কোন্দল নিরসনে কঠোর বার্তা আওয়ামী লীগের
অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগের মাঠের কোন্দল নিরসনে বৈঠকে মিলল দ্বন্দ্বের ভয়াবহ চিত্র। গতকাল সকালে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের দলীয় নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বৈঠক হয়। এতে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এমপিদের সঙ্গে স্থানীয়দের একাংশ এবং কেন্দ্রীয় নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে জেলা নেতাদের অনেকের দ্বন্দ্বের চিত্র উঠে এসেছে।
তবে বৈঠকে বলা হয়েছে, এখন আর কোনো কোন্দল রাখা যাবে না। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে নেতাদের। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলা নেতাদের ঢাকায় ডেকে বৈঠক করে দ্বন্দ্ব নিরসনে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া উভয় পক্ষকেই মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ধারাবাহিকতায় গত শনিবার রংপুর ও গতকাল রবিবার চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
গতকালের বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়েশা খান, ধর্ম সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য আনিসুর রহমান প্রমুখ।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা-মহানগরের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় ও স্বতন্ত্র এমপিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে চাঁদপুরের নেতারা এক কেন্দ্রীয় নেত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন। কুমিল্লা উত্তর আওয়ামী লীগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তার জের এখনো শেষ হয়নি। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন জট নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিভক্তি, নেতৃত্বের কোন্দল, কমিটি গঠন নিয়ে সমস্যাসহ অভ্যন্তরীণ সমস্যা মেটাতে তৃণমূলের প্রতি কঠোর বার্তা দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।
ব্যক্তিগত বা উপদলীয় কোন্দলের কারণে কোনো পর্যায়েই কমিটি ভেঙে দেওয়া কিংবা পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারসহ গঠনতন্ত্র বহির্ভূত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বা প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে প্রথমে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখেন। এরপর শুরু হয় রূদ্ধদ্বার বৈঠক। তখন জেলা নেতারা বিভিন্ন সংকটের কথা বলেন। সাংগঠনিক চিত্র তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় নেতারা তা মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোন্দল ভুলে যেতে হবে। বিশেষ প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাখা হয়েছিল। তারা আমাদের দলেরই লোক। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে নেত্রীই এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এখন কোনো দ্বন্দ্ব রাখা যাবে না। ঘরের ভিতরে ঘর তৈরি করা যাবে না।
সূত্র জানায়, কুমিল্লার কোন্দল সামনে আনেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ম. রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, জেলায় কোন্দল বিরাজমান। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও উত্তর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছি।
তার জবাবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আবুল কালাম আজাদকে শোকজ দিয়েছে। উনি শোকজের জবাবও দিয়েছেন। বহিষ্কার করার ক্ষমতা জেলার নেই। তার শোকজের জবাবে কেন্দ্র সšুÍষ্ট হলে পদ ফিরে পেতে পারেন, সন্তুষ্ট না হলে অব্যাহতি পেতে পারেন। জেলা আওয়ামী লীগের এখানে কিছু করার নেই। এ সময় তিনি জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের কোন্দলে না জড়াতে নির্দেশনা দেন।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম দুলাল পাটোয়ারি এক কেন্দ্রীয় নেত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, একজন কেন্দ্রীয় নেত্রী যার এমপি হতে হবে। মন্ত্রী হতে হবে। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করবেন না। জেলা নেতাদের কোণঠাসা করে রাখতে সব করবেন। অনেক থানার সম্মেলন হয়েছে। সেই থানাগুলোর কমিটি অনুমোদন আমাদের দিতে দেবেন না। প্রভাব খাটাবেন। আমাদের বিদায় করবেন তারপর কমিটি অনুমোদন করার সুযোগ দেবেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বর্তমান কমিটির অধীনেই জেলার সব উপজেলা কমিটির অনুমোদন হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপজেলাগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করবেন। চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি দ্রুত করার তাগিদ দেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ অনেকটা অগোছালো। এই সংগঠনকে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে চাঙা করতে হবে। এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির বলেন, আমরা অনেকগুলো থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন করেছি। বাকিগুলোর সম্মেলন করেই মহানগরের সম্মেলন করতে চাই। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন কমিটি এসেই ওয়ার্ড-থানার সম্মেলন করবে। জবাবে নাছির বলেন, আমরা প্রস্তুত, আপনারা যখন নির্দেশনা দেবেন, আমরা তখনই সম্মেলন দিতে পারব।
বৈঠক প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেগুলো দ্রুত করার নির্দেশনা দিয়েছি। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ থানা-উপজেলার সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকলে সেগুলো নিরসন করতে বলা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সোনালী/ সা