ঢাকা | নভেম্বর ২৮, ২০২৪ - ২:৪৭ পূর্বাহ্ন

তাঁতপল্লীতে হাটে ৩০০ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি

  • আপডেট: Saturday, April 23, 2022 - 10:37 pm

 

রফিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ থেকে: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুরে অবস্থিত তাঁতের শাড়ি কাপড়ের হাটে এক হাটে ৩০০ কোটি টাকার তাঁত পণ্য বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

করোনার কারণে গত দুই বছর ব্যবসায় মন্দা গেলেও এ বছর পাইকারি বাজারে তাঁতের শাড়ি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বেচাবিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেছেন, সেহেরি শেষ করেই শ্রমিকরা ছুটে আসে তাঁতঘরে। এ বছর ঈদ উপলক্ষে বাজারে তাঁতের শাড়ি কাপড়ের বেশ চাহিদা বেড়েছে। গত দুই বছরে লোকসানে অধিকাংশ তাঁত বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এবারের ঈদে তা পুষিয়ে নিতে রাত-দিন ব্যস্ত সময় পার করছে তাঁত সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শাহজাদপুরের তাঁত পল্লীগুলোতে এখন তাঁতের খটখট শব্দ বিরাজ করছে। শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি, জালালপুর, শিবপুর, গোপালপুর, আরকান্দি, রূপপুর, মনিরামপুর, হামলাকোলা, পুকুরপাড়, পাড়কোলা ও বাড়াবিল তাঁত পল্লীগুলোতে এ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। এ সময় ব্যবসায়ীরা বলেন, শাহজাদপুর তাঁতের শাড়ি কাপড়ের হাটে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লেগেছে। এ বছর তাঁতের বেচা-বিক্রি ভালো। চাহিদা থাকায় গত বছর যে শাড়ির দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। এ বছর সেই শাড়ির দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া ৫০০ টাকা দামের শাড়ি সাড়ে ৯০০ টাকা, আর ৮০০ টাকা দামের শাড়ি ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তারপরও অনেক পাইকার ও ব্যাপারী শাড়ি না পেয়ে খালি হাতে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে।

তারা আরও বলেন, শাহজাদপুরের শাড়ি নানা নকশা ও বাহারি রংয়ের বৈচিত্র্যময় হওয়ায় এর চাহিদা দেশ ছেড়ে ভারত, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিচিতি পেয়েছে। এখানকার শাড়ি সরাসরি ভারতে রপ্তানি হয়ে থাকে। আর অন্যান্য দেশে পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে রপ্তানি হয়। তবে কিছু কিছু শাড়ি সরাসরি ইউরোপ, আমেরিকা গেলেও তার পরিমাণ কম।

শাহজাদপুর কাপড়ের হাট ঘুরে দেখা যায়, তাঁতিরা হাটের সীমানা ছেড়ে নতুনমাটি, দ্বারিয়াপুর ও মনিরামপুর বাজারের সড়ক জুড়ে দোকান পেড়েছে। বেচাবিক্রিও হচ্ছে আগের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি।

এ বিষয়ে তাঁত কাপড় ব্যবসায়ী প্রিন্স চৌধুরী জানান, ঈদকে সামনে রেখে এদিন শাহজাদপুর কাপড় হাটে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার তাঁত পণ্য বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ বছর এটাই সর্বোচ্চ বেচাকেনা। তিনি আরও বলেন, একসময় ভারত থেকে এদেশে শাড়ি আসত। আর এখন ভারতে এদেশের শাড়ি যায়। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে পাল্লা দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাহজাদপুরের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু রং, সুতা ও তাঁত সরঞ্জামের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় তাঁতিদের চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে।

শাহজাদপুরের মুকুল কটেজ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক হাজী আব্দুর রউফ বুলবুল জানান, সপ্তাহে তিনি ২০০ পিস শাড়ি উৎপাদন করছেন। একটি শাড়ি তৈরি করতে একজন দক্ষ শ্রমিকের ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে। তিনি জানান, নতুন নতুন ডিজাইনের এ শাড়ির নাম রাখা হয়েছে, ফুলকলী, রোজভেলি, রেডরোজ, রানীমা, রজনী, রাজবধূ, পিউরি, উপমা, ঝলক, শিবানি, মৌনতা, পূর্ণতা, কোহেলি, উলফা, ঝিলিক, পাখি ইত্যাদি। এসব শাড়ি সারা বছরই মজুদ রাখা হয়। ঈদ উৎসবে তা বিক্রি করা হয়।

তিনি আরও জানান, তার মতো শত শত তাঁত মালিক সারা বছর শাড়ি তৈরি করে ঈদের বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তাঁত ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন, নজরুল ইসলাম ও আব্দুল করিম জানান, হঠাৎ তাঁত উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এতে ক্ষুদ্র তাঁতিরা অসুবিধায় পড়েছে। তারা পুঁজি সংকটে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অপরদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর কাপড়ের দামও ২-৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্রেতাদের উপরে বাড়তি দামের বোঝা চেপে বসেছে। তাই তাঁত শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে তাঁতের আমদানিকৃত সরঞ্জামে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হবে।

তিনি বলেন, শাহজাদপুরের কাপড়ের হাটকে কেন্দ্র করে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, চৌহালি, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া, বেড়া, সাথিয়া, পাবনা সদর, দোগাছিসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত হ্যান্ডলুম, পাওয়ারলুম, স্ক্রিনপ্রিন্ট, ডাইং, প্রিন্টিং ও এমব্রডারি কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব শিল্প কারখানায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১৫ লাখ শ্রমিক কাজ করে। তিনি আরও বলেন, এ শিল্পের যে বিকাশ ঘটেছে তা টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু ঈদ উৎসব নয়, শাড়িতে বাঙালিয়ানার প্রতিটি উৎসবে তাঁতের শাড়ির আধিক্য ফিরিয়ে আনতে হবে।

শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে আসা বগুড়ার লাভলী বেগম বলেন, এ হাট থেকে তাঁতের শাড়ি কাপড়, লুঙ্গি, গামছা কিনে নিয়ে এলাকায় দোকানে সাজিয়ে বিক্রি করবেন। তিনি আরও বলেন, এখানকার তাঁতের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় তিনি মাসে ২ বার এ হাটে কাপড় কিনতে আসেন। লাভ ভালো হওয়ায় তিনি এ পর্যন্ত ৩ বার এসেছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো.শামসুজ্জোহা বলেন, তাঁতের শাড়ি-লুঙ্গি শাহজাদপুরের পুরনো ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।