ঢাকা | মে ৪, ২০২৫ - ৫:১০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

চিরনিদ্রায় শায়িত রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী ইসতিয়াক, গ্রামজুড়ে শোক

  • আপডেট: Saturday, May 3, 2025 - 10:45 pm

ট্রেনে কাটা পড়ে রাজধানীতে মৃত্যু 

শিবগঞ্জ (চাঁপাই) প্রতিনিধি: রাজধানীর কুড়িল এলাকায় রেললাইনে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুলের ছবি তোলার সময় ইসতিয়াক আহমেদ রাফিদ নামে এক শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। ছবি তোলার সময় অপরদিক থেকে দ্রুতগতির একটি ট্রেন চলে আসায় ঘটনাস্থলেই কাটা পড়ে মারা যান তিনি। তার দুর্ঘটনার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ট্রেন আসার বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি ইসতিয়াক। দ্রুতগতির ট্রেনটি তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসতিয়াক রাজশাহী কলেজের বাংলা বিভাগের ছাত্র ও সৌখিন ফটোগ্রাফার ছিলেন। ইসতিয়াক আহমেদের মৃত্যুর পর সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে সমবেদনা জানান তার ফটোগ্রাফির ভক্ত ও সহপাঠীরা।

ইশতিয়াক অসাধারণ ছবি তুলতেন। তার ছবিতে মুগ্ধ হতেন ছবিপ্রেমীরা। সেই ছবি তুলতে গিয়েই আজ প্রাণ হারালেন ইশতিয়াক। এদিকে শনিবার সকালে তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের আজগুবি এলাকার সদাশিবপুর-হাজিপাড়ায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

জানাজায় অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আবদুৎ তোয়াব ও শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলামসহ সহপাঠী ও স্থানীয় মুসল্লিরা। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের মাতম।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা বলেন, চাকরির পরীক্ষা দিতে ঢাকায় গিয়েছিলেন শিক্ষার্থী ও ফটোগ্রাফার ইশতিয়াক আহমেদ রাফিদ। পরীক্ষা শেষে উঠেছিলেন তার খালার বাসায়। শুক্রবার বিকালে খালাতো ভাই ঢাকার কুর্মিটোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে বের হয়।

এ সময় রেল লাইনে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণচূড়ার ছবি তোলার সময় অপরদিক থেকে আসা আরেক ট্রেনে কাটাপড়ে রাফিদের মৃত্যু হয়। রাফিদ শিবগঞ্জ সরকারি মডেল হাইস্কুল থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়। পরে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। এরপর রাজশাহী কলেজে স্নাতকের জন্য ভর্তি হন। শেষ পর্যন্ত সেখানেই অধ্যায়নরত ছিলেন।

অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী আল বশরী সোহান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজপথে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন ইশতিয়াক। তার ভূমিকা কখনো ভূলে যাবার মত নয়। আল বশরী সোহান তার নিজ ফেসবুকে লিখেছেন, ইসতিয়াক আহমেদ কিছু ছবির জন্যই এসেছিলো, আমাদের ছবি উপহার দিয়ে আবার চলে গেলো। রেখে গেলো শুধু ছবি। একজন সুখী আলোকচিত্রশিল্পী।

তিনি আরও লিখেছেন, ইসতিয়াক আহমেদ আন্দোলনের ছবি তুলতে এসো, রাফিদ এলো, ছবি তুললো, ছবি দিলো, তারপর চলে গেলো। বক্তব্য দেয়ার সময় দেখলাম, নিচে বসে আমার ছবি তুলছে, চোখের ইশারা দিলো, যে বক্তব্য দিয়ে যান। আমি বক্তব্য দিয়ে গেলাম, রাফিদ ছবি তুলে চলে গেলো।

আরেক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী ও তার সহপাঠী ফাইয়াজ রহমান তনয় লিখেছেন, আমাদের বন্ধু ইসতিয়াক আহমেদ আর নেই। ইন্না-লিল্লাহি-ওয়া-ইন্না-ইলাহি-রাজিউন। দেখাও কত রঙিল ছবি! ছবির আশায় হারাইলাম সবই, ইসতিয়াক আহমেদ শেষটা এভাবে না করলেও পারতি রে, অনর্ঘ্য ১৯ আজকে হতবাক রাফিদ, ভালো থাকিস বন্ধু। আমরা গভীর শোকাহত।

রাফিদের বাবা রেজাউল করিম সরকারি চাকরিজীবী। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসে কর্মরত। চাকরির সুবাদে তারা শিবগঞ্জ পৌর এলাকার দেওয়ানজাইগীর মহল্লায় ভাড়া থাকতেন।

বাসার মালিক একেএস রোকন জানান, রাফিদ খুবই ভদ্র-শান্তশিষ্ট স্বভাবের একজন ছেলে। পড়ালেখায় যেমন মেধাবী ছিলেন। তার হাতের তোলা ছবিও খুবই চমৎকার।

যে কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নাম বেশ পরিচিত। এদিকে তার অকালমৃত্যুতে উপজেলা প্রশাসন ও শিবগঞ্জ প্রেসক্লাব গভীরভাবে শোকাহত। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন ও বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS