ঢাকা | মে ১৬, ২০২৫ - ১০:১৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

সম্ভাবনাময় পাবনার জুট শিল্প

  • আপডেট: Friday, March 7, 2025 - 9:21 pm

কলিট তালুকদার, পাবনা থেকে: বৃটিশ সাশন আমল থেকে গেঞ্জি শিল্প পাবনার অর্থনীতিকে ধরে রেখেছিল। যা ষাট দশক পর্যন্ত মোটামুটি ভালভাবে চলে। ওই সময়ে ভারতবর্ষ সহ বিভিন্ন দেশে পাবনার গেঞ্জির যথেষ্ট কদর ছিল। তখন পাবনার গেঞ্জি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করে বিশাল পরিমাই বিদেশি মুদ্রা আয় করা হতো।

এই গেঞ্জি শিল্পকে ঘিরে পাবনায় বড় বড় গেঞ্জি তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। সে সময় এই শিল্পের ওপর নির্ভর করে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এ সব শিল্প থেকে একদিকে যেমন বিদেশি মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে অর্থনীতি চাজ্ঞা হতো, অপরদিকে এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকেরা সানন্দে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতো। সত্তর দশ থেকে এই শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়ে।

স্বাধীনতার পরেও গেঞ্জি শিল্প ভালই চলতো। ১৯৭২-৭৩ সালে এই শিল্প বিলুপ্ত হতে থাকে। গেঞ্জি শিল্পের সাথে জড়িতদের মতে বাংলাদেশে সুবিখ্যাত শিল্প প্রতিষ্ঠান আদমজী অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রথম পাবনাতে সুতার ব্যবসা শুরু করে। তাদের কাছ থেকে সুতা কিনে পাবনার গেঞ্জি ব্যবসায়ীরা গেঞ্জি উৎপাদন করতো।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে পাবনায় তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। সুতার অভাবে পাবনার ক্ষুদ্র শিল্প মালিকেরা ব্যবসা পরিচালনা করতে হিমসিম খেতে থাকে। কিছুদিন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলার পর ১৯৭২-৭৩ সালের দিক থেকে এই শিল্প একেবারে বন্ধ হতে থাকে। বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার শ্রমিক। বর্তমানে পাবনা শহরের প্রাণ কেন্দ্রেসহ বিভিন্ন এলাকায় গেঞ্জি তৈরি হচ্ছে তবে তা গার্মেন্টেসের জুট থেকে।

জানা যায় এক সময় গেঞ্জি শিল্পের সাথে জড়িত পরতর্তীতে বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকেরা মিলের কাপড় ও গেঞ্জির উছিষ্ট দিয়ে পোশাক তৈরি করা যায় কিনা, সে বিষয়টি হঠাৎ মাথায় বাসা বাধে। প্রথমদিকে সীমিত আকারে পরীক্ষা মূলকভাবে হাতে গোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ঝুঁকি নিয়ে জুট শিল্পের ব্যবসা শুরু করে। কর্মসংস্থান হয় কিছু শ্রমিকের। বৃহত্তর ঢাকার বিভিন্ন কাপড়ের মিল থেকে নমুনা কাটিংয়ের কাপড়, পরিত্যক্ত অকেজো কাপড় মিল থেকে কম দামে নীলামে বিক্রি করা হয়।

সেখান থেকে পাবনার ব্যবসায়ীরা কিনে এনে সেগুলো কাটা ছেড়া বাদ দিয়ে গেঞ্জি তৈরি করা শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে এ সব গেঞ্জি জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ফেরি করে বিক্রি করা হতো।

অন্যান্য গেঞ্জির তুলনায় জুটের তৈরি গেঞ্জির দাম অনেকটা কম হওয়ায় জেলার গরীব মানুষেরা এ পণ্যের গ্রাহক ছিল। ধীরে ধীরে পাবনার গন্ডি পেরিয়ে জুট পণ্য পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী সাফল্যের ফলে অন্যান্য ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসায় পুজি বিনিয়োগ করতে শুরু করে। সম্ভাবনা জেগে উঠে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধর্মী এক নতুন শিল্পের।

পুজি বিনিয়োগের তুলনায় আয় বেশি হবার কারনে বর্তমানে পাবনায় সহস্রাধিক ছোট বড় জুট শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এ শিল্প স্থাপনের জন্য বিশাল জায়গা অথবা বড় বড় ইমারতের প্রয়োজন হচ্ছে না। অভিজ্ঞতা কয়েকটি মেশিন ও পুজি হলেই এ শিল্পে প্রতিষ্ঠা করা যায়। ধীরে ধীরে পাবনার এ শিল্পের প্রচার ও প্রসার উত্তরাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়লে এ পোষাকের চাহিদাও বাড়তে থাকে।

চাহিদা বৃদ্বির ফলে বাড়তে থাকে মিল কাটিং জুটের দামও। তার সঙ্গে পাল্লা  দিয়ে ব্যবসায়ীরাও টিকে থাকার চেষ্টা করে। জুটের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে পাবনার তৈরি গেঞ্জির দাম বৃদ্বি পেলে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়েছে এ ব্যবসায়। বর্তমানে পাবনার তৈরি জুট থেকে গেঞ্জি ও পোশাক বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যাচ্ছে।

প্রতি দিনই বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ব্যবসায়ীরা পাবনা থেকে গেঞ্জি ও  পোশাক কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাবনার ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত গেঞ্জি শিল্পের হারানো অর্থনীতি কিছুটা হলেও জুট পোশাক শিল্প পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, মিল মালিকদেরকে জিম্মি করে এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতারা মিল  থেকে পরিত্যক্ত জুট কম দামে কিনে তা বাজারে চড়া দামে  বিক্রি করছে। যার প্রভাব পড়ছে জুট থেকে গেঞ্জি ও পোশাক তৈরি শিল্পে। ফলে এ শিল্পও ধীরে ধীরে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। পুজি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে আগের তুলনায় কয়েক গুন।

জুট শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারলে বর্হিবিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে কম মূল্যে এ পন্য রপ্তানি করা সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ভারতে জুট থেকে তৈরি গেঞ্জি ও পোশাক রপ্তানি করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন সরকার উদ্যোগ নিয়ে পরিত্যক্ত জুট কোঠা ভিত্তিক প্রকৃত জুট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করলে জুট থেকে তৈরি গেঞ্জি ও পোশাকের দাম অনেক কমে আসবে।

Hi-performance fast WordPress hosting by FireVPS