ঢাকা | মে ১৭, ২০২৫ - ২:৩৫ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

সরকারের নানা পদক্ষেপের ফলে পশুসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ

  • আপডেট: Friday, May 16, 2025 - 12:49 pm

অনলাইন ডেস্ক: দেশে গবাদিপশু উৎপাদনে এক ধরনের ‘নীরব বিপ্লব’ ঘটেছে। সরকারের কিছু বাস্তবমুখী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ এই বিপ্লবের পেছনে কাজ করেছে বলে জানা গেছে। এসব কার্যক্রমের ফলে প্রতি বছর কোরবানির ঈদে দেশের মানুষের চাহিদা মেটানোর পরও ২০ লাখের বেশি গরু ও মহিষ উদ্বৃত্ত থাকে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. তোফাজ্জেল হোসেন বাসস’কে বলেন, “মানসম্পন্ন গবাদিপশু উৎপাদনের জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। উৎপাদন যেন আরও বাড়ে, সে লক্ষ্য নিয়েই প্রতিদিন কাজ করছি।”

তিনি আরো জানান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ফরিদা খাতুনের নেতৃত্বে সরকার নতুন নতুন অনেক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সচিব বলেন, “পশুসম্পদে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ কিনা তা বলবো না, তবে কয়েক বছর আগেও প্রতিবেশী দেশ থেকে আমাদের গরু আমদানি করতে হতো, এখন আর সেটি লাগছে না। এতে দেশীয় গরু ও মহিষ খামারিরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।”

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে খামারিদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার পাশাপাশি মনিটরিংয়ের কাজও করছেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য দল বেঁধে খামারে খামারে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। গবাদিপশুর খাবার জোগান দেওয়ার জন্য ঘাস উৎপাদনের সহায়তা এবং কৃমিনাশক ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চালু রয়েছে। জেলে ও প্রান্তিক মানুষের কাছে বকনা বাছুর বিতরণসহ সরকারের নানাবিধ উদ্যোগের কারণে গবাদিপশু উৎপাদনে নীরব বিপ্লব ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর, ফরিদপুর, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ, সূবর্ণচর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, ঝালকাঠির রাজাপুর, নারায়ণগঞ্জের  আড়াইহাজার ও রাজশাহীর তানোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার জেলে ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে লক্ষাধিক বকনা বাছুর বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮-১০টি প্রকল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে মন্ত্রণালয়।

এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- খামারিদের প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, উন্নত জাতের ঘাস উৎপাদনে বীজ সরবরাহ, টীকা ও কৃমিনাশক ওষুধ বিতরণ। এছাড়া গবাদিপশুর উৎপাদন খাতের চলমান সাফল্য ধরে রাখতে বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, পরামর্শ ও বৈঠক করছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গবাদিপশু খাতে যে উন্নয়ন ও উৎপাদন বিপ্লব শুরু হয়েছে, তা ধরে রাখতে সরকার বেশ কিছু সময়োপযোগী প্রকল্প চালু রেখেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে পিপিআর রোগ নির্মূলে মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, ভোলা ও কুড়িগ্রাম জেলায় ক্ষুরারোগমুক্ত জোন গঠনের কাজ চলছে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে। এর মাধ্যমে পিপিআর টিকা উৎপাদনে এলআরআই এর সক্ষমতা বাড়ানো হবে।

এছাড়া ঘাস উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ১১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮ হাজার ৯৭০টি উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করা হচ্ছে। ১৭ হাজার ৯৪০টি খামারে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণের জন্য লাগসই প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি ৮৯ হাজার ৭০০ জন প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিকে প্রাণিপুষ্টি বিষয়ে আধুনিক কৌশল ও পদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশের ৮টি বিভাগের ৬৪ জেলার ৪৭৫টি উপজেলার ৪ হাজার ৪৮৫টি ইউনিয়নের খামারিরা এই প্রশিক্ষণের আওতায় এসেছেন।

‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন’ প্রকল্পটিও বর্তমানে চলমান রয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৫ হাজার ৩৮৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে গবাদিপশুর উৎপাদনশীলতা অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৯১ হাজার।

দুধ ও মাংস উৎপাদন বাড়াতে ‘প্রভেন বুল’ তৈরি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৭ কোটি ৪৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। পাশাপাশি মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ কোটি ১১ লাখ টাকা।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ৬৬ হাজার ও অনিবন্ধিত ৭০ হাজার। সব মিলিয়ে মোট খামার ১ লাখ ৩৬ হাজার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত খামারির সংখ্যা ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬ জন।

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে গরু-ছাগলের প্রায় দেড় লাখ খামার গড়ে উঠেছে। এছাড়া দেশে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে দুধ উৎপাদনকারী খামারের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এই শিল্পে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় এক কোটি মানুষ। ফলে দেশজুড়ে গরু ও ছাগল উৎপাদনে এক ধরনের নীরব বিপ্লব ঘটেছে।

দুগ্ধশিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের দুধ উৎপাদনে যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ হবে বলে আশা করছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

সূত্র: বাসস

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS