ঢাকা | নভেম্বর ২৫, ২০২৪ - ১১:৪৩ অপরাহ্ন

রাজশাহীতে জমেছে ঈদ বাজার

  • আপডেট: Wednesday, April 3, 2024 - 12:00 am

জগদীশ রবিদাস: ঈদের আর সপ্তাহখানেক বাকি। আসন্ন এ উৎসবকে ঘিরে রাজশাহীতে জমে উঠতে শুরু করেছে কেনাকাটা। ইতিমধ্যেই নতুন জামা কাপড় কিনতে নগরীর ছোট-বড় বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মলসহ ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে ভিড় বেড়েছে মানুষের। পিছিয়ে নেই শহরের বিভিন্ন ফুটপাতের বেচাকেনাও। একটু কম দামে পছন্দের পোশাকের সন্ধান পেতে সেখানেও ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ। সবমিলে জমে উঠেছে ঈদের বাজার।

এদিকে আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যের নানা ইতিবাচক সূচকে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এর ছোঁয়া পেয়েছে রাজশাহীও। ঈদের সামগ্রিক বাজার ঘিরে এবার ভালো বাণিজ্যের আশা করছেন নানা স্তরের ব্যবসায়ীরা। রাজশাহীর ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এবারের ঈদবাজারে সবমিলে আট’শ থেকে এক হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে।

অন্যদিকে ঈদ ঘিরে জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার জানিয়েছেন, জন নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে এবং সন্ধ্যার পর রাজশাহী মহানগরীর গণকপাড়া, সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেটসহ কাপড় পট্টি ঘুরে ক্রেতাদের ভালো উপস্থিতি দেখা গেছে। ক্রেতা টানতে মার্কেটগুলো সেজেছে রঙিন সাজে। সাহেব বাজার ও আরডিএ মার্কেট সংলগ্ন রাস্তার দু’পারের ফুটপাতেও দেখা গেছে মানুষের ভিড়। বেচাকেনা জমে ওঠায় এসব এলাকায় ঠিকমতো হাঁটার জায়গাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফুটপাতগুলোতে নানা রকম ভ্যান ও ছোট চকিতে শার্ট-প্যান্ট, পাঞ্জাবি-পায়জামা, টিশার্ট বেশি বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে ছোট-বড় সাইজের জুতা, ছোট বাচ্চাদের কাপড়গুলোও ভালো বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে শহরের নিউমার্কেট, থিম ওমর প্লাজা, সারা শপিং মল, আড়ং শপিং মল, ইজি, রিচ ম্যানসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের শো রুমগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। এসব শো রুমে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভিড় থাকছে মানুষের।

এবারের ঈদে মানুষের মধ্যে শুতি কাপড়ের চাহিদা একটু বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে মেয়েদের কাছে এবার ভারতীয় নায়রা সায়রা, কাস্মী বুটিক্স, পাকিস্থানি বুটিক্স, নূরজাহান বুটিক্স, আলিয়া কাট, লারারা, সারারা, পুস্পা, বারিশ, আগারনুর, আর আর জাতীয় পোশাকের চাহিদা বেশি।

অপরদিকে এবারের ঈদে ছেলেদের জন্য বাহারি পাঞ্জাবিসহ গ্যাবাডিন ও জিন্স প্যান্ট রয়েছে চাহিদার শীর্ষে। পাশাপাশি কালারফুল শার্ট, চেক শার্ট, এক কালারের শার্টও পছন্দের তালিকায় রেখেছেন বিভিন্ন বয়সি ছেলেরা। সরেজমিন দেখা গেছে, মার্কেটের ভিতরে চলছে বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক আর ক্রেতাদের দামাদামি। তবে গতবারের তুলনায় এবার পোশাকের দাম বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ক্রেতা।

গণকপাড়া মার্কেটে ক্রেতা রুনা আহমেদ বলেন, গত বারের তুলনায় এ বছর পোশাকের দাম একটু বেশি। এ বছর প্রতিটি থ্রি পিসের ৪ থেকে ৬ শত টাকা দাম বেড়েছে। একই পোশাক একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে। মোরসালিন শেখ নামের আরেক এক ক্রেতা বলেন, আরডিএ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের বেশি দাম চাওয়ার কিছুটা অভ্যাস আগে থেকেই আছে। তাদের কাছ থেকে পোশাক দামাদামি করেই কিনতে হয়। যেমন একটি শার্টের দাম চাইল দুই হাজার। দামাদামি করে সেটি কিনলাম ৯০০ টাকায়। তারা জানে ঈদের সময় সাধারণ মানুষ এখানেই মার্কেট করতে আসেন। সেজন্য তারা শুরুর দিকে গলাকাটা দাম বলে দেন।

অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিল, দোকান ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার সবকিছুই সমন্বয় করতে হচ্ছে কাপড়ের দামে। সেজন্য অন্য বছরের তুলনায় এবার দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোন বিকল্প কোন বুদ্ধি নেই।

এদিকে গত চার বছরের মধ্যে প্রথম দুই বছর কেটেছে করোনা মহামারির মধ্যে। মহামারি কেটে যাওয়ার পরের বছরও ঈদবাজার সেভাবে জমেনি। তবে গত বছর ব্যবসায়ীরা মোটামুটি ব্যবসা করেছিলেন। তবে এবারের চিত্রটি একটু ভিন্ন। ব্যবসা-বাণিজ্যের নানাবিধ ইতিবাচক সূচকে ঈদ ঘিরে চলতি বছর ভালো বাণিজ্যের আশা আছে ব্যবসায়ীদের। এবার প্রথম রোজা থেকেই ঈদবাজার জমে উঠেছে।

রাজশাহী ব্যবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দোর আলী বলেন, রাজশাহীতে এবার প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মার্কেট আছে। বেচাকেনা যেহেতু ভালো হচ্ছে; আশা করা যায় এবার ৮০০ থেকে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতেই পারে।

সেকেন্দোর আলী আরও বলেন, মূলত বিশ রোজার আগে মানুষ মার্কেটে আসলেও অনেকে পছন্দ বা দেখার জন্য বেশি আসেন। কিন্তু বিশ রোজার পরে যারা মার্কেটে ভিড় করছেন; তারা কেনাকাটার উদ্দেশ্যেই আসছেন। দেখতে পাচ্ছি- ঈদের কেনাকাটা বেশ জমে উঠেছে। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে।

গতবারের তুলনায় এবারে পোশাকের দাম খানিক বেশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত; মানুষের চিন্তাধারা এবং রুচিবোধ দুটোই পাল্টেছে। মানুষ এখন ব্র্যান্ডের পোশাক পড়তেই বেশি ভালোবাসেন। যে কারণেই শহরের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুম গুলোতে ব্যাপক ভিড়। সুতরাং জিনিস একটু ভালো কিনতে গেলে দামটাও একটু বেশি পড়বে এটিই স্বাভাবিক। দ্বিতীয়ত; যারা পোশাকের ব্যবসা করেন, তারা ঢাকা থেকে পাইকারি মূল্যে কিনে এনে এখানে বিভিন্ন মার্কেট বা ফুটপাতে বিক্রি করেন। এখন যারা ঢাকা থেকে পাইকারি দরে কিনে আনছেন, তারা যে রেটে কিনছেন নিশ্চয়ই সেখানে কিছু টাকা লাভ করেই তাকে বিক্রি করতে হবে। সুতরাং এবারে পোশাকের দাম একটু বেশির এটিও গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

এদিকে নগরবাসী যেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, বিপিএম।

তিনি বলেন, শহরে ঈদের কেনাকাটাকে কেন্দ্র করে জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঈদ ঘিরে মানুষ রাত পর্যন্ত কেনাকাটা করছে। সেটিকে মাথায় রেখে শহরের প্রত্যেকটি মার্কেট ও শপিংমলগুলোর সামনে পুলিশ বস্ক বসানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, যানজট এরাতে দিনের পাশাপাশি দীর্ঘ রাত পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। নগরজুড়ে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সিভিল ড্রেসেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্নভাবে কাজ করছে। এছাড়াও সাধারণ মানুষ কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরার পথে যেন কোন ক্ষতি বা ছিনতাই না হয়, এর জন্যও আইনশঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আতশবাজি ও পটকা ব্যবহার করে মানুষের জানমালের যেন ক্ষতি না হয়, সেটিও রোধেও পুলিশ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ঈদের আগে আতশবাজি ও পটকা তৈরীর বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করার ব্যাপারেও পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যেই পটকা তৈরীর এক বস্তা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। সর্বোপরি নগরবাসী যেন স্বাচ্ছন্দে ঈদ উদযাপন করতে পারেন; তার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে যা-যা করণীয় সবকিছুই করা হচ্ছে এবং হবে।। পাশাপাশি ঈদে যারা শহর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে শহরে আসবেন, তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও পুলিশের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

সোনালী/জেআর