ঢাকা | মে ২৯, ২০২৫ - ৩:৪৬ অপরাহ্ন

ভোরের আলো ফোটার আগেই জমে উঠে মানুষ বিক্রির হাট

  • আপডেট: Monday, May 26, 2025 - 11:03 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সাধারণ নিয়মে টাকার বিনিময়ে পণ্য বিক্রি হলেও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার শিয়ালকোল, কান্দাপাড়া, কাজিপুরের নাটুয়ারপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাটের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ নিজেই পণ্য।

নির্ধারিত একটি সময়ের জন্য একজন আরেকজনের কাছে বিক্রি হয়ে যান। সিরাজগঞ্জের কান্দাপাড়া, শিয়ালকোল, কাজিপুরের আলমপুর, রতনকান্দি, নাটুয়ারপাড়া, কুমারিয়াবাড়ি, পানাগাড়ি, ও সোনামুখী এলাকায় এই মানুষ বিক্রির হাট এখন জমজমাট। প্রতিদিন সকালে হাট শুরু হয়।

৭টার মধ্যে এই শ্রমজীবী মানুষদের ক্রয় করে নিয়ে যায়। বতর্মানে ধান কাটার মৌসুমে মাঠে পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে। কর্মজীবী দিনমুজরদের প্রয়োজন কাজ । এ কারণে কৃষকদের কাছে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে অনেক। তাছাড়াও অন্যান্য কাজেও শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। তাই শ্রমিকের দামও থাকে বেশ চড়া।

প্রতিটি শ্রমিকের মূল্য ৭ শত থেকে সাড়ে ৭ শত টাকার নিচে কোন শ্রমিক পাওয়া যায় না। এ সকল হাটে ১৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সে কৃষি শ্রমিক দেখা যায় বেশি।

সরেজমিনে বিভিন্ন হাটে গিয়ে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপর আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে।

হাটের ভেতরে ঢুকতেই কতিপয় শ্রমিক বলেন ‘মামা কামলা নাগবো? কত কইরা দিবেন? সদর উপজেলার শিয়ালকোল গ্রামের শ্রমিক আমজাদ (৪৩) সহ ৭ জনের একটি দল হাটে আসেন। এ সময় তাকে জিজ্ঞাস করলে সে জানায়, সংসারে বিধবা মা, ৩টি বোন সহ স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে।

ভরণ পোষণের জন্য তাকে কর্মের পথ বেছে নিতে হয়েছে । ১৭ বছরের কিশোর আলামিন জানায়, আমার বাড়িতে বিধবা মা রয়েছে ।তাকে ভরণ পোষণ ও চিকিৎসার জন্য এই কর্মের পথ বেছে নিতে হয়েছে। ছোট বলে কেউ আমাকে কিনতে চায় না। তাই অল্প দামে বিক্রি হতে হয় আমাকে। অন্য ৬ জন ৭৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছেন।

তিনি আরও বেশি দামে বিক্রি হওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আছে এক প্রশ্নের জবাবে বলে, ‘আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নাই। বইসা থাইকা কি করমু? তাই এহনে বোরো ধান ও মাটি কাটার জন্য আইছি। কিছু টাকা জমিয়ে চইলা যামু।

নাটুয়াপাড়ার চরাঞ্চলের হাতেম আলী (৪৫) জানায়, তার ৮ বিঘা জমি ছিল। ১৬ বছর আগে রাক্ষষী যমুনা নদী তা কাইড়া নিছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন অন্যের জায়গায় থাকি।

এজন্য নিজেকে ভাড়া দিতে হয়। ৬০ বয়সের বৃদ্ধ আজাহার আলী জানায়, ছেলেরা যার যার মতো সংসার পেতে নিয়েছে। ওদের বাবা-মার ভরণ পোষণের সময় তাদের নেই। তাই বৃদ্ধ বয়সে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিক্রির জন্য কান্দাপাড়া হাটে এসেছি।

কাজিপুর উপজেলার মাজনাবাড়ি গ্রামের কৃষক হালিম বলেন, আমি নাটুয়ারপাড়া থেকে সাড়ে ৭ শত টাকা দরে পাঁচ জন কামলা (শ্রমিক) কিনছি। উত্তরবঙ্গের কামলাদের কাজের মান ভালো। কাজে কোনো ফাঁকি দেয় না। তাদের তিনবেলা খাবার দিতে হয়। আর কাজ করে ভোর থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশের কুন্দাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, জেলার কৃষি শ্রমিকেরা হাওর এলাকায় ধান কাটার জন্য যাবার কারণে কৃষি শ্রমিকের ব্যাপক সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS