাসহ সর্বমোট ১৪টি মামলা হয়েছে জেলার বিভিন্ন থানায়। এনিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

রাজশাহী বিভাগের অন্য জেলাগুলোতেও একই চিত্র দেখা গেছে।

জয়পুরহাট
জেলায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো এবং ভ্যানের সংখ্যা, যার অধিকাংশই নিবন্ধন ছাড়াই চলছে। জয়পুরহাট পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে জেলায় নিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটো ও রিকশার সংখ্যা ১ হাজার ৪৬১টি। এর মধ্যে রিকশা ৮৬০টি, টাউন সার্ভিসের ছোট অটোরিকশা ৩৩০টি এবং শহরের বাইরে চলাচলকারী বড় অটোরিকশা ২৭১টি।
তবে জয়পুরহাট জেলা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যানুসারে, শুধুমাত্র জেলা শহরেই টাউন সার্ভিসের অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৮০০টি এবং শহরের বাইরে চলাচলকারী বড় অটোরিকশার সংখ্যা প্রায় ৫০০টি। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই কোনো নিবন্ধন নেই।
জয়পুরহাট জেলা ট্রাফিকের ইন্সপেক্টর জামিরুল ইসলাম বলেন, শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও অটো বেড়েছে। দিনদিন যানজট বাড়ছে। আবার শহরের প্রধান সড়কের মাঝে ঘন ঘন ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। এতে গাড়িগুলো পারাপার হচ্ছে। এসব রিকশা ও অটো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমাদের জনবলও কম, গুরুত্বপূর্ণ স্থান ছাড়া সব জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভা এসব গাড়ির নিবন্ধন দিয়ে থাকে। সেজন্য পৌরসভা থেকে বিষয়গুলো দেখা প্রয়োজন।

পাবনা
পাবনা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাবনা শহরাঞ্চলে বৈধ অটোরিকশা প্রায় ৩ হাজার ৫০০টি। বৈধ রিকশা ৩ হাজার। আর অবৈধ অটোরিকশা প্রায় ৮ হাজারের মতো। অপরদিকে পাবনা জেলা রিকশা, অটোবাইক মালিক সমিতির কার্যালয় সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জেলার ৯টি উপজেলাতে বৈধ অবৈধ মিলে মোট ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রয়েছে। আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে ৮০১০টির মতো। বেশিরভাগই অবৈধ।

পাবনার পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত পাবনায় সড়ক দূর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫২ জন। নিহত আহতরা বেশিরভাগই অটোরিকশার যাত্রী। মহাসড়কে চলাচল করা অবস্থায় ট্রাক ও বাসের ধাক্কায় মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে তাদের।

পাবনা জেলা রিকশা, অটোবাইক মালিক সমিতির আহ্বায়ক পাভেল হাসান জাহাঙ্গীর বলেন, পাবনা জেলার সব উপজেলা মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি অটোরিকশা রয়েছে। পাবনা পৌরসভায় আমাদের জানামতে বৈধ অটোরিকশা প্রায় ৭ হাজারের মতো। ‎পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর জেনারেল ম্যানেজার আহমাদ আল জাবির বলেন, প্রতিদিন এসব এরিয়াতে অটোরিকশার জন্য আধা মেগাওয়াট বাড়ছি বিদ্যুৎ খরচ হয়। বর্তমানে সরকার একটা সিস্টেম করেছে যেটার মাধ্যমে আমরা অটোরিকশার মালিকদের লাইসেন্সধারীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা মিটার দিচ্ছি। যার একটি অটোবাইক আছে সে তার বাড়ির মিটারে চার্জ দিয়ে থাকেন। আর যার বাড়তি অটো রয়েছে সে আরেকটি মিটার নিয়ে চার্জ দিচ্ছে। সরকারিভাবে আইনগত সমস্যা নেই। তবে আমাদের এখানে এতো পরিমাণ অটোরিকশা হওয়াতে বিদ্যুতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধিত অটোরিকশার পরিমাণ ৯১টি এবং রিকশা বা ভ্যানের পরিমাণ ৭৩টি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পরিমাণ ২১৪টি এবং রিকশা বা ভ্যান ৯৬টি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্বন্ধিত অটোরিকশা ছিল ৭৮৫টি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার অটোরিকশা চলাচল করে জানা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিআরটিএর তথ্য মতে, এ বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত জেলায় ৩১টি দুঘর্টনা সংগঠিত হয়েছে। এতে ৩১ জন নিহত এবং ১০জন আহত হয়েছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পুলিশের টিআই-১ শফিকুল ইসলাম বলেন, শহরে কতগুলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলবে সেটি নির্ধারণ করবে পৌর কর্তৃপক্ষ অথবা জেলা প্রশাসন। আমরা বিভিন্ন মিটিংয়ে এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরেছি। উনারা এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে আসলে আমাদের কিছুই করার থাকে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ফজলুর রহমান বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎতের চাহিদা বাড়ছে। মানুষ যত সৌখিন হবে বিদ্যুৎতের চাহিদা ততো বাড়বে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুৎতের কোনো ঘাটতি নেই।

