ঢাকা | জানুয়ারী ২৩, ২০২৫ - ৫:১৭ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

পুঠিয়ায় বিলুপ্তির পথে লাঙল দিয়ে হালচাষ

  • আপডেট: Wednesday, January 22, 2025 - 6:52 pm

পুঠিয়া প্রতিনিধি: এক সময় গ্রাম বাংলার কৃষিকাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল গরু-মহিষ দিয়ে হাল চাষ। কৃষকের কাঁধে লাঙল-জোয়াল, গরুর দড়ি ধরে জমিতে চাষ করার দৃশ্য ছিল চিরচেনা।

তবে আধুনিক যান্ত্রিকীকরণের ফলে সেই ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক আবুল মিয়া (৬২)। দীর্ঘদিন ধরে তিনি গরু দিয়ে হালচাষ করে আসছেন।

কৃষক আবুল মিয়া জানান, ১৪ কাঠা জমি চুক্তিতে ৯শ টাকায় হাল চাষের কাজ নিয়েছি। কাজ শেষ করতে প্রায় ৩-৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এখন গরু দিয়ে হাল চাষের চাহিদা নেই বললেই চলে। নিজের কোন জমি নেই, তাই মানুষের অল্প কিছু জমি চুক্তিতে আবাদ করি। অন্য কোন কাজও পারি না, তাই বাধ্য হয়েই এই পেশা ধরে রেখেছি। তিনি বলেন, গরু পালন করাও এখন ব্যয়বহুল। দুইটি হালের গরুর দাম ২ লাখ টাকার বেশি।

এর সঙ্গে ভুসি, ফিড, খড় ও ঘাসের মতো খাদ্য সামগ্রীর দামও বেড়েছে। যেখানে পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর দিয়ে এক বিঘা জমি আধা ঘণ্টায় ৭শ থেকে ৮শ টাকায় চাষ করা যায়, সেখানে গরু দিয়ে চাষ করতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগে এবং খরচ পড়ে ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা।

একই এলাকার জমি জসিম হোসেন (৪৫) বলেন, আমার উঁচু-নিচু জমিতে পাওয়ার টিলার অথবা ট্রাক্টর পৌঁছানো কঠিন, তাই গরু দিয়ে হাল চাষ করি। এছাড়া গরু দিয়ে চাষ করলে জমির ঘাস কাঁদার নিচে পড়ে যায়, যা পচে জমির উর্বরতা বাড়ায়। কিন্তু ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করলে ঘাস ওপর ভেসে থাকে এবং ঘাস মারার বিষ দিয়েও পুরোপুরি ঘাস মারা যায় না, ফলে বাড়তি খরচ হয়।

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ স্মৃতি রানী সরকার জানান, যদিও যান্ত্রিক চাষে উৎপাদন দ্রুত হয়, তবু প্রাকৃতিক পদ্ধতির উপকারিতা উপেক্ষা করা যায় না। মূলত মেকানিজমের কারণে গরু দিয়ে হাল চাষ আজ বিলুপ্তির পথে।

গরু দিয়ে চাষ করলে মাটির গভীর অংশ আলগা হয় এনং গরুর পায়ের চাপে কাদা তৈরি হয়। গোবর জমির উর্বরতা বাড়ায়। এছাড়াও গরু-মহিষ দিয়ে লাঙল জমির আইলের পাশের জায়গাটাও ভালোভাবে চাষ করা যায়, যা ট্রাক্টর দিয়ে সম্ভব নয়।

জমির কোনা গুলো ফাঁকা থাকলেও গরুর লাঙল দিয়ে চাষ করলে তা পূরণ করা সম্ভব। তাইতো আবুল মিয়ার মতো কিছু মানুষ এখনো জীবিকার তাগিদে এই ঐতিহ্যবাহী গরু দিয়ে হালচাষ পদ্ধতি ধরে রেখেছেন, যা কৃষি ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।