চারঘাটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে হোটেলে বিক্রি হচ্ছে খাবার

মোজাম্মেল হক, চারঘাট থেকে: রাজশাহীর চারঘাটে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে যত্রতত্র খাবারের হোটেল গড়ে উঠেছে। ফুটপাতে খোলা জায়গায় খাবার তৈরি ও পরিবেশন করা হচ্ছে। দামে সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় রিকশাচালক, দিনমজুরসহ শ্রমজীবী মানুষ এসব হোটেলে খাবার খান।
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে কোমলমতি শিশুরাও খোলা খাবার কিনে খাচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। বেশিরভাগ খাবার দোকানের সামনের দৃশ্য ও ভেতরের সবকিছুতে রয়েছে চাকচিক্য। তবে যেখানে খাবার তৈরি হচ্ছে সেই পরিবেশ দেখলে যে কোনো সুস্থ সচেতন মানুষই আঁতকে উঠবেন।
শুধু তাই নয়, দোকানের সামনের প্রবেশপথের খোলা জায়গায় সরঞ্জাম বসিয়ে পরোটা, সিঙ্গাড়া, শমচাসহ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন খাবার। এসব খাবারে পড়ছে ধূলোবালি ও বসছে মাছি। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার পরিবেশন হচ্ছে আবার চাকচিক্য পরিবেশে।
সচতেন মহল মনে করছেন, হোটেল-রেস্টুরেন্টে প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের খাবার তৈরির নোংরা পরিবেশ দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
গত মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার চারঘাট, সরদহ, নন্দনগাছী সহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায়, খোলা জায়গায় পুরি, পিঁয়াজু, শিঙ্গাড়া, আলুর চপ, ছোলা, চটপটি, বেলপুরি, পাকোড়া প্রভৃতি তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রাস্তার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ খোলা খাবারেই রয়েছে অনেক ধরনের জীবাণু, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ও মরণঘাতী। খোলা ও বারবার পোড়া তেলে ভাজা তৈলাক্ত এসব খাবারে মরণঘাতী ক্যানসারের জীবাণু সৃষ্টি হয়। আর এসব খাবারের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশে ভয়ঙ্কর জীবাণু রয়েছে, যা খালি চোখে দেখা যায় না।
প্রায় ৯০ শতাংশ রাস্তার খাবারেই ই-কোলাই, সালমোনেলা ও ইস্ট মোল্ডের মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে। এ জাতীয় খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, হেপাটাইটিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, আলসার ও হৃদরোগ ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
উপজেলা বাজারে হোটেলে খাবার খেতে আসা রোকছানা খাতুন, রবিউল ইসলাম, ফারহান বলেন, হোটেলে অনেক সময় আমরা খাবার খেয়ে থাকি। জানি এগুলো খেলে শরীরের ক্ষতি হয়। তবুও আমরা খাই। তবে হোটেলের খাবার তৈরির বেহাল অবস্থা পরিবর্তনে হোটেল মালিক এবং প্রশাসনকে কঠোর নজর দিতে হবে।
চারঘাট উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর শামসুন্নাহার বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। বিভিন্ন হাট-বাজার পরিদর্শন করে হোটেল ও খোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের খাবারগুলো ঢেকে রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। যদি তারা না মানে তাহলের তাদের প্রতি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা তৌফিক রেজা বলেন, অনিরাপদ খাদ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির অন্যতম কারণ। পেট ব্যথা, আমাশয়, জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ প্রায় ৩০০ শতাধিক রোগ হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন বলেন, উপজেলার হাট বাজারে হোটেল এবং রেস্টুরেন্টগুলো পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।