ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ৪:৪৮ অপরাহ্ন

কিটের অভাবে পরীক্ষা ছাড়া লক্ষণ দেখেই চলছে চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা

  • আপডেট: Sunday, July 13, 2025 - 1:14 am

সোনালী ডেস্ক: দেশে সাম্প্রতিক সময়ে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার বিস্তার লাভ করছে। কিন্তু কিটের অভাবে পরীক্ষা ছাড়া লক্ষণ দেখেই ওই রোগের চিকিৎসা চলছে।

বর্তমানে জেলায় জেলায় চিকুনগুনিয়া রোগী বাড়লেও রাজধানী ছাড়া কোথাও ভাইরাসজনিত এ রোগ শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। আবার ঢাকার তিনটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কোথাও হয় না চিকুনগুনিয়ার পিসিআর পরীক্ষা। সরকারি পর্যায়ে দীর্ঘদিন কিট কেনা হয়নি।

ফলে চিকিৎসকরা ঢাকার বাইরের রোগীদের জ্বর ও উপসর্গ দেখে পরীক্ষা ছাড়াই ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন। বিগত ২০০৮ সালে প্রথম চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

তারপর ২০১৭ সালে আবার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর জিকায় ১১ ও চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চিকুনগুনিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগের উপসর্গ দেখে চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়ে উপশমের চেষ্টা করেন। চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে হঠাৎ ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর, হাড়ের জোড়াসহ প্রচণ্ড শরীর ব্যথা,  মাথাব্যথা ও র‌্যাশ।

এ রোগে এমন ব্যথা হয় যে অনেকে দাঁড়াতেও পারে না, জয়েন্ট ফুলে যায়। অনেক সময় ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত এই ব্যথা থাকে। এ রোগের নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হলো পিসিআর। কিন্তু আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার ছাড়া সরকারিভাবে আর কোথাও এ পরীক্ষা হচ্ছে না। ফলে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছে অনেকে।

সূত্র জানায়, ডেঙ্গু হলে মাথা, পেট ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। তবে চিকুনগুনিয়ায়  শরীরের জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে ব্যথা বেশি হয়। র‌্যাশও দ্রুত দেখা দেয়। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে বারবার রক্ত পরীক্ষা করতে হলেও চিকুনগুনিয়ায় তা দরকার পড়ে না। এ রোগের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক।

তবে দুই রোগের ব্যবধান না বুঝে যদি ভুল ওষুধ ব্যবহার করা হয়, তবে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে। চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত মৃত্যু হয় না। তবে কেউ যদি আগে থেকেই দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অধিকারী হয় কিংবা একসঙ্গে অন্য সংক্রমণ থাকে, তাহলে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

সূত্র আরো জানায়, চিকুনগুনিয়া জ্বর হয়ে চলে গেলেও রোগী দীর্ঘদিন ব্যথায় ভোগে। চিকুনগুনিয়া এখন শুধু ঢাকায় নয়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই বাড়ছে। অথচ পরীক্ষার ব্যবস্থা, কিট, প্রস্তুতি সবকিছুতেই চরম ঘাটতি বিদ্যমান। সরকারি উদ্যোগ না বাড়লে এই ভাইরাসজনিত রোগে মানুষ আরো বেকায়দায় পড়তে পারে।

এদিকে এ বিষয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম জানিয়েছেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৩৩৭ নমুনার বিপরীতে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

আক্রান্ত সবাই ঢাকার বাসিন্দা। পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় ঢাকার বাইরে রোগীরা আইইডিসিআর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। তাই প্রকৃত রোগীর তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা. হালিমুর রশিদ জানান, বিগত ২০১৭ সালের পর থেকে চিকুনগুনিয়ার কিট কেনা হয়নি। এরপর সরকারিভাবে পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাজেটেও কিট কেনার বরাদ্দ নেই। পরিস্থিতি বেগতিক হলে হাসপাতালগুলো কিট কিনে পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে পারে।