ঢাকা | এপ্রিল ১৯, ২০২৫ - ৯:২২ পূর্বাহ্ন

খরায় ঝরে পড়ছে আমের গুটি, দুশ্চিন্তায় আমচাষি

  • আপডেট: Tuesday, April 8, 2025 - 10:27 pm

রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ টন:

মিজান মাহী, দুর্গাপুর থেকে: চৈত্রের শেষ দিকে খরায় পুড়ছে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা সহ আশেপাশের অঞ্চল। গত এক সপ্তাহে দিনের তাপমাত্রা কখনো ৩৮ আবার সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। রাতে সেই তাপমাত্রা যাচ্ছে নেমে।

এতে খরা আর দাবদাহে আমের গুটি পড়ছে ঝরে। এতে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। অতিরিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশক ব্যবহারে এখন অনাবৃষ্টিতে দ্রুত আমের গুটি ঝরে পড়ায় এবার আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

তবে রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি বোটায় একটি আমই বাম্পার ফলন।

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন।

অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এদিকে দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে।

এতে এ উপজেলায় অন্তত তিন থেকে সাড়ে ৩শ আম বাগান রয়েছে। আমের ফলন নির্ভর করে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। এবার প্রচুর মুকুল ও গুটি ধরলেও খরায় কিছুটা ঝরছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহ থেকে ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের সুলাইমান শেখ বলেন, খরায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। সেচ ও পানি ছিটিয়েও গুটি ঝরে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আরেক আম ব্যবসায়ী বদর প্রামানিক বলেন, তাপমাত্রা খুব বেশি হচ্ছে।

গতবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আম বাগান মালিকরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় আমের বোটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। পরে আম হলুদ বর্ণ ধারণ করে গুটি ঝরে পড়ছে।

নওপাড়া গ্রামের আবু কালাম বলেন, ১০ থেকে ১২টি আম বাগান লিজ নেয়া আছে তার। প্রায় বাগানের আমগাছে গুটি ঝরে পড়ছে। এ তাপমাত্রা অব্যহত থাকলে এ বছর আমের ফলণ বিপর্যয় হবে। এতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুণতে হবে।

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সাহারা শারমিন লাবনী বলেন,  খরা ও অনাবৃষ্টি এগুলো প্রাকৃতিক দুযোর্গ। এবার প্রায় আমগাছ গুলোতে ব্যাপকহারে গুটি এসেছে। এখন ভাল ফলনের জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। আমচাষিদের এ সময় সেচ ও আমের বোটায় স্প্রে করে পানি দিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, একটি বোটায় একটি আমই বাম্পার ফলন। একটি মুকুলে প্রচুর গুটি আসে। সবই তো আর টিকে থাকবে না। আর টিকলেও ভাল ফলন হবে না। আম ছোট হবে। এখন গ্রীষ্মকাল। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে।

চাষিদের আম গাছের গোড়ায় সেচ ও গুটিতে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। দাবদাহে এ বছর রাজশাহীতে আমের ফলন বিপর্যয়ের সম্ভবনা আছে কী না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমের ফলন বিপর্যয়ের আপাতত সম্ভবনা দেখছি না। বৃষ্টি হলেই সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।