বাঘায় ইজারা ছাড়াই বেদখল বালুঘাট ও পশুহাট

রাজস্ব হারাতে বসেছে সরকার
বাঘা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাঘার পদ্মা নদীর লক্ষীনগর বালু মহাল থেকে ইজারা ছাড়াই দেদারসে তোলা হচ্ছে বালু। আর উপজেলার বৃহৎ দুটি পশু হাটের মধ্যে রুস্তমপুর পশুহাট থেকে ইজারার বাইরে মাসিক ডাকে আদায় করা হচ্ছে টোল।
স্থানীয়রা বলছেন, ইজারা ছাড়াই বালু মহাল আর হাট দখলে নিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। যদিও এখন চন্ডিপুর হাটের টোল আদায় করতে হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনকেই।
স্থানীয়রা জানান, দলীয় কোন্দালের কারণে গত মঙ্গলবার উপজেলার রুস্তমপুর গরুহাট ইজারা স্থগিত করা হয়েছে। যার সত্যতা স্বীকার করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও (আড়ানী পৌর প্রশাসক) সাবিহা সুলতানা ডলি।
তবে হাট থেকে বিনা পুঁজিতে টোল গত ২১ মার্চ দিনব্যাপী আদায় করেছেন একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবিহা সুলতানা ডলি জানান, আমি অন্তর্বর্তীকালিন সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়ার দুইমাস পর থেকে আড়ানী পৌর সভার প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি।
গত ছয় মাসে তিনবার বিভিন্ন পত্রিকায় পৌর এলাকার রুস্তমপুর গরু হাটের ইজারা (নিলাম) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছি। কিন্তু একবারও সিডিউল বিক্রি হয়নি। ফলে মাসব্যাপী উন্মুক্ত ইজারা প্রদান করে আসছি।
এতে প্রতি মাসে সর্বচ্চ তিন থেকে চার লাখ টাকা ইজারা দিতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার পরবর্তী মাসের জন্য হাটের ইজারা প্রদান করতে গেলে একই রাজনৈতিক দলের মধ্যে দুই গ্রুপের হট্টগোল উত্তেজনা দেখা দেয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আমি ইজারা স্থগিত করে অফিসে চলে আসি। তবে লোকমুখে জানতে পেরেছি যার নামে গত মাসে হাট ইজারা ছিলো তিনিই অদ্য গতকাল বুধবার গরু হাটের টোল আদায় করেছেন।
আড়ানী পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী ও সচিব সোহেল রানা বলেন, তিন দফা পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরেও যখন সিডিউল বিক্রি হয় না, তখন মাসব্যাপী উন্মুক্ত ইজারা দেয়া হয়। বর্তমানে এই হাটটি আড়ানীর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা তোজাম্মেলক হকের নামে রয়েছে।
তিনি আদালতে আবেদন (রিট) করেছেন। পরপর দুই সপ্তাহ বৃষ্টি হওয়ার কারনে হাটে তার ব্যাপক লোকসান হয়েছে। এ কারণে তাকে অতিরিক্ত ১০টি হাট যাতে দেয়া হয়। তবে আমরা (পৌরসভা) তার এই রিট বাতিলের জন্য আবেদন করেছি।
তিনি আরো জানান, পৌর মেয়র থাকাকালে প্রতি বছর সোয়া দুই থেকে আড়াই কোটি টাকায় ইজারা দেয়া হতো হাটটি। এ হাটের ইজারা দিয়েই চালানো হতো কর্মচারিদের বেতন। তবে এখন ইজারামূল্য তেমন না থাকায় ঠিকমত কর্মচারীদের বেতন দেয়া যাচ্ছে না।
এদিকে বাঘা উপজেলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত মার্চ মাসে চকরাজাপুর ইউনিয়নের লক্ষীনগর বালুমহাল ইজারা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও কার নামে ইজারা হয়েছে এ তথ্য নেই উপজেলা প্রশাসনে।
এই অবস্থায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সমানে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। তবে বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মি আখতার বলেন, বালুমহলের ইজারা দেয়া হয় জেলা প্রশাসন থেকে।
এ বছরের জন্য উপজেলার দুটি বালু মহাল ইজারা হয়েছে কিনা তার কাগজপত্র তিনি পাননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে খুব শিগগিরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলার দুটি হাটের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয়রা ইজারায় অংশ নিচ্ছে না। এ কারণে বাধ্য হয়ে মাসিক ডাকের মাধ্যমে ইজারা দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা চন্ডিপুর হাট উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে টোল আদায় করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে চন্ডিপুর এলাকার লোকজন জানান, বর্তমানে চন্ডিপুর গরু হাটে কিছু আনছার সদস্য ও বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মচারীদের দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে।
তাদের মতে, আর অল্প কিছুদিন পর কোরবানীর ঈদ। এবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হাটের ইজারা না হওয়ার কারণে সরকার এবং পৌর কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।