ঢাকা | জুলাই ১৭, ২০২৫ - ১০:২২ অপরাহ্ন

শিরোনাম

মাঠ সঙ্কটে ফুটবল নিয়ে মাঠে যাচ্ছে না শিশু-কিশোররা

  • আপডেট: Tuesday, June 24, 2025 - 1:10 am

হারিয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বসিত শৈশব:

সাইদ সাজু, তানোর থেকে: রাজশাহীর তানোরে খেলার জন্য মাঠ ও ফাঁকা জায়গা না থাকায় ফুটবল নিয়ে মাঠে যাচ্ছে না শিশু-কিশোররা। ফলে, উচ্ছ্বসিত শৈশবের সেই বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ভিজে আগের দিনের মত করে মাঠে ময়দানে ও জমির মাঠে শিশু কিশোরদের ফুটবল খেলার দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে উচ্ছ্বসিত শৈশব। এখন শিশু-কিশোররা ঘর বন্দি হয়ে মোবাইল ফোন ও টিভিতে কার্টুনে আসক্ত হচ্ছে। গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের পাড়া মহল্লায় এক সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাঁকা জায়গা ও মাঠ দেখা যেত। শহরে তো দূরের কথা এখন গ্রামেও খেলারমত ফাঁকা জায়গা নেই। নেই খেলাধুলা করার মত কোন পরিবেশ।

একটি শিশুর সামাজিকভাবে বেড়ে ওঠার পেছনে উল্লিখিত উপাদানগুলো এক তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু বর্তমানে সভ্যতার ক্রম বিকাশের সঙ্গে-সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিজ্ঞানের নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তির দরুন আজকের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া যেন স্থবির হয়ে পড়েছে।

গ্রামাঞ্চল ও শহর অঞ্চলের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যায় শৈশবের বেড়ে ওঠার যে নিয়ম-শৃঙ্খলা তা যেন আগের শৈশবের চেয়ে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। আগে যেমন সূয্য মামা জাগার আগে, পথিকের পথ চলা শুরু না হতে, শিশিরের শীতের সকাল উঁকি দিতে না দিতে মক্তবে, মাদ্রাসায়, বাসা বাড়িতে বাচ্চাদের পড়াশোনার আমেজে চারপাশ যেন মুখোরিত হয়ে উঠত। স্কুলে যাওয়ার সময় হলে গোসল করে সবাই একসঙ্গে হয়ে হইহুল্লো করে স্কুলের দিকে রওনা হতো। স্কুলের স্যারদের শাসন, আদর, ভালোবাসা, ইত্যাদি যেন অন্যদের কাছে গল্প করার মতো বিষয় ছিল।

টিফিন শেষে খেলাধুলা করে গা ঘামিয়ে একমুঠো ভাত খেয়ে আবার ক্লাসে ফিরে আসা। বিকাল হলে ফাঁকা মাঠ কিংবা খেলাধুলায় পরিপূর্ণ রাস্তার পাশে গাদল, গোল্লাছুট, ফুটবল, ক্রিকেট,  মার্বেল আরও কত খেলা সঙ্গে সাদা কালো টিভিতে মজার সিসিমপুর, আলিফ লায়লা  ইত্যাদির যেন নিত্যসঙ্গী ছিল।

সব বয়সী ছেলেরা মিলে যখন এসব খেলাধুলা মগ্ন তখন হালকা ফাজলামি মারামারি কেন বাদ দেয়ার মতো বিষয় হয়। অন্যদিকে মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলার সব বন্দোবস্ত চুকিয়ে এক ক্লান্তি, ঘামযুক্ত শরীর নিয়ে ঘরে ফেরা হয়। টিউবওয়েল চাপিয়ে বদনায় পানি নিয়ে গোসল করে সলতে আর কেরোসিন দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে মায়ের কড়া শাসনে বই নিয়ে পড়তে বসা যেন অনন্য পরিবেশের জš§ দেয়।

এর ফলে চারদিক পড়াশোনার এক মুখরিত পরিবেশ হয়ে ওঠে। রাত দশটা হতে না হতেই পড়াশোনার পাক চুকিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া যেন নিত্যদিনের রুটিন ছিল

কিন্তু বর্তমানে শৈশবের বেড়ে ওঠা আগের শৈশবের সঙ্গে সঙ্গে যেন এক বিশাল ফারাক তৈরি করে দিয়েছে। বর্তমানে সকাল হতে না হতে বাচ্চাদের ঘাড়ে এক বস্তা বই চাপিয়ে দিয়ে ঠেলে দেয়া হয় বিশাল মহাসাগরে। সারাদিন ক্লাস করতে করতে শিশুরা যেখানে হয়রান, বিকাল হতে না হতেই হোম টিউটরের আগমন যেন শিশুর এলার্জির প্রতিক্রিয়ার মতো অনুভব তৈরি করে দেয়।

যেখানে বিকালে শিশুরা খেলাধুলায় মগ্ন থাকে সেখানে বর্তমানের শিশুরা থাকে চার দেয়াল বিশিষ্ট আবদ্ধ এক হোম টিউটরের সান্নিধ্যে। খালি পড়, পড়, পড়, এই বাণী যেন অভিভাবকের কথা বুলি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো মূল্যে তোমাকে ক্লাসে প্রথম হতে হবে, তোমার মেরিট পজিশনে এক হতে হবে এর বিনিময়ে যত হোম টিউটর, যত টাকা আমরা দিব এটাই যেন অভিভাবকের বিশাল চাওয়া।

আর এই বিশাল এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে তারা বেড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত। যে শিশুটাকে সবসময় পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা সিক্ত করা হয় সেই বয়সে তাকে শেখানো হচ্ছে ইংলিশ স্পিকিং। কেজি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়া হচ্ছে একগাদা বই। আর সেই বই, খাতা, ব্যাগ এগুলোর গ্যাঁড়াকলে পড়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তেছে। যে বয়সে খেলাধুলা মগ্ন থাকে সেই বয়সে তারা পড়াশোনার এক চরম পরিবেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নিচ্ছে। সামাজিকীকরণের যে গাঠনিক ভূমিকা তা যেন অগোচরে রয়ে যাচ্ছে।