উত্তরাঞ্চলে ১০ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে পানি দিচ্ছে বিএমডিএ

স্টাফ রিপোর্টার: ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কৃষি জমিতে পানি সরবরাহ করে চলেছে। চলতি রবি মৌসুমে ১০ লাখ ৬২ হাজার কৃষক পরিবারের প্রায় ১০ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর রবি শস্যের জমিতে পানি সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিএমডিএ সেচ শাখার প্রধান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো: জাহাঙ্গীর আলম খান জানান, বিএমডিএ ১৬ জেলায় ১৫ হাজার ৮২৮টি গভীর নলকূপ স্থাপন করেছে। ১৫ হাজার ৮৯৫.০৬ কিলোমিটার এলাকায় সেচের পানি বিতরণ ব্যবস্থা নির্মাণ, পাতকূয়া ৬৫০টি; বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি ৫৭৬টি ও সোলার এলএলপি ৪৫০টি। ৪২৫৭ কি.মি. খাস/মজা খাল পুনঃখনন, ৭৭৮টি ক্রসড্যাম নির্মাণ, ১৩টি নদীতে পল্টুন স্থাপন, ১৩ হাজার ৫৭ হেক্টর জলাবদ্ধতা নিরসন- নওগাঁ জেলার রক্তদহ বিল, টেপাবিল, মনছুর বিল এবং রাজশাহী জেলার ছত্রগাছা বিল, দেবর বিল ইত্যাদি বিলের ৫৭২টি সোলার ডাগওয়েল নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৪৪ কি.মি. সংযোগ রাস্তা নির্মাণ করেছে।
তিনি আরো জানান, ১ হাজার ৫৯২টি পরিবারের খাবার পানি সরবরাহের জন্য ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ, বনায়নের লক্ষ্যে ২ কোটি ৫৮ লাখ গাছ লাগানো, প্রতি বছর ৬০০ মে. টন বীজ উৎপাদন, ১ লাখ ৪৮ হাজার ২১৮ কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে আবাদযোগ্য জমি দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর এবং সেচকৃত জমি ১০ লাখ ৩৬ হাজার হেক্টর (আবাদযোগ্য জমির ৮৯.৩০%)। প্রায় ১০লাখ ৬২ হাজার কৃষক পরিবার উপকৃত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠান থেকে। গ্রামীন জনসাধারণের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ১ হাজার ৫৯২টি ওভারহেড ট্যাংক স্থাপন করা হয়েছে।
নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলার তাঁতইর গ্রামের বাাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ (৩৮) বলেন, তার এলাকায় গভীর নলকুপ, সৌর শক্তি চালিত এলএলপি, খাস মজা খাল পুনঃখনন, খাবার পানি সরবরাহের জন্য ওভারহেড ট্যাংক নির্মাণ, বনায়নসহ বিভিন্ন কাজ কাজ পরিচালনা করছে বিএমডিএ।
গোদাগাড়ী উপজেলার দেওপাড়ার বাসিন্দা আতাউর রহমান (৫০) বলেন, চলতি মৌসুম শুরুর দিকে বিএমডিএ-এর পানি ব্যবহার করে কপি চাষ করে ভালো অর্থ উর্পাজন করেছি। আগে আমাদের এলাকায় বছরে একটি ফসল হতো। সেটাও বৃষ্টির পানিতে। একরে ১৫ থেকে ২০ মণ ধান হতো। তবে যেবার বৃষ্টি সময় মতো হতো না সেবার কোনো ফসল ঘরে আসতো না। এখন একরে ৮০ থেকে ৯০ মণ পর্যস্ত ধান হয়। কিছু কিছু জমিতে তিনটির বেশি ফসল হয়।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের স্থাপিত গভীর নলকূপের পানি গম, ধান, শাক-সবজি, আমের বাগানসহ সব ধরনের ফসল উৎপাদনে ব্যবহার হয়। সুপেয় পানিও সরবরাহ করছে এই বিএমডিএ। ১৯৯০ সালের আগেও মরুর মতো ছিল এলাকা। এখন সব পাল্টে সবুজে পরিণত হয়েছে। ১৯৮৫ সালের পূর্বে লাল কংকরময় মাটির উঁচু-নিচু টিলা, ছায়াহীন এক রুক্ষ প্রান্তর বরেন্দ্র অঞ্চল।
বিএমডিএ জানায়, ড. মো. আসাদ উজ জামানের পরিচালনায় প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ১৫টি উপজেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। গভীর নলকূপ স্থাপন ও পুকুর-খাল খননের মাধ্যমে সেচ সুবিধা সৃষ্টি করা, বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে মরু প্রক্রিয়া রোধ করা এবং উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করা ও যাতায়াতের জন্য ফিডার রোড নির্মাণ করা ছিল এ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। সময়ের স্বল্পতা, অর্থায়নের প্রতিকুলতাসহ নানাবিধ প্রশাসনিক জটিলতায় প্রকল্পের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়, কিন্তু অল্প সংখ্যক হলেও উল্লেখিত কার্যক্রমসমূহ এ এলাকার মানুষের মনে বিরাট আশার আলো জাগায়। বরেন্দ্র এলাকার বিরানভূমিতে সোনালী ফসলের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে পরবর্তীতে সমগ্র বরেন্দ্র এলাকার উন্নয়নের জন্য ১৯৯২ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী, নওগাঁ ও চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সকল (২৫টি) উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিএমডিএ নামে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়। ১ হাজার ৮৯৪ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত। যাদের মধ্যে ১৯৪ জন সহকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী রয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়নে এগিয়ে চলেছে এক সময়ের বেসরকারি ভাবে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি।