পথে বন্ধ হবে না রেলের ইঞ্জিন
স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে পঞ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ইঞ্জিন সংকট কাটতে যাচ্ছে। পশ্চিম রেলের বহরে যুক্ত হচ্ছে একেবারেই নতুন লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৬টি ইঞ্জিন এসেছে পশ্চিমের জন্য। এরমধ্যে সাতটি বুঝে পেয়েছে পশ্চিম রেল কর্তৃপক্ষ। পর্যায়ক্রমে ৪০টি ব্রডগেজ ইঞ্জিন আসবে পশ্চিমে। হাজার কোটি টাকায় কেনা হচ্ছে এসব।
গেল বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি নতুন ইঞ্জিন রাজশাহী ঘুরে গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় নতুন ইঞ্জিনটি প্রথমবারের মতো রাজশাহী স্টেশনে ট্রায়ালের জন্য নিয়ে আসা হয়। ঝকঝকে নতুন ইঞ্জিনটি স্টেশনে দেখে অনেকেই এর সাথে ছবি তুলতে থাকেন। এরপর দুপুর সোয়া দুইটার দিকে ইঞ্জিনটি আবার ফেরত যায় ঈশ্বরদী জংশনে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলে এখন ৯২টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ চলে। ইঞ্জিনের আয়ুষ্কাল ২০ বছর ধরা হলেও ৪০-৫০ বছর বয়স হয়ে গেছে কোন কোন ইঞ্জিনের। ৯২টি ইঞ্জিনের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে ৪৩টির। এরমধ্যে ১৭টি ইঞ্জিনের বয়স ৫০ বছরেরও বেশি। আর ১৪টি ইঞ্জিনের বয়স ৪০ বছরের বেশি। অন্য ১২টি ইঞ্জিনের বয়স ৩০ বছরের বেশি। বাকি ৪৯টি ইঞ্জিনের বয়স ২০ বছরের কম।
রেলের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। এগুলো চলতে চলতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় ট্রেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয় যাত্রীদের। মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরনো ইঞ্জিনের কোন যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে খুঁজেও পাওয়া যায় না। রেলের প্রকৌশলীদেরই স্থানীয়ভাবে এসব যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয়। তবে এসব যন্ত্রাংশ আর আগের মত কাজ করে না। এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান প্রগ্রেস রেল লোকোমোটিভ ইনকরপোরেশনের সঙ্গে ৪০টি নতুন বিজি ইঞ্জিন কেনার চুক্তি করা হয়।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে। প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম ২৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ৪০টি ইঞ্জিনের দাম পড়ছে ১ হাজার ১২৩ কোটি টাকা। ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশন উন্নয়ন (রোলিং স্টক সংগ্রহ)’ প্রকল্পের আওতায় ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে সবকটি ইঞ্জিন দেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অত্যাধুনিক এসব ব্রডগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিনগুলোর ক্ষমতা ৩ হাজার ২৫০ বিএইচপি হর্সপাওয়ার। ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে সক্ষম ইঞ্জিনগুলো। প্রতিটি ইঞ্জিনের এক্সেল লোড ১৮ দশমিক ৮ টন। নতুন ইঞ্জিনগুলোর সামনে ও পেছনে লাগানো রয়েছে সিসি ক্যামেরা। চালকের বসার স্থানে আছে এসি। রাতে আলোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে এলইডি লাইট। আগামী পাঁচ বছরে ইঞ্জিনগুলোর কোন ত্রুটি হওয়ার কথা না। তবে যে কোন ত্রুটি হলে তা দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিটি ইঞ্জিনের সাথে একজন করে লোক দিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘মোট ৪০ ইঞ্জিনের মধ্যে ১৬টি দেশে এসেছে। এরমধ্যে সাতটি ইঞ্জিন আমরা বুঝে পেয়েছি। অল্প সময়ের মধ্যে আরও নয়টি বুঝে পাব। এখন আমরা পুরনো তিনটি ইঞ্জিন বসিয়ে দেব। নতুন তিনটি ব্যবহার শুরু হবে। নতুন ইঞ্জিনগুলো কোন ট্রেনে দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে কিছু ইন্টারসিটিতে দেব। কিছু মালগাড়িতেও সংযুক্ত হবে। যেহেতু মালগাড়ি টানতে অনেক শক্তিশালী ইঞ্জিন প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘সবগুলো ইঞ্জিন আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যেই আমরা বুঝে পাব। তখন খারাপগুলো বসিয়ে দেব। তাহলে আগে যেমন ট্রেন ট্র্যাকে পড়ে থাকত, এখন সেটা হবে না। সমস্যা থেকে আমরা রেহাই পাব। যাত্রীসেবার মান বাড়বে। এই ইঞ্জিনগুলো এখন আমাদের ট্র্যাকে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে এর সক্ষমতা আরও বেশি। আরও গতি পাওয়ার জন্য লাইনের সংস্কার প্রয়োজন। ধীরে ধীরে এই সংস্কার কাজও এগিয়ে চলছে।’