১৪ দলের কার আসন কত, জানা যাবে কাল
সোনালী ডেস্ক: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের জন্য আওয়ামী লীগ কত আসন ছাড়বে তা জানা যাবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
সোমবার সন্ধ্যায় আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোট শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ব্রিফিং করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলীয় সূত্র জানা গেছে, বৈঠকে তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আসনের তালিকা জমা দিয়েছেন ১৪ দলের শরিকরা। জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সেগুলো বৈঠকে উপস্থাপন করেছেন। তবে, আসন ভাগাভাগির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের পর নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে ১৪ দলের একটি কমিটি গঠনের কথা রয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা চেয়েছেন ৩০৩ জন। পাঁচটি আসনে নৌকার বিপরীতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪৭ জন, সাম্যবাদী দলের ‘চাকা’ প্রতীকে ৬ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ‘কবুতর’ প্রতীকে ১২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ‘বাইসাইকেল’ প্রতীকে ২০ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘হাতুড়ি’ প্রতীকে ৩৩ জন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ‘মশাল’ প্রতীকে ৯১ জন।
প্রায় সবগুলো আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকায় দলটি ১৪ দলের শরিকদের জন্য শেষ পর্যন্ত কতগুলো আসন ছাড়বে, তা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। বর্তমানে ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বলা যেতে পারে ১৪ দলীয় জোটকে। বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় রাজনৈতিক জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ।
শুরু থেকেই এই জোটের সমন্বয়ক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। তাঁর মৃত্যুর পর এ দায়িত্ব পান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। মূলত তিনটি বিষয় মাথায় রেখে গঠন হয় ১৪ দল।
এগুলো হলো জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদাযয়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান; উন্নয়নমূলক কাজের ভিশন এবং সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান। আওয়ামী লীগ ছাড়াও ১৪ দলীয় জোটে থাকা দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি (জেপি), সাম্যবাদী দল, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও তরিকত ফেডারেশন উল্লেখযোগ্য।
২০০৯ সালে এক–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোট মহাজোট ক্ষমতায় আসে। এ সময় ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। টানা দুই মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। আর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গত বৃহস্পতিবার। মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই শেষ হয়েছে সোমবার। যাচাই–বাছাই শেষে ২ হাজার ৭১২ জনের মধ্যে ৭৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আর বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে ১ হাজার ৯৮৫ জনের মনোনয়নপত্র।
তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা যাবে ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।
সোনালী/জগদীশ রবিদাস