সিরাজগঞ্জ
অটোরিকশার কারণে যানজটের পাশাপাশি দুর্ঘটনা, ভোগান্তি ও জনদুর্ভোগ নিত্যদিনের চিত্রে পরিণত হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, যত্রতত্র পার্কিং ও অদক্ষ চালকের কারণে সড়কে নেমেছে বিশৃঙ্খলা। সিরাজগঞ্জ পৌরসভার লাইসেন্স শাখার লাইসেন্স পরিদর্শক মো. মারুফ জানান, বর্তমানে সিরাজগঞ্জে ৪ হাজার ৭০৩টি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা ট্রাফিক পুলিশের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (শহর) এম এ জাফর বলেন, আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। পৌরসভা, বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার প্রবণতা বেশি হওয়ায় নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে নাগরিকরা সুবিধা পাবেন।

নাটোর
নাটোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চলতি অর্থবছরে অটোরিকশার নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়েছে। গত তিন মাসে ৩৫৬টি রিকশা নিবন্ধিত হয়েছে। পৌরসভার লক্ষ্য চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার অটোরিকশাকে নিবন্ধনের আওতায় আনা। তবে নিবন্ধন সম্পন্ন হলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও বিপুল সংখ্যক রিকশা এ প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যাবে । নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত এসব যানবাহনের কারণে শহরের রাস্তায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে যানজট ও দুর্ঘটনা।

নাটোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলিয়ে প্রায় ৫ হাজার অটোরিকশা শহরে চলছে। দুই একটি প্রাইভেট কার ছাড়া শহরের সড়কে প্রায় সবই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। বিশেষ করে নিচাবাজার, একতার মোড় ও স্টেশন রেলগেট এলাকায় প্রতিদিনই যানজট তৈরি হচ্ছে। যা নিয়ন্ত্রণে নিরলস কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও নাটোর পৌরসভার প্রশাসক আসমা খাতুন বলেন, শহরে অটোরিকশার নিয়ন্ত্রণ এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অটোরিকশার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অটো নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তের আগে অটোরিকশার সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। তাই নিবন্ধন শেষ হলে প্রয়োজনীয় অটোস্ট্যান্ড ও পার্কিংসহ অন্যান্য বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

নওগাঁ
নওগাঁ পৌরসভার ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের যানবাহন শাখার তথ্য অনুযায়ী পৌরসভায় রেজিস্ট্রেশনকৃত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা ১৫০০টি এবং ব্যাটারিচালিত ৩ চাকার ইজিবাইকের সংখ্যা ৬৮৫টি। শহরে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করে। যার মধ্যে ২ হাজারের বেশি অটোরিকশা এবং দেড় হাজারের বেশি ইজিবাইকের নিবন্ধন নেই। এছাড়া জেলার ১১ টি উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিকের ওপরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, অটোরিকশা এবং ভ্যান চলাচল করে। জেলায় কী পরিমাণ অটোরিকশা কিংবা ইজিবাইক রয়েছে এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে কোনো তথ্য নেই। এসব ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃদ্ধি পেয়েছে দুর্ঘটনার সংখ্যা।

নওগাঁ জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী ২০২৪ সালে জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫১ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৩২ জন। এর মধ্যে গত ১ বছরে ব্যাটারিচালিত আটোরিকশা, ভ্যান এবং ইজিবাইকের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন ও আহত হয়েছিলেন ৭ জন ব্যক্তি।

নওগাঁয় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলসি (নেসকো) এবং নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মতে, জেলায় বর্তমানে কোনো লোডশেডিং নেই। চাহিদা অনুপাতে বিদ্যুৎতের সরবরাহ সমান রয়েছে।

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এবং ২ এর মতে, বর্তমানে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৬৬ মেগাওয়াট। এরমধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর ৯৬ মেগাওয়াট এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর চাহিদা ৭০ মেগাওয়াট। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোরও কোনো লোডশেডিং নেই। নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর বিদ্যুৎ সরবরাহকৃত এলাকায় অটো চার্জিং স্টেশন রয়েছে ১০৩টি, যেখানে গড়ে প্রতিদিন এক থেকে দেড় মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর অধীনে কোনো চার্জিং স্টেশন নেই।