শিশুসহ দুইজনের প্রাণ নেয়া সেই হাতি অবশেষে আটক
অনলাইন ডেস্ক: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও রাজশাহীর তানোরে শিশুসহ দুইজনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া সেই হাতিকে অবশেষে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে চেতনানাশক ব্যবহার করে হাতিটিকে অচেতন করে আটক করা হয়। ঢাকা থেকে আসা উদ্ধারকারী দল চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে হাতিটিকে অচেতন করে আটক করে।
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন জানান, হাতিটির মালিকের বাড়ি বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায়। বিকেল ৪টার দিকে হাতিটি ধরার পর মালিকের পক্ষে সাকিল হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে হাতিটি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে হাতি নিয়ে এলাকায় সৃষ্টি হওয়া আতঙ্ক শেষ হয়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, তিন দিন ধরে দুটি হাতির মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করে আসছিলেন মাহুতেরা। মঙ্গলবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মানিকড়া গ্রামের আম বাগানে দুটি হাতি বেঁধে রেখে এর মালিক খাবার খেতে যান। এক পর্যায়ে হাতি দুটি গাছের ডাল ভেঙে ছুটে যায়। পরে একটি হাতিকে আটক করা সম্ভব হলেও অন্যটি বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে গিয়ে মো. মোফাশ্বির (১২) নামে এক শিশুকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ওপরে তুলে মাটিতে আছাড় দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে আমনূরার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে হাতিটি পালিয়ে রাজশাহীর তানোরে চলে আসে।
তানোর এসে উপজেলার ধামধুম এলাকায় বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাতিটি তাণ্ডব চালায়। একপর্যায়ে রামপদ মুণ্ডা নামে এক যুবককে পদপিষ্ট করে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই রামপদ মারা যান। তিনি উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের জুমার পাড়া গ্রামের মৃত ললিত মুণ্ডার ছেলে। হাতি ছুটে যাবার খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেটি ধরার জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত হাতিটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে কাজ স্থগিত করেন। এদিন হাতি ধরতে পুরো উপজেলা প্রশাসন তানোরের ধামধুম গ্রামে অবস্থান নিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মাঠে ছিল পুলিশ। ফায়ার সার্ভিস থেকে পানি দিয়েও হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার দেয়ার চেষ্টা করলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। শেষ পর্যন্ত খবর দেয়া হয় ঢাকায়।
ঢাকা থেকে আসা বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল বৃহস্পতিবার সকালে তানোরে গিয়ে দেখতে পায়, ঘটনাস্থল তানোরের ধামধুম গ্রাম থেকে হাতিটি সরে গিয়ে বৈধ্যপুর কবরস্থানে অবস্থান নিয়েছে। হাতি আতঙ্কে আশপাশের গ্রামের মানুষ এদিন মাঠে নামতে পারেননি। দুপুরে বন বিভাগের উদ্ধারকারী দল হাতিটিকে ধরে ফেললেও শিকল ভেঙ্গে পালিয়ে যায়।
রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবির জানান, দুপুর ১টার দিকে চেতনানাশক দিয়ে এটিকে ধরে ফেলা হলেও কিছুক্ষণ পর এটি আবার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। বিকেল চারটার দিকে চেতনানাশক ট্রাংকুলাইজার ব্যবহার করে হাতিটিকে অচেতন করা হয়। এসময় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ লোকজন হাতিটিকে ঘিরে ধরে ঢিল মারতে থাকে।
এ অবস্থায় হাতিটি আবারো ছুটে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয়দের ওপর চড়াও হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসন হাতির মালিক পক্ষকে এটি বুঝিয়ে দেন।
সোনালী/জেআর