ঢাকা | ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২৫ - ৪:২৫ পূর্বাহ্ন

জনআকাংক্ষার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার কাঠামো সংস্কারের আহ্বান

  • আপডেট: Wednesday, February 5, 2025 - 8:00 pm

রাজশাহীতে বিভাগীয় সংলাপ

স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতার পর থেকে দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার কারণে এ পদক্ষেপগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।

এক্ষেত্রে প্রশাসনিক দুর্বলতা, আর্থিক সংকট ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের অভাবে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও সক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ ও প্রশাসনিক কাঠামোর সংস্কার করা হলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে ও গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে। তবেই জনআকাংক্ষার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার সংস্কার কার্যক্রম ফলপ্রসূ হবে।

বুধবার রাজশাহী নগরীর একটি কনভেনশন হল-এ ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাংক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক বিভাগীয় সংলাপে অতিথিদের বক্তব্যে এ মতামত উঠে এসেছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গভার্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ক এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন বরেদ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার (বিইউপি) নির্বাহী পরিচালক ও হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ফয়েজুল্লাহ চৌধুরী।

এসময় ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রুলফাও এর নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের ফ্যাসিলিটেটর অনিরুদ্ধ রায়। সংলাপে স্থানীয় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, নারী নেতা, পেশাজীবী, উন্নয়নকর্মী, স্বেচ্ছাসেবক, ছাত্র প্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, দলিত, হিজড়া ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে মতামত তুলে ধরেন।

সংলাপের মূল প্রবন্ধে অনিরুদ্ধ রায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার ছয়টি প্রধান সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করেন। এগুলো হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, ক্ষমতার অতিকেন্দ্রীকরণ; আর্থিক সীমাবদ্ধতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ; জেন্ডার ও সামাজিক অন্তর্ভুক্তির সীমিত সুযোগ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সংলাপে অংশগ্রহণকারীরা আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সংলাপে যেসব প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়, সেগুলো হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সংখ্যা ৯ বৃদ্ধি করা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে জেলা পরিষদে রূপান্তর করা এবং একজন জেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া; স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীক ছাড়া ও নির্দলীয়ভাবে সম্পন্ন করা, স্থানীয় সরকারের বাজেট বণ্টন কাঠামো নির্ধারণ করা ও রাজস্ব ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ, সব স্তরের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত পরিষদের কাছে কর্মরত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা; ই-গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চালু করা এবং ওয়েবভিত্তিক মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা; স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে একটি স্থায়ী স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন।

আয়োজকেরা জানান, সংলাপে গৃহীত এসব নাগরিক সুপারিশ স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কাছে পাঠানো হবে এবং এসব সুপারিশের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকারব্যবস্থা গঠনের জন্য সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দেবে।

আলোচনা সভা থেকে আরো জানা গেছে- রাজশাহীতে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গভার্নেন্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের আয়োজনে এই বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কর্মরত নাগরিক সমাজের সংগঠন ও নেটওয়ার্ক, স্থানীয় সরকার প্লাটফরম, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত জোট ‘গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম’ ২০০৭ সাল থেকে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে এডভোকেসি ও ক্যাম্পেইন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

এর ধারাবাহিকতায় গভার্নেন্স এডভোকেসি ফোরাম স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের বিভিন্ন স্তরের অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরার উদ্দেশ্যে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক বিভাগীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।