রাজশাহী মেডিকেলে রোগীর সন্তানকে পেটাল ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
স্টাফ রিপোর্টার: অসুস্থ মায়ের রিপোর্টের তথ্য জানতে চাওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এক যুবককে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার সকালে রাজশাহী মেডিকেলের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে নিজেদের কক্ষের ভেতর ডেকে নিয়ে ওই যুবককে এলোপাথাড়ি পিটিয়েছেন কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক। ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম সুমন পারভেজ। তিনি মহানগরীর বোসপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
সূত্রে জানা গেছে, সুমন পারভেজ তার মা পিয়ারা বেগমকে (৬০) নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরে গতকাল বুধবার সকালে বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কাছে তার মায়ের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে যান।
এসময় রিপোর্ট নিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসকের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। পরে সুমন পারভেজ সেখান থেকে চলে গেলে কৌশলে তাকে ডেকে এক দফা মারধর করা হয়। এরপর মেডিকেলের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক সেখানে এলে সুমন তাকে মারধরের বিষয়ে অবগত করার চেষ্টা করেন। তখন সেই চিকিৎসকের সামনেই আরেক দফায় মারধরের শিকার হন সুমন পারভেজ। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে সুমনকে উদ্ধার করে মেডিকেলের পরিচালকের কক্ষে নিয়ে যান।
সুমনকে দ্বিতীয় দফায় মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া ভিডিওটিতে দেখা গেছে, একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক ওই যুবককে বলেন, ‘মারতে মারতে তোকে শেষ করে দিব। চিনিস তুই আমাদেরকে? চোখ-কান ফাটাবি তুই?’ তখন সুমন পারভেজ বলতে থাকেন, ‘মাফ চাই ভাই, আর মাইরেন না ভাই।’ তখন একজন ইন্টার্ন বলেন, ‘এই ওর চুলডা খোলেন। ন্যাড়া করে দিই।’ তখন ওই যুবক বলেন, ‘স্যার, আমাকে বাহির করে দেন স্যার।’ তখন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘এই তুই বের হবি কেন? তুই না ডাক্তার দেখবি? দ্যাখ।’ যুবক বলতে থাকেন, ‘আমার আম্মু মইরে যাবে স্যার। এ রকম করিয়েন না।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘তোর মা মরবে কি না, সেটা আমরা দেখব।’
এসময় অসুস্থ মায়ের দোহাই দিয়ে সুমন পারভেজকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন। আমার আম্মা জানলে অসুস্থ হয়ে যাবে। আমার আম্মাকে কিছু বইলেন না, প্লিজ। আমার আম্মাকে নিয়ে খুব টেনশনে আছি স্যার। আমাকে যে মেরেছেন, আমার আম্মাকে বইলেন না।’ পরে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলে ওঠেন, ‘তোমার আম্মাকে বলব না। কিন্তু তোমার ব্যবস্থা করতে হবে।’ যুবক বলেন, ‘ব্যবস্থা তো করলেন স্যার।’ ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘করলাম তো। এখন ডিরেক্টর স্যারের কাছে নিয়ে যাব।’ পরবর্তীতে হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যরা গিয়ে সুমন পারভেজকে উদ্ধার করে পরিচালকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে ওই যুবক তার সারা শরীরে মারধরের নানা চিহ্ন দেখান।
এদিকে সুমন পারভেজকে হাসপাতালের মধ্যে এমন অমানবিক নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অতিতের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে কড়া সমালোচনা করতে দেখা যায় নেটিজেনদের। তারা অবিলম্বে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তোলেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালেল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনদের সবার সঙ্গে আমি কথা বলেছি। এক পক্ষের কথা শুনেছি, আরেক পক্ষের কথা শুনবো। একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। সেই কমিটি তদন্ত করবে। পরে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় যিনি দায়ী থাকবেন, তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেডিকেলে থাকা অবস্থায় ভুক্তভোগী যুবক সুমন পারভেজ মারধরের ঘটনা নিয়ে তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বললেও পরে তিনি বলেন, মায়ের রিপোর্টের তথ্য জানতে গিয়ে আমাকে যেভাবে মারা হয়েছে তা ভিডিওতেই আছে। যারা মেরেছে, তাদের সামনে আনলে সবাইকে চিনতে পারবো। আমাকে একটি ঘরের মধ্যে যে যেভাবে পেরেছে, মেরেছে। মারধরের সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকের কেউ বলছে ‘চাকু দে, এর হাত কাট; পা কাট। আমরা বড় ডাক্তার, আমাদের তোরা কি মনে করিস?’ তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, হাসপাতালে একটা ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। এটা হাসপাতালের ব্যাপার। তারপরেও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
সোনালী/জেআর