প্রথমবারের মতো যাত্রী নিয়ে যমুনা রেলসেতু পার হলো ট্রেন

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: যমুনা রেলসেতু দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যমুনা বহুমুখী সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেল।
বুধবার সকাল ১১টা ১৮ মিনিটে রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা সিল্কসিটি ট্রেন যমুনা রেলসেতু পারাপারের মধ্যদিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। মাত্র ছয় মিনিটে ট্রেনটি সেতু পার হয়। ট্রেনের গতিবেগ ছিল প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়য়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ বীরবল মন্ডল জানান, প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক ট্রেন যমুনা রেলসেতু পার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সিডিউল অনুযায়ী বাকি ট্রেনগুলো যাবে। এখন থেকে নিয়মিত যমুনা রেলসেতু দিয়েই ট্রেন চলাচল করবে। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আর ট্রেন চলবে না। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আজাদুর রহমান জানান, রাজশাহী থেকে ৬০০ যাত্রী নিয়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে ১১ বগির ট্রেনটি ছেড়ে গেছে।
এরপর বিভিন্ন স্টেশন থেকে আরও যাত্রী নিয়ে চলে গেছে। যমুনা রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান জানান, দুই লাইনের সেতু হলেও প্রথমে একটি লেন দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। নতুন এ রেল সেতু চালুর সঙ্গে সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে দেশের দীর্ঘতম যমুনা রেল সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে। দেশের এ দীর্ঘতম রেলসেতু দিয়ে বিরতিহীনভাবে কমপক্ষে ৮৮টি ট্রেন দ্রুত গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। ফলে সেতু পারাপারে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় বেঁচে যাবে।
১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ৩ মার্চ যমুনা নদীর ওপর উজানে আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই বছর ২৯ নভেম্বর রেল সেতুটি নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
এরপর ২০২১ সালের মার্চে রেল সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। প্রথমে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় নয় হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশি উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
দেশের বৃহত্তর এ রেল সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। প্রকল্পের শুরুতে এ সেতুর নাম ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। তবে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখা হসিনার সরকারের পতনের পর গত বছরের ডিসেম্বরে সেতুর নাম পাল্টে যমুনা রেল সেতু রাখা হয়।