ভূমিকম্পে হুড়োহুড়িতে দুই শতাধিক গার্মেন্টসকর্মী আহত
সোনালী ডেস্ক: ভূমিকম্পের কারণে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) তিনটি হলের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ভূমিকম্পে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে দুই শতাধিক গার্মেন্টকর্মী আহত হয়েছেন।
শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে এই ভূকম্পন অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ৫.৬ মাত্রার ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে বলে জানা গেছে।
ভূমিকম্পে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে দুই শতাধিক গার্মেন্টকর্মী আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছুপুয়া এলাকায় অবস্থিত আমির শার্ট গার্মেন্টে এ ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, আহতদের সেবায় আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত কতজন ভর্তি হয়েছেন সেটার সঠিক সংখ্যা বলা যাচ্ছে না। তবে এ সংখ্যা দুই শতাধিক হবে। এ ছাড়া একের পর এক আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
তবে কেউ গুরুতর আহত হয়নি। চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি ত্রিনাথ সাহা জানান, ভূমিকম্পে হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি।
ভূমিকম্পে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের দুইটি ও মেয়েদের একটি হলে ফাটলের দেখা দিয়েছে। হলগুলো – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল। এছাড়া মেয়েদের শেখ হাসিনা হলের রিডিং রুমেও হালকা ফাটলের দেখা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বঙ্গবন্ধু হলের পাঁচতলার দক্ষিণ পাশের ব্লকের ৫০৪ নম্বর কক্ষের সামনের করিডরের মেঝের দুটি টাইলস উঠে গেছে। একই তলায় নতুন ও পুরাতন ব্লকের সংযোগস্থলের করিডোরে ফাটল দেখা গেছে। পাশাপাশি দক্ষিণ ২০৪ ও ২০৫ নং কক্ষের মাঝের সংযোগস্থলে পুরো পাঁচতলাব্যাপী ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া ২০৯ নং কক্ষেও ফাটল দেখা যায়।
এছাড়া নজরুল হলের দোতালার ২০৭ নম্বর কক্ষের দেয়ালে, টিভি রুমের সামনের পিলারের সংযোগস্থলে নতুন ফাটল দেখা গেছে। ফয়জুন্নেছা হলের পাঁচতলার ৫১১ নম্বর কক্ষে, ৫০৩ নম্বর কক্ষের ফাটল এবং চারতলার ৪০৩ নম্বর সামনের করিডোরে ফাটল দেখা গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৫১৯ নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এমরান হোসেন বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমরা নিচে নামতে পারিনি। কম্পন থামলে দক্ষিণ ব্লকে পাশাপাশি দুটি টাইলস ওপরের দিকে হালকা উঠে থাকতে দেখা যায়।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের ২০৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী এহসান জানান, প্রথমে আমরা কিছু বুঝতে পারিনি। ঝাঁকুনির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা সবাই দৌড়ে বাইরে চলে যাই। কিছুক্ষণ পর রুমে এসে দেখি দেয়ালে ছোটবড় কিছু ফাটল তৈরি হয়েছে।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সুমাইয়া চৌধুরী আনিকা বলেন, প্রথমে ছোটোখাটো কম্পন ভেবে রুমের দিকে আসছিলাম সবাইকে বলতে যে, এত নড়ছে কেন! গাড়ি যাওয়াতে ফয়জুন্নেসার পাশ দিয়ে প্রতিনিয়ত কনস্ট্রাকশনের কাজের জন্য বড় বড় মালবাহী গাড়ি যাওয়াতে হালকা কেঁপে উঠে। কিন্তু গোসলখানা থেকে রুমে আসার পথে দেখি ছাঁদ আর আমার রুমের পাশের জয়েন্ট আলাদা হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে বাকি নেই ভূমিকম্প। হল প্রভোস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা পুরো বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। যোগাযোগের পর বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট তোফায়েল আহমেদ মজুমদার সরেজমিনে ফাটলগুলো পরিদর্শন করেছেন।
তিনি জানান, বিষয়টি দেখার জন্য দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরে কথা বলবেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আবদুল লতিফ বলেন, আমি বিষয়টা জানতাম না। যদি স্ট্রাকচারাল কোনো সমস্যা হয় তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। যদি সত্যিই ভূমিকম্পের কারণে স্ট্রাকচারাল কোনো সমস্যা হয়, তবে তা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিষয়ে আমরা নিজেরা খোঁজ নিয়ে এক্সপার্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।
ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট কম্পনে কুমিল্লার একটি মসজিদে ফাটল ধরেছে। এ সময় মসজিদের দেয়ালের ফাটল ও তিনটি টাইলস খসে পড়ে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। শনিবার সকালে সাড়ে ৯টার পর কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার বাগবাড়িয়া জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটেছে। মসজিদের মুসল্লি ও স্থানীয় বাগবাড়িয়া তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হাসান আহমেদ বলেন, তীব্র কম্পনে মসজিদটিতে ফাটল ধরে।
এ সময় তিনটি টাইলস খসে পড়েছে। কোনো হতাহত হয়নি। ঘটনার পর স্থানীয়দের জানিয়েছি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভব হয়। ভূমিকম্পের উৎপত্তি কুমিল্লা অঞ্চলের রামগঞ্জ এলাকার ২৩ দশমিক ১৩৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা পাঁচ দশমিক ছয় মাত্রা।
সোনালী/জেআর