ঢাকা | নভেম্বর ২৭, ২০২৪ - ১২:২০ পূর্বাহ্ন

বাদাম চাষ লাভজনক হওয়ায় পদ্মার চরে বেড়েছে আবাদ

  • আপডেট: Tuesday, April 5, 2022 - 10:48 pm

স্টাফ রিপোর্টার: পদ্মার চরে বছরে দুইবার চাষ হচ্ছে বাদামের। পতিত জমি, আর চাষাবাদে খরচ কম হওয়ায় প্রতিবছর বাড়ছে বাদামের চাষ। এবছর পদ্মার দুই চরে ৩শ’ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে।

জানা গেছে, কৃষকদের আগ্রহ আছে বাদাম চাষে। কিন্তু এতদিন তারা পদ্মার চরে পুরানো জাতের বাদাম চাষ করতো। তাতে তেমন ফলন হতো না। বাদাম চাষ লাভজনক করতে বিএমডিএ বারি-৯ জাতের বাদামের (চিনা বাদাম) বীজ কৃষকদের সরবরহ করেছে। চাষাবাদে লাভজনক হওয়ায় গেল দুই বছরের ব্যবধানে বাদাম চাষের জমি বেড়েছে ১২০ বিঘা। যদিও বিএমডিএ গেল তিন বছর ধরে বাদামের বীজ সরবরহ করে আসছে কৃষকদের মাঝে। যার সুফল পাচ্ছে চাষিরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাজশাহীর পদ্মার চরে বেশ কিছু পতিত জমি রয়েছে। সেই জমিগুলো বাদাম চাষের উপযোগী। বিএমডিএ চাষীদের বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উন্নত জাতের বীজ সরবরহ করেছে। ফলে একসময় পড়ে থাকা পতিত জমিতে এখন বাদাম চাষ হচ্ছে বছরে দুই বার। একটি রবি মৌসুম অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল ও খরিপ-১ মে থেকে আগস্ট মাস। বাদাম চাষে একদিকে স্থানীয় কৃষকরা লাভোবান হচ্ছেন এবং অন্যদিকে এই অঞ্চলের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখছে পদ্মার চরের বাদাম।

বাদাম চাষী মতিউর রহমান জানান, ‘বাদাম চাষে খরচ কম। পদ্মার পতিত জমিতে ভালো চাষ হয়। বারি-৯ জাতের বাদামের ফলন ভালো, দানাও ভালো। এবছর আমি ৭ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। আগে আমরা যে জাতের বাদাম চাষ করতাম তাতে ফলন কম হতো। কিন্তু এই বাদামে ফলন ভালো।’

বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী জিন্নুরাইন খান জানান, বর্তমানে পদ্মার চরে পবার হরিপুরের মাঝারদিয়াড় ও চর মাঝারদিয়াড়ে বারি-৯ জাতের বাদাম চাষ হচ্ছে। এই বীজ চাষীদের সরবরহ করা হয়। এই বীজ বর্তমান সময়ে অধিক ফলনশীল ও লাভজনক। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের দিকে ১৪৫ কেজি বাদামের বীজ পদ্মায় চাষের জন্য ১৩ জন কৃষককে দেওয়া হয়। সেই বছর ভালো ফলন হয়েছিল। এর পরের বছর ৩০০ কেজি বাদামের বীজ দেওয়া হয় আরো ১৫ জন কৃষককে। সর্বশেষ চলতি বছরে ২০০ কেজি বাদামের বীজ দেওয়া হয় ৯ জন কৃষককে। পদ্মার পতিত চরের জমিতে কৃষকরা এই বাদামের চাষ করেছে। ফলনও ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, এক বিঘা জমিতে বাদাম চাষের খরচ হয় ৭ হাজার টাকা। তাতে বিঘায় ফলন হয় ৮ মন। আর হেক্টর প্রতি ফলন ৬০ মন। সবখরচ বাদ দিয়ে কৃষকের লাভ হচ্ছে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা। বর্তমানে ৩৭ জন কৃষক বিএমডিএ এর দেওয়া বীজের বাদাম চাষ করছে।

রাজশাহী কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান জানান, রাজশাহী জেলায় এবছর ৩৭৮ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বাঘায় সবচেয়ে বেশি। এই উপজেলায় ৩২৭ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। এছাড়া পবায় ৩০ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৭ ও বাগমারায় ১০ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। তিনি বলেন- গেল বছর প্রণোদনা থাকায় জেলায় বাদামের চাষ বেশী হয়েছিল। সেই বছর ৪০৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। তবে এবছর প্রণোদনা না থাকলেও তুলনামূলক বেশি জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

বিএমডিএর চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান জানান, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চান কৃষিতে যেন কোন অঞ্চল পিছিয়ে না থাকে। সেজন্যই প্রতিনিয়ত তিনি কৃষিক্ষেত্রে কিভাবে উন্নয়ন করবে সেজন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় চরাঞ্চলের মানুষ আগে যেখানে কোন ফসল ফলাতে পারত না, সেখানে বিএমডিএ’র মাধ্যমে পদ্মার চরে বিভিন্ন চাষবাদ করা সম্ভব হচ্ছে। আর এসব কৃষকদের মাঝে বিএমডিএ উন্নত জাতের বাদামের বীজ সরবারহ করায় এখন বাদাম চাষে বেশ লাভবান এবং দিন দিন এর উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে চরাঞ্চলে মানুষের জীবন-জীবিকার মানের উন্নয়ন হচ্ছে।