ঢাকা | জুলাই ১৩, ২০২৫ - ৩:১০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

মসৃণ সড়কে পাল্টে যাচ্ছে দুই উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা

  • আপডেট: Thursday, July 10, 2025 - 12:51 am

এলজিইডির সড়ক উন্নয়ন:

স্টাফ রিপোর্টার: শহরের আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে এখন তাল মেলাচ্ছে গ্রামও। একসময় শহর বা পৌর এলাকা ছাড়া মসৃণ সড়কের তেমন দেখা না মিললেও সেই চিত্র এখন পুরনো। বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কল্যাণে মসৃণ সড়ক বিস্তৃত হয়েছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত।

গ্রামের বিভিন্ন মেঠোপথে উন্নয়নের ‘পিচ’ ঢেলে তা উপজেলা ও জেলা সড়কের সঙ্গে যুক্ত করতে এলজিইডির ভূমিকা অসামান্য। শুধুমাত্র সড়কই নয়, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে বদলে যাচ্ছে সরকারি, আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ গ্রামীণ জনপদের চেহারাও।

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার সদর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটারের একটি গ্রামীণ সড়ক গিয়ে ঠেকেছে উপজেলার গগণবাড়িয়া গ্রামে। গোড়খাই, শ্রীপুর, তরিপতপুর, বেড়া ও আমগ্রামের হাজার-হাজার মানুষের উপজেলা বা জেলা সড়কে আসতে এটিই একমাত্র পথ।

১০ থেকে ১২ ফিটের গ্রামীণ এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার না হওয়ায় ওই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। রাস্তাটির প্রস্থ তুলনামূলক কম হওয়ায় বড় বা ডাবল কোন বাহন যেমন চলতে পারে না, ঠিক তেমনি রাস্তার মাঝে মাঝে গর্ত এবং পিচ উঠে যাওয়ায় হরহামেশাই ঘটে ছোটখাটো দুর্ঘটনা।

বর্ষা এলে তো কথাই নেই। বৃষ্টি এই দুর্ভোগে যেন যুক্ত করে নতুন মাত্রা। শুধু তাই নয়, উপজেলার শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ও বেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় হাজারো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র পথ এই রাস্তাটিই। ভাঙাচোরা ও বৃষ্টিতে পানি জমার কারণে এই রাস্তা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ‘বেড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে’ যাতায়াতের জন্য গ্রামবাসীর পথ বলতে এটিই। সবমিলে এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে প্রায় ছয়টি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের কথা যেন বলে শেষ করা যাবে না!

তবে সম্প্রতি সেই ‘দুর্ভোগ’ লাঘব করতে উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ছয় গ্রামের মানুষের কষ্ট কমাতে ইতিমধ্যেই সদর পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে গগণবাড়িয়া পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটারের ওই গ্রামীণ সড়কটি সংস্কার এবং প্রসস্থ করণের কাজ শুরু করেছে এলজিইডি।

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোড়খাই গ্রাম, শ্রীপুর, তরিপতপুর, বেড়া ও আমগ্রামের মধ্যদিয়ে যাওয়া এই রাস্তাটির কাজ চলছে বেশ জোরেশোরেই। দুর্গাপুরে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, ইতোমধ্যেই রাস্তাটির কাজ প্রায় ৩০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বর্তমানে রাস্তাটি ১০ থেকে ১২ ফিটের হলেও সংস্কার কাজ শেষ হলে তা উন্নিত হবে প্রায় ১৬ ফিটে।

২০২৪ সালের ৩ মার্চ শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের এক তারিখে। ‘মেসার্স এম এ ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে ঢাকার একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি সম্পন্ন করছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ কোটি, ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। এলজিইডির সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সময়ের মধ্যেই রাস্তার কাজটি শতভাগ শেষ করা সম্ভব।

এলজিইডি’র দুর্গাপুর উপজেলা প্রকৌশলী এজাজুল আলম বলেন, কাজটি পুরোপুরি শেষ হলে উপজেলার ছয়টি গ্রামের মানুষ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে সরাসরি উপকৃত হবেন। এছাড়াও রাস্তাকে ঘিরে শিক্ষার্থী ও চিকিৎসাসেবা প্রার্থীদের যে সমস্যা হচ্ছে, সেটাও অনেকাংশে কমে আসবে। কাজ চলমান অবস্থায় দুর্ভোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ চলমানকালে জনগণের যাতে দুর্ভোগ না হয়, তাঁর জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রাস্তার সংস্কার নিয়ে আমগ্রামের বাসিন্দা আকবর আলি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা অবস্থায় ছিল। এক বছর ধরে কাজ চলছে দেখছি। আগের থেকে এবারের রাস্তাটি একটু বড় হবে। অবশ্যই এটি গ্রামবাসীর জন্য ভালো খবর। তরিপতপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মাঝি বলেন, রাস্তার কাজটি শেষ হলে এপারের মানুষের উপকার হবে। রাস্তা বড় হচ্ছে শুনে জমির দামও বেড়ে গেছে। কাজ খুব দ্রুতগতিতেই হচ্ছে। আমরা উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।

একইভাবে কাজ শুরু হয়েছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলাতেও। বাঘার মীরগঞ্জ বাজার থেকে আমচত্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের অবস্থাও দুর্গাপুরের মতো বেহাল। এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এলজিইডির উদ্যোগে এই রাস্তাটিও সংস্কার এবং প্রশস্ত করণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাস্তাটির সংস্কার কাজ হতভাগ শেষ হলে বাঘা উপজেলার নারায়ণপুর, সড়ক ঘাট, পাকুরিয়া, পানিকামড়া, জোত কাদেরপুর, মালেনদহ, গুগলপুর, কিশোরপুর, আলাইপুর, হাজামপাড়া নাপিতের মোড়, মহাজন বাজার, হর রামপুর, হাবিবের মোড়সহ প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষের উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে তরান্বিত হবে।

বাঘা উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, বিভিন্ন প্রান্তিক গ্রামের সঙ্গে উপজেলা ও জেলা সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নিত করতে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাস্তাটির সংস্কার কাজ শুরু করা হয়। রাস্তাটির প্রস্থ বর্তমানে ১৬ ফিট থাকলেও সংস্কারের পর তা উন্নীত হবে ১৮ ফিটে। আগামী বছরের জুলাই মাসের মাঝামাঝি গিয়ে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।

ইতিমধ্যেই কাজের প্রায় ২৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজের প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি, ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এলজিইডি’র বাঘা উপজেলার প্রকৌশলী এজাজুল হক জানান, এই রাস্তাটি বাঘা উপজেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় ১৫টি গ্রামের মানুষ এই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল।

সংস্কার কাজ শতভাগ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এই অঞ্চলের মানুষের নতুন দার উন্মোচিত হবে। আশা করছি, সময়সীমার মধ্যেই কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। কাজ চলমানকালে জনগণের দুর্ভোগ যেন না হয় সে ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।