ঢাকা | মার্চ ২০, ২০২৫ - ৫:৪২ পূর্বাহ্ন

রমজানেও মিলছে সুস্বাদু কাটিমন আম

  • আপডেট: Tuesday, March 18, 2025 - 10:33 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: আমের মৌসুম অনেক আগেই শেষ হয়েছে। নতুন মৌসুমের আমের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা।

এর মধ্যে রমজান মাসে দেখা মিলছে পরিপক্ক বারোমাসি জাতের কাটিমন আম। রমজান মাসকে টার্গেট করে এই বারোমাসি কাটিমন আম চাষ করেছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি উদ্যোক্তা রুবেল হোসেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, বাজারে চাহিদা থাকায় কাটিমন আমের চাষাবাদ বাড়ছেই। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম আবাদ হয়েছে ৮৭৮ হেক্টর জমিতে। এবার ১ হাজার ৭৯২ হেক্টর জমিতে কাটিমন আম চাষ হচ্ছে।

সরেজমিনে রুবেল হোসেনের আম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট সারিবদ্ধ গাছ। পাতার ফাঁকে ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে পরিপক্ক আম।

আমের ভারে যেন নুইয়ে পড়েছে গাছের ডাল। ইউটিউবে বারোমাসি কাটিমন আম চাষ দেখে এই আম চাষে উদ্বুদ্ধ হন রুবেল হোসেন। তিন বছর আগে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তোলেন কাটিমন আম বাগান।

বর্তমানে তার বাগানে প্রায় আড়াইশ মণ আম রয়েছে। এরই মধ্যে আম বিক্রি শুরু করেছেন। বছরের বিভিন্ন সময় ভেদে প্রতি কেজি আম বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে।

তবে এখন আম বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা দরে। এবার প্রায় ২৫ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে এবং সব খরচ বাদে ১৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন রুবেল হোসেন।

আমচাষি রুবেল হোসেন জানান, ইউটিউবে কাটিমন আমের বাগান দেখে আমি আম বাগান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং ২০২১ সাল থেকে এ আম চাষ করছি। এই আমের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আম ফলন পাওয়ার তিন থেকে চার মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হয়।

এছাড়া খরচ বাদ দিয়ে আমার এখানে প্রফিট ভালোই থাকে। ২৫০, ৩০০ ও ৪০০ টাকা পর্যন্ত দরে আম বিক্রি করতে পারি। একেক সময় একেক রকম দরে আম বিক্রি করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে খুচরা কাস্টমারের কাছে আম বিক্রি করি না। তবে কিছু অনলাইন সেলার বাগান থেকে আম নিয়ে যান। পাইকারী কিছু আড়তদার আছে তারা বাগান থেকে আম নিয়ে যান। ঢাকা, চিটাগাং, খুলনা সব জায়গা থেকে নিয়ে যায় আরকি।

আম হারভেস্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আম হারভেস্ট আমি শুরু করেছি। মোটামুটি ১৫ দিন আগ থেকেই আম হারভেস্ট করছি এবং রোজার ঈদের ১৫ দিন পর পর্যন্ত এই হারভেস্ট চলবে।

২০০ থেকে ২৫০ মণ আম গাছে আছে। এই আম বিক্রি করলে সব কিছু খরচ বাদ দিয়ে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা মতো প্রফিট থাকবে।

বাগানে কাজ করা বাগান পরিচর্যাকারী আব্দুল হামিদ বলেন, রোজার ভেতরে যে আমাদের আমটা হয় সেই আম নেওয়ার জন্য আমরা ২ থেকে ৩ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি নিই।

কারণ আমরা আমটা যেন রোজার ভেতরেই ভালো দামে বিক্রি করতে পারি। এজন্য যে আম সিজনের মধ্যে নেব সেটা রাখি আর বাকি মুকুল কেটে ফেলে দিই। আমি এখানে ৪৫০ টাকা বেতন পাই। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ করি।

স্থানীয় বাসিন্দা সিফাত রানা বলেন, প্রতি রমজানেই রুবেল ভাই কাটিমন আম চাষ করেন। এই বাগান থেকে প্রতি রমজানেই আমরা আম নিয়ে যাই। কাটিমন আম খেতে খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। তাই আপনারা চাইলেই বাগান থেকে আম নিয়ে যেতে পারেন।

নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সলেহ আকরাম বলেন, নাচোল উপজেলার কসবা ইউনিয়নে কৃষি উদ্যোক্তা আমাদের ভাই রুবেল হোসেন ৪০ বিঘা জমিতে কাটিমন আমের বাগান করেছেন।

এই জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি বছরে দুইটি বা তিনটি ফলন দেয়। বর্তমানে এখন একটি ফলনের হারভেস্টের কাজ চলছে। এই জাতটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো কৃষক যখন মনে করে তখন ফলন পেতে পারে।

সেদিক থেকে আমরা চাষি ভাইদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি তিনি যেন এই জাতটির ফলন অফ সিজনে নেয়। অফ সিজনে নিলে বাজার মূল্য বেশি থাকবে। কারণ কাটিমন আমের পরিচর্যা খরচ বেশি।

সেক্ষেত্রে তারা অধিক মূল্যে বিক্রি করতে পারলে কাটিমন আম চাষ লাভজনক হবে। আর রুবেল হোসেনের বাগানে রমজান মাসে কাটিমন আম হারভেস্ট হচ্ছে এটি রোজাদার ভাইদের জন্য সুখবর যে রমজান মাসেও তাদেরকে আমরা আম খাওয়াতে পারছি।