ঢাকা | মে ৬, ২০২৫ - ২:১৩ পূর্বাহ্ন

নয়া কৌশলে চলছে মাদক কারবারি

  • আপডেট: Wednesday, April 9, 2025 - 10:05 pm

চোরাচালানের অন্যতম রুট চারঘাট-বাঘা

চারঘাট প্রতিনিধি: রাজশাহীর চারঘাটে নতুন কৌশলে চলছে মাদক ব্যবসা। নতুন কৌশল অবলম্বন করে মাদক ব্যবসারীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফেনসিডিল চোরাচালানের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা চারঘাট ও বাঘা।

এক সময় ভারত থেকে পদ্মা নদী দিয়ে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য চারঘাট-বাঘার সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে দেশে প্রবেশ করে দেশের অভ্যন্তরে চলে যেত। তবে গত দুই-তিন বছর ধরে বিজিবি ও পুলিশের হাতে বড় কোনো ফেনসিডিলের চালান ধরা পড়েনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রথম দিকে মাদক পাচার কমেছে মনে হলেও সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নতুন পন্থায় ফাঁদ পেতেছে মাদক কারবারিরা। ভারত থেকে তরল ফেনসিডিল, অন্যতম কাঁচামাল কোডিন পাওডার ও বোতলের লেভেল আনছে তারা।

এরপর পুরোনো বোতলে ফেনসিডিল ভরে বিক্রি হচ্ছে খুচরায়। সীমান্তবাসী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিটের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বোতলজাত ফেনসিডিলের ক্ষেত্রে চালান বড় হলেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ কারণে বর্তমানে বোতলজাত ফেনসিডিল আসছে না বললেই চলে।

নৌপথে তেলের পাঁচ থেকে দশ লিটারের জারে তরল ফেনসিডিল ও বোতলের লেবেল আনা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেনসিডিল তৈরির পাউডার কোডিনও আসছে। এরপর সীমান্তবর্তী চরে অথবা ফাঁকা মাঠে এগুলো পুরোনো বোতলে ভরে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া সহজ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানেও একই পদ্ধতিতে তরল ফেনসিডিল পাঠানো হচ্ছে।

চারঘাট মডেল ও বাঘা থানা থেকে জানা যায়, গত এক বছরে এ দুই থানায় ৮১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৮২টিই (৮৩ শতাংশ) মাদকের। কিন্তু এই সময়ে মাদক মামলার অধিকাংশই ১০-২০ বোতল ফেনসিডিল জব্দের। সরেজমিন চারঘাট ও বাঘা সীমান্তে পদ্মা নদীর পাড়ে কথা হয় জেলেদের সঙ্গে।

কার্ডধারী জেলে সাহাবুদ্দিন আলী বলেন, দুই উপজেলা মিলে প্রায় তিন হাজার কার্ডধারী জেলে আছে। কিন্তু সবাই মাছ ধরতে নদীতে যায় না। অনেকেই নৌকা-জাল নিয়ে নদীতে নেমে ভারতীয় জেলেদের জন্য অপেক্ষা করে। ভারতীয় জেলেরা মাঝ নদীতে এসে নৌকা থেকে পাউডার কিংবা বোতলে করে তরল ফেনসিডিল, লেবেল এগুলো দিয়ে যায়। পরে সুবিধাজনক জায়গায় এনে পুরোনো বোতলে ভরা হয়। এরপর বিশেষ যন্ত্র দিয়ে নতুন লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজন মাদক কারবারির সঙ্গেও কথা হয়। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা দুই লিটার তরল ফেনসিডিল নিয়ে আসতে পারলে এর সঙ্গে দেশিয় বিভিন্ন কোম্পানির কাশির সিরাপ ও ঘুমের ট্যাবলেট মিশ্রণ করে ৫০-৬০ বোতল ফেনসিডিল তৈরি করেন। আসল ফেনসিডিলের দাম প্রতি বোতল ২৫০০-৩০০০ টাকা। তারা এক বোতল বিক্রি করেন ১৫০০-২০০০ টাকায়।

সংগ্রহে থাকা পুরোনো বোতল পরিষ্কার করে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে বোতলের গায়ে ও মুখে নতুন লেবেল সাঁটিয়ে তারা এগুলো বিক্রি করেন।

দেশের বিভিন্ন শহরেও একই ভাবে তরল ফেনসিডিল ও লেবেল পাঠানো হয়। চারঘাট উপজেলা মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, আশপাশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে গাড়ি নিয়ে এসে লোকজন ফেনসিডিল সেবন করে চলে যাচ্ছে। কিন্তু কোথাও বোতল পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে না। প্রথম আমরা মনে করেছিলাম হয়তো মাদক পাচার কমে গেছে।

এখন খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পুরোনো বোতলে নতুন মাদক ঢুকিয়ে বিক্রি হচ্ছে। কৌশল পাল্টে আরও বেপরোয়া হয়েছে মাদক কারবারিরা।

বাঘার মীরগঞ্জ এলাকার ভাঙারি ব্যবসায়ী শরীফ আলী বলেন, আগে সীমান্তের এসব এলাকা থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১০ বস্তা ফেনসিডিলের খালি বোতল কেজি দরে বিক্রির জন্য আসত। কিন্তু এখন হাফ বস্তাও হয় না। কিছু বোতল গ্রামে ফেরি করা ভাঙারিদের কাছে পাওয়া গেলেও সেগুলো পিচ হিসেবে অতিরিক্ত দামে অনেকে কিনে নিয়ে যায়।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর রাজশাহীর (সার্কেল-খ) পরিদর্শক সাইফুল আলম বলেন, প্রতি মাসে চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় ১০-১৫টি অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তু এখন ফেনসিডিল ধরা অনেক কঠিন।

কোডিন পাউডার দেশে এনে কাশির সিরাপের সঙ্গে মিশিয়ে ফেনসিডিল তৈরি করা হচ্ছে। বোতলের পাশাপাশি পলিথিনেও লিকুইড ফেনসিডিল পরিবহন করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে এমন একটি চালান জব্দ করা হয়। কৌশল পরিবর্তন করায় চালান ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চারঘাটের ইউসুফপুর কোম্পানি কমান্ডার সুবেদার হাবিবুর রহমান বলেন, তেলের জার কেউ সন্দেহ না করায় মাদক কারবারিরা এ পন্থা নিয়েছে। এখন আরও সতর্কতার সঙ্গে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS