সিরাজগঞ্জে পানিশূন্য হুরাসাগর নদী, বিপাকে কৃষকরা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোরজনা ইউনিয়নের বুক চিরে উত্তর-দক্ষিণে বয়ে গেছে হুরাসাগর নদী। এক সময় গ্রীষ্মকালে নদীর পানি ব্যবহার করেই ফসল ফলাতেন কৃষক।
আবার বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমা হতো জলাধারে। এতে সারা বছর কৃষকের পানির চাহিদা মিটতো। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে শুষ্ক মৌসুমে এই নদীতে আর পানি মিলছে না। বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময় থাকে পানিশূন্য। এর প্রভাব পড়ছে চাষাবাদে।
শুধু তাই নয়, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপেও উঠছে না পানি। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। অথচ জাহাজযোগে একসময় এ অঞ্চলের মানুষ কলকাতায় চলাচল করতেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালের বিবর্তনে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে হুরাসাগর। প্রাণহীন নদীর ওপর দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা। নদীর সব রূপ-লাবণ্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে কৃষিতে। নদীনালা, খাল-বিলে পানি না থাকায় সেচকাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ পানি।
এতে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, তেমনি ভূগর্ভস্থ পানির স্তরেও চাপ পড়ছে। উপজেলার পোরজনা গ্রামের কৃষক আফসার আলী বলেন, হুরাসাগরে এখন চার মাস পানি থাকে। এখন মেশিনেও পানি ওঠে না।
জমিতে যে পানি দেবো সেই ব্যবস্থাও নেই। কোরবান শেখ নামের আরেক চাষি বলেন, নদীতে পানি নেই। এমনকি নলকূপেও ঠিকভাবে পানি উঠছে না। এতে ফসলের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মশকর আলী বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে যখন পানি থাকে না, তখন ছোট নদী ও খালগুলোও পানিশূন্য থাকে। এতে ফসল উৎপাদনে কৃষকের সমস্যা হয়।
বিশেষ করে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। এতে সেচপাম্পে পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় ব্যয় বেড়ে যায়। হুরাসাগর পাবনা ও সিরাজগঞ্জের নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ৬৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬০ মিটার ও গভীরতা সাত মিটার।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি দীপক কুমার কর বলেন, এ অঞ্চলের নদ-নদী ও খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারতের মরুকরণ প্রক্রিয়া। দেশের পানির হিস্যা আদায়ে বহুমুখী পরিকল্পনা ও কর্মপন্থার কথা বলা হলেও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আজও কোনো সাড়া মেলেনি।
সিরাজগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকনুজ্জামান বলেন, নদীতে নাব্য একদমই নেই। বর্ষাকালে বৃষ্টি থেকে আমরা যে পানি পাই, সেটা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এতে যে পরিমাণ পানি ভূগর্ভে যাওয়ার কথা, সেটা যাচ্ছে না।
এজন্য আমরা প্রতিবছর ভূগর্ভ থেকে যে পানি তুলছি, সে পরিমাণ পানি রিচার্জ হচ্ছে না। ফলে সংকট দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, যদি নদীগুলো খনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনা যায়, তাহলে নদী ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি জমা হবে। পানি সংকট কেটে যাবে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর কমে যায়। এসময় বড় নদী বাদে ছোট নদীগুলোর পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যায়। যে কারণে শুষ্ক মৌসুমে ছোট নদীগুলোয় পানিপ্রবাহ পাওয়া যায় না।