ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৯:১৭ অপরাহ্ন

আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ

  • আপডেট: Saturday, April 16, 2022 - 10:37 pm

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ। চলতি বছর রেলপথটির নির্মাণকাজ শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ জেলার এমপি, জেলা প্রশাসক, উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ওই বৈঠক থেকে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণকাজের অগ্রগতি হিসেবে সাতটি রেলওয়ে স্টেশন, একটি জংশন নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তার সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের এমপি ডা. আজিজুর রহমান, বগুড়া-৬ আসনের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, বগুড়া-৪ আসনের এমপি মোশারফ হোসেন, বগুড়া-৭ আসনের এমপি রেজাউল করিম বাবলু, রেলওয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির, বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক, সিরাগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক, কাহালু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল হাসবিুল হাসান সুরুজ, শাজাহানপুর উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ছান্নু। এ ছাড়া ওই সভায় সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, রেল বিভাগের প্রকৌশলী ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা থেকে বলা হয়, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ বাস্তবায়নে সাতটি রেলওয়ে স্টেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। বগুড়ার রানীর হাট, শাজাহানপুর, আড়িয়া বাজার, শেরপুর, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, চান্দাইকোনা, কৃষাণদিয়া। একই সঙ্গে একটি রেলওয়ে জংশন নির্মাণ করা হবে সিরাজগঞ্জে। চলতি রমজান মাসেই রেলপথ যাচাইয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তরের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে প্রায় ৭২ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সময়ের সঙ্গে আর্থিকভাবে লাভবান হবে উত্তরের মানুষ।

জানা যায়, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এ দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেল পথ না থাকায় উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলোকে যাত্রী ও কৃষিপণ্য নিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বর্তমানে বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে, নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধু বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে তিনটি জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। আর ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। সড়ক পথে ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বাসে করে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অথচ বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুতে সরাসরি ট্রেনযোগে পৌঁছাতে সময়ে লাগবে প্রায় ১ ঘণ্টা থেকে সোয়া ঘণ্টা। বাসে করে ঢাকায় যেতে ২০০ কিলোমিটার ও ট্রেনে করে পাড়ি দিতে হয় ৪০৫ কিলোমিটার।

বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে বগুড়াসহ উত্তরের জেলার ট্রেন যাত্রীদের প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। সেই সঙ্গে খরচ কমে গিয়ে উত্তরের ট্রেন যাত্রীদের আর্থিকভাবে সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া সড়ক পথ হয়ে বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট কুড়িগ্রাম জেলার ঢাকাগামীরা যাতায়াত করে। এ কারণে সড়ক ও রেলপথে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ঢাকা পৌঁছাতে হয় নানা দুর্ভোগ নিয়ে। এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে বগুড়া ও সিরাজগঞ্জসহ উত্তরের বাসিন্দারা রেলপথ নির্মাণের দাবি তোলেন। এ পথটি নির্মাণ হলে উত্তরের ১০ জেলায় আর্থিক গতি আরও বৃদ্ধি পাবে। পথ কমে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। প্রকল্পের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৯ এপ্রিল সিরাজগঞ্জে এবং ২০১৫ সালে বগুড়ায় দলীয় এক জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ রেলপথ উপহার দেওয়ার ঘোষণা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পের জন্য পরামর্শক নিয়োগ এর প্রক্রিয়া চলছে। এ প্রক্রিয়ার পর প্রকল্পটি আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টারের কার্যালয় থেকে জানা যায়, বর্তমানে বগুড়া থেকে রেলযাত্রীরা নওগাঁ সীমানা হয়ে নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাচ্ছে। আর বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পৌঁছে যেতে পারবে আগের থেকে কম সময়ে ও কম খরচে। এতে করে যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে আগের থেকে।