সীমান্তে ‘পুশ ইন’ বন্ধে দিল্লিকে চিঠি দিলো বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক: চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পুশ ইনের’ (ঠেলে পাঠানো) ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কাছে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। অনতিবিলম্বে পুশ ইন বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে ৯ মে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
৭ ও ৮ মে পুশ ইন করার পর বাংলাদেশ ওই কূটনৈতিকপত্র পাঠায়। যদিও ২০০ থেকে ৩০০ ব্যক্তিকে খাগড়াছড়ি জেলার সীমান্তে জড়ো করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যাদের মধ্যে ৭৮ জনকে ৯ মে বিএসএফ একটি জাহাজে করে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত মান্দারবাড়িয়া চরে ফেলে গেছে।
সোমবার (১২ মে) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভাতেও পুশ ইনের বিষয়টি ওঠে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পরে তিনি পুশ ইন নিয়ে সাংবাদিকদের জানান।
বিজিবি মহাপরিচালক জানান, ৭ ও ৮ মে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ২০২ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। সীমান্তের এসব জায়গায় জনবসতি নেই। তিনি বলেন, সীমান্তের প্রতিটি স্থান তো ফিজিক্যালি অকুপাই করে রাখা যায় না। যে জায়গায় কেউ (লোকজন) ছিল না, এ রকম সুযোগে (পুশ ইন) করেছে।
এই ২০২ জনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ ও বিশেষ শাখার মাধ্যমে যাচাই করে যাদেরকে বাংলাদেশি পাওয়া গেছে, তাদের প্রশাসনের মাধ্যমে নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে উল্লেখ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, তারা গত ২–৩ বছর থেকে ২০-২৫ বছর আগে বিভিন্ন সময় নানান কাজে ভারতে গিয়েছিল। এদের মধ্যে তাদের সন্তানাদিও আছে। ভারতের আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পেয়েছিল। কিন্তু (ভারতের) পুলিশ বা বিএসএফ তাদের ওইগুলো (আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট) রেখে দিয়ে তারপরে পুশ ইন করেছে।
ভারত থেকে পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে রোহিঙ্গারাও রয়েছে। বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ৩৯ জন রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে, যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে এফডিএমএন (বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক) হিসেবে নিবন্ধিত ছিল, কোনোভাবে ওরা ওদিকে পালিয়েছিল।
তাদের আরআরআরসি (শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়) ও ইউএনএইচসিআরের (জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা) মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
পুশ ইন করা ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু রোহিঙ্গা পাওয়া গেছে, যারা ভারতে নিবন্ধিত শরণার্থী। বিষয়টি উদ্বেগের উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ভারতে তারা নিবন্ধিত এবং তাদের পরিচয়পত্রও রয়েছে। আমাদের দেশে ইউএনএইচসিআর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানাতে চাই যে এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। যে দেশের শরণার্থী, সেখানেই তো রাখা দরকার ছিল।
এখানে আমরা পাঁচজনের পরিচয়পত্র দেখাচ্ছি। এখানে দেখা যাচ্ছে, ইউএনএইচসিআর আইএন মানে ইন্ডিয়া। এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছি। বিষয়টি আমরা ইউএনএইচসিআর, আরআরআরসি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়াধীন করব।
পুরো বিষয়টি নিয়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে উল্লেখ করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, তারা যদি বাংলাদেশি হয়, আমরা গ্রহণ করব। সেটা একটা আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে। এভাবে লুকোচুরি করে দেওয়ার মাধ্যমে নয়।
খাগড়াছড়ি সীমান্তে এ ধরনের আরও ২০০ থেকে ৩০০ ব্যক্তি আছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, টহল বাড়িয়ে ও সজাগ দৃষ্টি থাকার কারণে দুদিন ধরে চেষ্টা করেও পুশ ইন করতে পারছে না।
বিএসএফ সুন্দরবনের প্রত্যন্ত একটি চরে মান্দারবাড়িয়ায় একটি ভারতীয় জাহাজে করে ৭৮ জনকে ফেলে গেছে। কোস্টগার্ড ওই লোকজনকে উদ্ধার করে। তাদের নিজ এলাকায় পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
‘পুশ ইনের প্রেক্ষাপটে ৯ মে ভারতকে দেওয়া বাংলাদেশের কূটনৈতিকপত্রে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে।
পুশ ইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
ভারতের কাছে চিঠিতে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাদের ফেরত নেবে। এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধ্যে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ভারতের ফেরত পাঠানো উচিত।
কোনোভাবে ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশে পুশ ইন করাটা উচিত হবে না। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের পুশ ইন অগ্রহণযোগ্য এবং তা পরিহার করা উচিত।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতকে পুশ ইনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।