এবার অভিযুক্ত শিক্ষকের ‘ইন্ধনে’ পরীক্ষা বন্ধ করে তার পক্ষে আন্দোলনে অন্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের মাস্টার্সে আট শিক্ষার্থীর ডিস কলেজিয়েটের ঘটনায় চূড়ান্ত পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
এদিকে পরীক্ষা স্থগিত এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ অভিযোগ করার প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে পরীক্ষার্থী ও অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
অবস্থান কর্মসূচিতে আসা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অভিযুক্ত শিক্ষকের অনুমতি নিয়ে কলেজিয়েট শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার মধ্যে জোর করে আন্দোলনে নিয়ে আসেছে।
আজ রোববার দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। পরে দুপুর ২ টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্রউপদেষ্টার অনুরোধে অনশন কর্মসূচি স্থগিত হয়।
অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম মনির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে টোভেল। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবস্থান কর্মসূচির এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা চলছিল। এর মাঝেই আমাদের ইমা আপু এসে বলে, এই ক্লাস করে কি করবি? ক্লাস না করেও তো পরীক্ষা দেওয়া যায়, চল আন্দোলন করবি, তখন আমাদের স্যারের (অভিযুক্ত শিক্ষক) দিকে তাকিয়ে বলি, স্যার আমরা কি করবো? তখন স্যার বলে, তোমাদের ইচ্ছা তোমরা কি করবা।’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে কাঠের ক্লাস একদিনও করায়নি কিন্তু আজ কাঠের পরীক্ষা দিয়ে দিছে। তাৎক্ষণিক স্যার কথার প্যাটার্ন চেঞ্জ করে বলেন ‘ যাও সমস্যা নাই,, যেভাবে কাজ দিবা ওটা দেখে নাম্বার দেওয়া হবে এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নাই। আমাদের পরীক্ষার মধ্যে আমরা আন্দোলন চলে আসলাম। তারপর আন্দোলন শেষ করে যাওয়ার পর চারটার মধ্যে রুম বন্ধ করে দেয়। তাহলে এখানে (আন্দোলনে) এসে আমাদের যে পরীক্ষার টাইমটা নষ্ট হলো ওটা তো দিলো না।’
কর্মসূচির অন্য বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের টেপিস্ট্রি পরীক্ষা চলতেছে ঐখান থেকে টেনে নিয়ে আসছে আমাদের।’
এর আগে কারুশিল্প ডিসিপ্লিনের মোট ১২ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে আট শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহম্মেদ ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ উপস্থিতি কম দেখিয়ে তাঁদের ডিসকলেজিয়েট করেছেন। এর প্রতিবাদে তাঁরা গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন ও সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন কর্মসূচি পালন করেন।
আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডিসিপ্লিনে চারজন শিক্ষক থাকার পরও সহকারী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহম্মেদ ছয়টি ব্যবহারিক কোর্স নিয়ে থাকেন। সকাল ৯ টার মধ্যে ক্লাসে আসতে বললেও শিক্ষক নিজে ১২ টা থেকে দুপুর ১ টার দিকে আসতেন।
এরপর বিভাগের কনিষ্ট শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের থেকে শুনে ওই শিক্ষক ক্লাসের উপস্থিতি দিতেন। ফলে নির্ধারিত সময়ে ও নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও তাঁরা ডিসকলেজিয়েট হয়েছেন।
তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে চারুকলা অনুষদের ডিন (অধিকর্তা) গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিতব্য মাস্টার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।’
আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীর করা অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে এবার ৪ জন পরীক্ষার্থী এবং ওই ডিসিপ্লিনের অন্যান্য বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।
অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া পরীক্ষার্থী মাহরিন সাদিয়া ইরা বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি আমাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আগের দিন আমাদের জানানো হয় পরীক্ষা হবে না। পরে বিভাগের একাডেমিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরীক্ষা হবে।
আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীর আন্দোলনের কারণে দ্বিতীয়বারের মতো পরীক্ষা স্থগিত হয়। কিন্তু সেটি কোন সংবাদপত্রে আসেনি। আজ পরীক্ষার দিন আমরা চার পরীক্ষার্থী জানতে পারি, আমাদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তখন আমাদের চারজনের ভিতরের মানসিক অবস্থা কি, সেটা শিক্ষার্থীরাই জানে।’
আট ডিসকলেজিয়েট শিক্ষার্থীর করা অভিযোগগুলো মিথ্যা দাবি করে মাহরিন সাদিয়া ইরা বলেন,‘আট শিক্ষার্থীকে বারবার বলার পরেও তারা শুরু থেকে ক্লাসে আসেনি। শিক্ষকরা নিয়মিতই ক্লাস নিয়েছেন।
প্রতি মাসের শেষে শিক্ষার্থীদের থেকে স্বাক্ষরও নিয়েছেন। করোনার কারণে ইতিমধ্যে আমরা দুইবছর পিছিয়ে পড়েছি। তাদের সঙ্গে পুনরায় ক্লাস করতে গেলে আমাদের আরও ছয়মাস লাগবে। আট শিক্ষার্থী একেকজন একেকটা কোর্সে উপস্থিত নাই। এছাড়া আমাদের একেকটা কোর্স ব্যয়বহুল। এখন আর পরীক্ষা পেছানোর পরিস্থিতি নেই।’
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষক ঠিকিই ক্লাস নিয়েছেন। আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার প্রতিবাদে এখানে আপুদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছি।’
অভিযোগের বিষয়ে অস্বীকার করে সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কে আন্দোলনে যাবে আর কে যাবে না, আমি এরকম কোনো কথা বলিনি। আর আপনার যদি কথা বলার প্রয়োজন হয় আপনি সাংবাদিকের আইডি কার্ড নিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে এসে কথা বলেন।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ একাডেমিক কমিটির ওপর নির্ভর করে। আমরা তাঁদেরকে বলেছি, প্রয়োজনে দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন।’
চারুকলা অনুষদের ডিন (অধিকর্তা) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমাদের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত আছে। সেই সিদ্ধান্তই এখনো বহাল আছে।’
সোনালী/জেআর