নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি

অনলাইন ডেস্ক: দেশে যখন নতুন বিনিয়োগের প্রত্যাশা করা হচ্ছে; এ লক্ষ্যে অতিসম্প্রতি আয়োজন করা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনের; তখন নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এ প্রত্যাশার বিপরীত একটি পদক্ষেপ বলে মনে করি আমরা। শিল্পোদ্যোক্তাদের তীব্র আপত্তি উপেক্ষা করে রোববার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গ্যাসের নতুন যে দাম ঘোষণা করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির হার ৩৩ শতাংশ।
শুধু নতুন শিল্পেই নয়, এর পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন, সেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকেও অতিরিক্ত লোডের জন্য ইউনিটপ্রতি ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। নতুন এই দর চলতি এপ্রিলের বিল থেকেই কার্যকর হবে। জ্বালানি খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে গ্যাসের দাম বাড়ানো শিল্প খাতের জন্য হবে আত্মঘাতী।
এটা অনেকটাই স্পষ্ট, গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে। এক্ষেত্রে নতুন বিনিয়োগের পথ যে রুদ্ধ হবে, সে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ শুল্ক পরিকল্পনা, স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ এবং ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কারণে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প ব্যাপক চাপে রয়েছে, তার ওপর গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করায় উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প স্থাপনে নিরুৎসাহিত হবেন। তাছাড়া যেভাবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা অযৌক্তিক।
দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি বিইআরসি। এমনকি গ্যাসের এ দাম বৃদ্ধির ফলে সরকার কত টাকা বাড়তি আয় করবে, তাও জানে না কমিশন। ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেছেন, গণশুনানিতে আমরা হিসাব করে দেখিয়েছিলাম দাম না বাড়িয়ে উলটো কমানো যায়। বিগত সরকার এ সেক্টরে যেসব লুণ্ঠনমূলক ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছিল, সেগুলো কমালেই দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।
বস্তুত দেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সবাই আশা করছে, অন্যান্য খাতের মতো জ্বালানি খাতেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। এখানে ভোক্তাদের স্বার্থ গুরুত্ব পাবে। বিগত সরকার ভোক্তাদের সুরক্ষা না দিয়ে যেভাবে দুর্নীতিকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল, সে ধারার অবসান হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক, পেট্রোবাংলার দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর বিইআরসির গণশুনানিতে ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর তীব্র আপত্তিকে মোটেই আমলে নেওয়া হয়নি।
দেশে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুত থাকার পরও বিগত সরকার এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল, যার ফলে মূলত একটি অলিগার্ক শ্রেণি লাভবান হয়েছে। বর্তমান সরকারকে এই পথ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দেশে গ্যাসের নতুন কূপ খননের উদ্যোগ নিতে হবে। এ খাতে বিদেশনির্ভরতা কমানো না গেলে প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর ফলে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের দাম বাড়বে। এতে ভোক্তারা বিদেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকবেন। বিষয়টি সার্বিকভাবে দেশের শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, যা মোটেই কাম্য নয়। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা জরুরি বলে মনে করি আমরা।