ঢাকা | নভেম্বর ২৬, ২০২৪ - ৯:৫০ অপরাহ্ন

ডায়রিয়া রোগী জন্য শয্যা নেই!

  • আপডেট: Friday, April 1, 2022 - 11:33 pm

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। গত একমাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এক হাজার ৬৩৫ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের তথ্য বলছে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে ধীরে ধীরে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে হাসপাতালে গিয়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা শয্যা পাচ্ছেন না। ওয়ার্ডের ভেতর মেঝেতেও তাদের থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। ডায়রিয়া রোগীদের থাকার স্থান হচ্ছে ওয়ার্ডের বাইরে একেবারে মানুষের চলাচলের রাস্তায়। সেখানে বৈদ্যুতিক পাখা না থাকার কারণে গরমে নাজেহাল হচ্ছেন রোগীরা। এ সব রোগীদের ভরসা হাতপাখা।

রামেক হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মার্চ এখানে ২২ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। এরপর ৬ তারিখ পর্যন্ত যথাক্রমে ২৭, ২৮, ২৬, ২০ ও ২৬ জন রোগী ভর্তি হন। ৭ মার্চ ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জন হয়। এরপর ১৬ মার্চ পর্যন্ত যথাক্রমে ৩১, ৩৯, ৩৮, ৩৪, ৩০, ৪০, ৪৩, ৪৮ ও ৪৫ জন করে রোগী ভর্তি হন।

এরপর ১৭ মার্চ একদিনে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ৫০ জন ছাড়ায়। ১৭ ও ১৮ মার্চ ভর্তি হন ৫২ জন করে রোগী। ১৯ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন যথাক্রমে ৫৮, ৬২, ৫৯, ৭২, ৮০ ও ৮২ জন ভর্তি হন। ২৫ মার্চ রোগী বেড়ে হয় ৯০ জন। এরপর ২৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রোজ ভর্তি হন যথাক্রমে ৮৮, ৯৯, ৭৪, ৯৩, ৬১ ও ৭৮ জন। গোটা মার্চ মাসে রামেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা হয় এক হাজার ৬৩৫ জন।

বৃহস্পতিবার সকালে ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক রোগীর মায়ের সঙ্গে হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বাগবিতণ্ডা চলছে। ওই রোগীর মা ওয়ার্ডের ভেতর মেঝেতে বিছানা পাতায় এই বাগবিতণ্ডা। পরিচ্ছন্নতাকর্মী কোনভাবেই ওয়ার্ডের ভেতর ডায়রিয়া রোগী রাখতে দেবেন না। দায়িত্বরত একজন নার্স এসে ওই রোগীর মাকে বললেন, ‘হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসা করতে হবে না। আপনি রোগী বাড়ি নিয়ে চলে যান।’ ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী বললেন, ‘জায়গা নষ্ট হলে কি আপনি পরিস্কার করবেন? আমাকেই করতে হবে।’ শেষ পর্যন্ত ওই রোগীকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোর বাইরে চলাচলের রাস্তায় এখন ডায়রিয়া রোগীর চাপ। নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার আখি খাতুন (১৮) নামের এক রোগীর দাদি হাজেরা খাতুন বললেন, ডায়রিয়ার কারণে বুধবার দুপুরে তিনি আখিকে ভর্তি করেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত চারটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তারপর রোগী একটু ভাল হয়েছে।

১০ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দায় সাড়ে তিন বছরের শিশু আলিফকে নিয়ে বসেছিলেন নগরীর ছোটবনগ্রাম এলাকার হাসি খাতুন। তিনি বললেন, ‘পানির মত শুধু নেমে যাচ্ছে। ছোট বাচ্চাটা কাহিল হয়ে পড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় পাঁচটা স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। তাও কমেনি। স্যালাইনের স্ট্যান্ড ধরেই একটু পর পর বাথরুমে নিয়ে যেতে হচ্ছে।’

র‌্যাব-৫ এর অফিসের কর্মচারী মাসুদ রানা ভর্তি ছিলেন হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার সকালে বারান্দায় শুয়ে তিনি বললেন, ‘দুদিন আগে বাইরে শুধু এক বাটি চটপটি খেয়েছিলাম। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে। গতকাল একদিনে ১৫-২০ বার বাথরুমে গেছি। আজ সকাল থেকে ৭-৮ বার হয়ে গেছে। আরাম পাচ্ছি না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী দুলাল হোসেনও শুয়ে ছিলেন একই বারান্দায়। তিনি বললেন, ‘একটু পর পর পাতলা পায়খানার পাশাপাশি বমিও হচ্ছে। ভোররাতে ভর্তির পর থেকেই স্যালাইন চলছে। একটা হাসপাতাল দিয়েছে, চারটা কিনতে হয়েছে। এখানে ফ্যান থাকায় সমস্যা হচ্ছে। বন্ধুরা হাতপাখায় বাতাস করছে।’

রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক মাহাবুবুর রহমান বাদশা বলেন, ‘শীত থেকে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম এসেছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগীও তত বাড়ছে। তৃষ্ণা মেটাতে মানুষ বাইরের বিভিন্ন ধরনের পানীয় কিংবা শরবত খাচ্ছেন। এর ফলে তারা পানিবাহিত এই ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’

হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘মার্চের মাঝামাঝি থেকে রোগী খুবই বেশি হচ্ছিল। দু’একদিন ধরে একটু কমছে। রোগী আরও বাড়বে নাকি কমবে তা বলা যাবে না। তবে চিকিৎসার জন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।’