মারা গেলেন জুয়েল

অনলাইন ডেস্ক:
তখন বিকেল। বাড়ির সামনে স্বজনদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছে ৯ বছরের শিশু জুনায়েদ রহমান। তার চোখে এখনও কাঁদার বোধ নেই, কিন্তু আশপাশের সবাই জানে—সে আর কখনও বাবা ডাকতে পারবে না। নিহত জুয়েল রানার ছেলে জুনায়েদ হাতে প্লাস্টিকের খেলনার ট্রাক ধরে মায়ের আঁচলের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে হারিয়ে যাওয়া যে কাকে বলে, তা এখনও বুঝে ওঠেনি সে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার হাড়িয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, নিহত জুয়েল রানার (৩১) স্বজনেরা জানান, বাবার মরদেহ আসা থেকে দাফন পর্যন্ত সবই জুনায়েদের চোখের সামনেই হয়েছে। তবু সে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। কিন্তু সন্ধ্যায় আত্মীয়রা ফিরে যাওয়ার পর ফাঁকা বাড়িতে সে একবারে বাবাকে খুঁজতে শুরু করে।
বেদনাবিধুর এ ঘটনার আরেকটি দিক হচ্ছে, জুয়েল রানা যেমন ছোট বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন, ঠিক তেমন করেই তার ছোট ছেলেও এখন বাবাকে হারাল। আর ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রীতা খাতুন—তিনি এখন একজন সন্তানকে নিয়ে একা, ভবিষ্যৎ এক অজানা অনিশ্চয়তায়।
গত ৪ জুলাই দিবাগত রাত ১টা ৩ মিনিটে নিজ বাড়ির অদূরে মোড়ের চায়ের দোকানে বসে মোবাইলে মনোযোগ দিয়েছিলেন জুয়েল রানা। হঠাৎ পেছন থেকে বাঁশের লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করেন স্থানীয় তোফাজ্জল হোসেনের ভাই লায়েব ওরফে লাবু (৫৪)। ৪৫ সেকেন্ডের একটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে সেই নির্মমতা। ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী তাকে শনাক্ত করেন। যদিও ঘটনার পর থেকে পলাতক লাবুর বক্তব্য মেলেনি।
ফুটেজে দেখা গেছে, মোবাইলে নিমগ্ন জুয়েল রানার মাথায় পেছন থেকে লাঠির পরপর দুটি আঘাত করেন লাবু। জুয়েল সেখানেই লুটিয়ে পড়েন। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় নিজেই বাড়ি ফেরেন। স্ত্রী রীতা জিজ্ঞেস করলে কেবল বলেন, ‘হুমম’, এরপর জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান মাটিতে।
তাকে দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
স্ত্রী রীতা জানান, মঙ্গলবার রাতে বানেশ্বর হাট থেকে কোরবানির গরু কিনে এনেছিলেন জুয়েল। ছেলের জন্য অনেক সখ করে গরু এনেছিলেন তিনি। কিন্তু সে কোরবানিও আর দেওয়া হলো না। জুয়েলের মৃত্যুতে সেই গরুর ভাগ অন্য কাউকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুক ভাসানো কান্নায় স্ত্রী বলেন, “ঈদ বলে আর কিছু রইল না। আমার স্বামী তো গেল, এখন আমি চলব কীভাবে?”
স্বজনদের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরেই খুন হন জুয়েল। প্রায় চার মাস আগে স্থানীয় হোসেনের সঙ্গে লাবুর ঝগড়ার সময় জুয়েল হস্তক্ষেপ করেন। তখনই লাবু প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন তাকে দেখে নেওয়ার। হোসেনও সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন—পুকুর লিজের টাকাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার সময় জুয়েল তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছিলেন, যেটা লাবু সহ্য করতে পারেননি।
ঘটনার পরে থানায় দায়ের করা হত্যা প্রচেষ্টার মামলা এখন রূপ নিচ্ছে হত্যা মামলায়। নিহত জুয়েলের বড় ভাই সোহেল রানা মামলার বাদী। দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দুরুল হুদা জানিয়েছেন, আসামি পলাতক আছেন এবং তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।