ঢাকা | জুন ৯, ২০২৫ - ৪:৩১ পূর্বাহ্ন

ফ্রান্সে বিশ্বনেতারা সমুদ্র সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন

  • আপডেট: Sunday, June 8, 2025 - 4:59 pm

অনলাইন ডেস্ক: অতিরিক্ত মাছ শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণে বিপর্যস্ত মহাসাগর রক্ষায় উচ্চপর্যায়ের এক সম্মেলনে যোগ দিতে রোববার ফ্রান্সের রিভিয়েরা উপকূলের নিস শহরে জড়ো হচ্ছেন বিশ্বনেতারা।

ফ্রান্সের নিস থেকে এএফপি জানায়, জাতিসংঘের মতে, বিশ্বের মহাসাগরগুলো এখন একপ্রকার ‘জরুরি অবস্থার’ মুখে রয়েছে।

নিস শহরে জমায়েত হওয়া বিশ্বনেতারা তাই পরিবেশ সংকটে পড়া সমুদ্র আর সমুদ্র নির্ভর মানুষদের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে চাপের মুখে থাকবেন বলে মনে কার হচ্ছে।

গভীর সমুদ্রে খনি খনন, প্লাস্টিক বর্জ্য ও বেপরোয়া মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে যখন দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র হয়ে উঠেছে, আর বিশ্বজুড়ে চলছে কূটনৈতিক টানাপড়েন, ঠিক তখনই শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের মহাসাগর সম্মেলন।

এই জটিল বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়ে সম্মেলনের প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন একটাই: ‘ধুঁকতে থাকা সাগরকে বাঁচাতে কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বাস্তব পরিবর্তনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।’

৫০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এদের মধ্যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই রয়েছেন।

রোববার, মহাসাগর সংরক্ষণের জন্য বেসরকারি তহবিল সংগ্রহের এক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ মোনাকো থেকে নৌকায় করে নিসে পৌঁছাবেন।

সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগের সন্ধ্যায় ম্যাখোঁ বিশ্ব নেতাদের জন্য ভূমধ্যসাগরের মাছ পরিবেশন করে ডিনারের আয়োজন করবেন।

পাঁচ দিনের এই সম্মেলনের সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ফ্রান্স ঐতিহ্যবাহী এই শহরটিতে পাঁচ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে। এছাড়াও বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও পরিবেশ কর্মীরাও বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত থাকবেন বলে আমা করা হচ্ছে।

বিশেষভাবে নজর থাকবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর ওপর। তারা বাড়তে চলা সমুদ্রস্তর, প্লাস্টিক দূষণ ও মাছ শিকারের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা চেয়ে দৃঢ় কণ্ঠে দাবি জানাবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের জন্য এই সংকট শুধু পরিবেশগত নয়, অস্তিত্বের প্রশ্নও বটে।

রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র – যার সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক জলসীমায় সমুদ্রতলের খনির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে – তাদের কোনও প্রতিনিধিদল পাঠানোর সম্ভাবনা নেই।

এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সরকার সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক জলসীমায় সমুদ্রতলের  খননের জন্য দ্রুত অনুমোদন দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে কোনো প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে না।

– রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি া-

পরিবেশ রক্ষাকারীরা সতর্ক করে বলছেন, এই সম্মেলন থেকে হয়ত কোনো কঠোর আইন আসবে না। তাই নেতারা যদি স্পষ্ট ও বাস্তব পরিকল্পনা না নিয়ে আসেন, তাহলে শুধু কথা বলেই সময় শেষ হয়ে যাবে। সমুদ্রের সমস্যা ঠিক হবে না।

সবচেয়ে বড় বাধা হলো প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া। আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের ৩০ শতাংশ মহাসাগর সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে এ অর্থ দরকার।

ক্যাম্পেইন ফর নেচারের পরিচালক ব্রায়ান ও’ডোনেল বলেছেন, ‘আমরা একটা ভুল ধারণা তৈরি করে ফেলেছি যে, সরকারের কাছে মহাসাগর সংরক্ষণের জন্য টাকা নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘তাদের টাকা আছে, কিন্তু রাজনীতিক ইচ্ছাশক্তি নেই।’

বর্তমানে মাত্র আট শতাংশ সমুদ্র সংরক্ষিত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত এবং তারও কম অংশ যথাযথভাবে সুরক্ষিত।

গ্রিনপিসের মতে, এই গতি বজায় থাকলে ৩০ শতাংশ লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরো ৮২ বছর লাগবে।

এই সপ্তাহের ভালো খবর হলো, সামোয়া তার জাতীয় জলসীমার ৩০ শতাংশকে সংরক্ষিত ঘোষণা করেছে এবং নয়টি নতুন সামুদ্রিক পার্ক গড়ে তুলেছে।

পরিবেশ কর্মীরা আশা করছেন, নিস সম্মেলনে অন্যরাও এই পথে এগিয়ে আসবেন।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের উপস্থিতি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে।

অলাভজনক সংগঠন প্রিস্টাইন সিজের কেভিন চ্যান্ড বলেন, ‘তাদের সংকল্প ও উদ্যম অন্যান্য দেশগুলোর জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।’

ফ্রান্সসহ অনেক দেশ এখন বটম ট্রোলিং নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছে। এটা এক ধরনের মাছ ধরার পদ্ধতি, যা সমুদ্রের তলদেশ খুব ক্ষতিগ্রস্ত করে।

শনিবার, ম্যাখোঁ ওয়ে-ফ্রান্স পত্রিকাকে বলেছেন, দেশের কিছু সমুদ্র সংরক্ষিত এলাকায় বটম ট্রোলিং বা  সমুদ্রের তলদেশে মাছ ধরা কমিয়ে আন্ হবে।

সম্মেলনের অন্যতম লক্ষ্য হলো ক্ষতিকর মাছ ধরার ভর্তুকি বন্ধ ও গভীর সমুদ্র সংরক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি পাশ করানোর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থন পাওয়া। এ কাজ এখন ধীরে ধীরে এগোচ্ছে।

গভীর সমুদ্র খননের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রস্তাবে বৈশ্বিক সমর্থন গড়তে নিস শহরে আলাদা এক উদ্যোগ চালাচ্ছে ফ্রান্স। জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের বৈঠকের আগে এই বিষয়টি এখন গুরুত্ব পাচ্ছে।

এদিকে, রোববার একদল বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী প্রেসিডেন্ট ম্যাখোঁর কাছে সম্মেলনের জন্য কিছু সুপারিশ হস্তান্তর করবেন। যার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রতলের অনুসন্ধান সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার প্রস্তাব, কারণ গভীর সমুদ্রের অনেক তথ্য এখনও অজানা।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS