ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২৫, ২০২৫ - ৩:৫৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

শিবগঞ্জে ৮ বছর আগে দুই ভাই গুম, তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

  • আপডেট: Monday, February 24, 2025 - 8:00 pm

চাঁপাই ব্যুরো ও শিবগঞ্জ প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে ২০১৬ সালে মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিম নামে দুই ভাই গুমের ঘটনায় তদন্তে নেমেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে মিজানুর রহমান ও রেজাউল করিমের বাড়িতে গিয়ে সশরীরে তদন্ত করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৮ সদস্যের একটি টিম। এই তদন্তে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার দুইজন তদন্তকারী কর্মকর্তা, তিন সদস্য ও তদন্ত সংস্থা. প্রসিকিউটার ও গুম কমিশনের একজন প্রতিনিধি।

এদিকে মামলার বাদী মো. আইনাল হক জানান, তিনি নিজে বিএনপির সমর্থক ও ছেলে সেতাউর রহমান জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট সেতাউরকে আটক করতে এসে বাড়িতে না পেয়ে বাড়ি থেকে মিজানুরকে তুলে নিয়ে যায় শিবগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শকসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরে বড় ভাইকে ছাড়ানোর জন্য ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম পুলিশের কাছে বার বার যাওয়ার অপরাধে তাকেও রাজশাহীর এস এস প্লাজা ছাত্রাবাস থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায় সাদা পোশাকে থাকা পুলিশ সদস্যরা। এরপর থেকেই নিখোঁজ তার দুই ছেলে।

পরের বছর ২০১৭ সালে ২৭ এপ্রিল অপারেশন ঈগল হান্ট নামে কথিত অপারেশনে রেজাউল করিমকে হত্যা করে ফ্যাসিস্ট সরকার। এরপরই ছেলে হারানোর শোকে স্ট্রোক করে মারা যান তার স্ত্রী। এখনও অপর সন্তানের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনিসহ পরিবারের সদস্যরা। তিনি তার ছেলেদের ফেরত এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তদন্ত কমিটির কাছে।

অপারেশন ঈগল হান্ট মামলায় অভিযুক্ত মো. ইসাহাক আলী জানান, ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে তাকে আটকের পর অপারেশন ঈগল হান্ট এবং নাচোলের একটি কথিত জঙ্গি সভায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক দেখানো হয়। বিভিন্ন স্থানে আটকে রাখার ২ বছর পর নানা চরাই-উৎরায় পার হয়ে অবশেষে জামিনে মুক্ত হলেও এখনও ওইসব মামলা চলমান রয়েছে। ৫ আগস্টের পর তার মতো ভুক্তভোগীরা আশার আলো দেখতে পাওয়ায় মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। এসময় তিনিও কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো. ওবায়েদ পাঠান জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয় জন গুম ও খুনের শিকার হয়েছে। ঈগল হান্ট ও ছাত্রদল নেতা সেতাউরের দুই ভাই গুম ও খুনের ঘটনায় দুটি মামলা আমরা দায়েরের পর সে মামলা আন্তর্জাতিক আদালতে স্থানান্তরিত হয়েছে। সোমবার সেই মামলার তদন্তে আসে সংস্থাটি। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সঠিক তদন্ত শেষে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং হামলা, গুম ও খুন ঘটনার দলীয় তত্ত্বাবধায়ক মো. সালাউদ্দিন খান বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে বিএনপির ৮৫৩ জন গুম হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এর মধ্যে ১৫৩ জন গুমের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঘটনা রয়েছে। আমরা তদন্ত সংস্থার এ দলকে সহযোগিতা করার জন্য ঘটনাস্থলে এসেছি। জেলায় পাঁচজনকে গুম চারজনকে হত্যার ঘটনায় তৎকালীন শিবগঞ্জ থানার এস আই শাহ আলম, গাজি মোয়াজ্জেম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম খান জড়িত।

পচা লাশ এনে জঙ্গি নাটক সাজিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের অতি উৎসাহী কিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে সারা দেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও তাদের দলীয় লোকদের নিধন অভিযান চালিয়েছে। তারা জঙ্গি নাটকের নামে তাদের দলের পাঁচজনকে হত্যার পর উল্টো ওই ঘটনায় তাদের দলের ২১ জনকে আসামি করে হয়রানি করছে।

বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি তারা বিএনপি ও ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্মূল করার জন্য ও দলকে ধ্বংস করার জন্য দলের নেতাকর্মীকে নিধন করে মেধা শূন্য করতে সারা দেশে ২২৭৬ জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। সারা দেশে এসব হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা।

প্রসঙ্গত: ঘটনার ৮ বছর পর অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ এনে শিবগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রেজাউলের বাবা আইনাল হক। গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে। এ মামলায় রাজশাহী রেঞ্জের ডি আই জিসহ পুলিশের পাঁচজন সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাত নেতাকর্মীর নামে মামলাটি করা হয়। এ মামলায় অপহৃত অপর সন্তানের সন্ধান চেয়ে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকেও অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়াও এর আগের মাসে অপারেশন ঈগল হান্ট নামে অভিযানে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী সুমাইয়া বেগম একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।