চাঁপাইয়ে ড্রেন হবে ২৫০ মিটার, গাছ কাটা হয়েছে ৩ কিলোমিটার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ডাবলু কুমার ঘোষ: মাত্র ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের সুযোগে ৩ কিলোমিটার সড়কের দু’পাশের গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে।
১৯৮৭ সালে গাছগুলো রোপণ করে বিএমডিএ। গাছ কাটা বন্ধে চিঠি দেয়ার পরও; নিয়ম বার্হিভূতভাবে জেলা পরিষদের বিরুদ্ধে গাছ বিক্রির অভিযোগ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর।
এরই মধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে শত শত গাছ। আর তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে রুক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক তাজা গাছ কেটে ফেলার সমালোচনা করেছেন স্থানীয়রা।
অভিযোগে প্রকাশ, অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে যখন গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি দেশব্যাপী তুমুলভাবে আলোচনা-সমালোচনায়; ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের কেন্দুল থেকে আমনুরা জুটমিল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের এই গাছগুলোতে কোপ পড়েছে কুড়ালের।
এরই মধ্যে রাস্তার দুই পাশে শিমুল, কড়াই, অর্জুন, শিশুসহ নানা প্রজাতির শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা গাছের গুড়ি পড়ে আছে সড়কের দুই পাশে। ঠিকাদারের লোকজন কেটে ফেলা সেই গাছ নিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, সড়কটির একপাশে সওজের ২৫০ মিটার একটি ড্রেন নির্মাণ হবে। এ জন্য সওজ এক পাশের ওই পর্যন্ত গাছগুলো কেটে নিতে অনুরোধ জানায় জেলা পরিষদকে। অথচ ড্রেন নির্মাণের সুযোগে গাছ কাটা হয়েছে সড়কের দুই পাশের ৩ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে।
ঝিলিম ইউনিয়নের কাজী নজরুল ইসলাম জানান, ২৫০ মিটার ড্রেন নির্মাণের স্থাসে ৫/৬ টি গাছ কর্তন করলে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্দু রাস্তার দুধারে ৩ কিলোমিটার জুড়ে ২৫৮টি গাচের স্থলে শত শত তাজা গাছ কেটে ফেলা আমাদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছে। কেন না এত খরা এবং তাপদাহে এই বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষজন যখন অতিষ্ঠ তখন, এত বিপুল সংখ্যক তাজা গাছ কেটে ফেলা অপরাধমূলক মনে করি।
কেন্দুল গ্রামের শীষ মোহাম্মদ জানান, ৩০-৪০ বছরের বিশাল এবং পুরাতন শিমুল, কড়াই, অর্জুন, শিশুসহ নানা প্রজাতির শত শত তাজা গাছ এই রাস্তায় যাতায়াতকারী রিকশা-ভ্যানসহ পথিকরা শীতল ছায়ায় অনেক তৃপ্তি এবং মন জুড়িয়ে নিতো। কিন্তু এখন গাছ না থাকায় মানুষের ভিশন অসুবিধা হবে। আর জেলা পরিষদ, ঠিকাদাররা খুব প্রভাবশালী হওয়ার কারনে এত গাছ ব্যাপারে কেউ তেমন প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় নি।
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে বিপুল সংখ্যক তাজা গাছ কেটে ফেলার সমালোচনা করেছেন ঝিলিম বাজারের মুদি দোকানদার আজিজুল হক উজ্জ্বল। নির্বিচারে গাছ কাটার কারনেই প্রকৃতিতে দেখা দিয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।
জেলা পরিষদ যদি রাস্তা বগ বা কোন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য গাছ কাটলে হয়তো এলাকাবাসী মেনে নিতো কিন্তু, জেলা পরিষদ ১৫ টি মরা গাছ কর্তনের নিলাম দিয়ে শত শত বিশাল আকারের গাছ কাটা মানে, আমাদের মনে পেরেগ মেরে দিয়েছে। আমরা এলাকাবাসী তাজা গাছ কর্তনের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।
ঠিকাদার আখতার হামিদুজ্জামান খোকন বলেন, একটি লটে ৫০টি গাছ নিলামের মাধ্যমে নিয়েছি। আর জেলা পরিষদের নম্বর দেয়া গাছ তারা কেটেছে, তবে তাজা গাছ কাটার ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিএমডিএ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আল মামুনুর রশিদ জানান, ১৯৮৭ সালে গাছগুলো বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রোপণ করে। অথচ গাছ কাটা বন্ধে বিএমডিএ, জেলা পরিষদকে চিঠি দিলেও; তাদের না জানিয়েই নিয়ম বর্হিভূতভাবে এসব গাছ নিলাম করেছে জেলা পরিষদ। বিষয়টির ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী খান জানান, ড্রেন হবে ২৫০ মিটার; সেটাও রাস্তার এক পাশে। রাস্তার দুইপাশে কেন জেলা পরিষদ গাছ কেটেছে; এ বিষয়ে তাদের জানা নেই।
এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফাজ উদ্দিন জানান, উন্নয়নের আড়ালে কোন সুযোগ নেয়নি তারা। তবে, বিএমডিএ’র মালিকানার বিষয়ে যথাযথ প্রমান দিতে পারলে অংশীদারীত্বের হিস্যার আশ্বাস দেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, নিয়ম বর্হিভূতভাবে কোন কিছুই করা হয়নি। তবে, তাজা গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ আমনুরা থেকে কেন্দুল সড়কের ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ২৫৮টি গাছ টেন্ডারের মাধ্যমে ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
সোনালী/জেআর