ঢাকা | নভেম্বর ২৮, ২০২৪ - ১০:৩৪ অপরাহ্ন

আগামী নির্বাচনে নৌকা জিতবেই: প্রধানমন্ত্রী

  • আপডেট: Saturday, November 4, 2023 - 11:09 pm

সোনালী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণ অব্যাহত রাখতে দেশবাসীকে তঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগগণের সেবা করে যাব।

‘এবার নৌকা জিতবেই’ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর আরামবাগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন এবং নর্দান রুটে এমআরটি লাইন-৫ এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

আগামী সাধারণ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে উল্লেখ করে তিনি তাঁর দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলেন, আগামী নির্বাচনে কাকে নমিনেশন দেওয়া হবে সেটা আমরাই ঠিক করে দেব। যাকে নমিনেশন দেব ঐক্যবদ্ধ ভাবে তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে, যেন আবার আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। তিনি বলেন, এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ বাকী। সেগুলো যেন সম্পন্ন করতে পারি। কারণ, অগ্নিসন্ত্রাসী এবং জঙ্গিবাদিরা ক্ষমতায় এলে এদেশকে আর টিকতে দেবে না। সেজন্যই জনগণের স্বাথের্, জনগণের কল্যাণে সকলকে ঐক্যবব্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা ও উন্নয়ন দিতে। এই নৌকা মার্কায় ভোট প্রদানের জন্য তিনি সকলের প্রতি বিশেষ করে ঢাকাবাসী মানুষের প্রতি তাঁর অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এই নৌকা মার্কায় ভোটি পেয়েছিলাম বলেইতো এত উন্নতি হয়েছে সেই কথাটা যেন তারা মনে রাখেন। তিনি তাঁর দল যাকেই মনোনয়ন দেয় তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে ঢাকাবাসীর প্রতিশ্রুতি কামনা করলে সকলে দুইহাত তুলে সমস্বরে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তিনি সকলের দোয়া চেয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ আপনারা দলের সবাই ঐকবদ্ধ থাকবেন এবং ঘাতকের দল, সন্ত্রাসি দল বিএনপি এবং যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াত-এরা যেন এদেশের মানুষকে আর জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। এদেরকে প্রতিহত করতে হবে। আগুন সন্ত্রাসিদের শাস্তির আওতায় আনার প্রত্যয় পুণর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যারা এরমধ্যে জড়িত কারা হুকুমদাতা সে দেশে থাকুক আর বিদেশিই থাকুক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে বিদেশে বসে হুকুম জারি করে ঐ বিদেশ থেকে ধরে এনে ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশে শান্তি দেব ঐ কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড় পাবে না। বার বার তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টায় তিনি ভীত নন উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। আরো বক্তৃতা করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেননও বক্তৃতা করেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী সভায় সভাপতিত্ব করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী মেট্রোরেলের আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন। পরে তিনি মতিঝিল প্রান্তে এমআরটি লাইন-৫ এর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। যেটি হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার হবে পাতাল রেল। তিনি আগাঁরগাও প্রান্তে এমআরটি লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের অংশের উদ্বোধন শেষে টিকেট কেটে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল প্রথম মেট্রো রেল যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, ডিসিসির দুই মেয়র, সংসদ সদস্যসহ ঊর্ধ্বতন বেসমারিক ও সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং কর্তব্যপালনরত সাংবাদিকবৃন্দ মেট্রোরেলে তাঁর সহযাত্রী হন।

বিএনপির আগুন সন্ত্রাস বন্ধ না হলে কিভাবে বন্ধ করতে হয় তা জানা আছে বলে জানিয়ে এসব প্রতিরোধে কাঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে আগুন সন্ত্রাসীদের ধরে তাদের দেওয়া আগুনেই ফেলতে সবাইকে নির্দেশ দেন প্রধানামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা উন্নয়ন করি আর বিএনপি ধ্বংস করে। মানুষের ওপর অত্যাচার করে, হত্যা করে। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা তারা ঘটালো আপনারা বর্ণনা করেন। কোনো মানুষ যার ভেতর এতটুকু মনুষ্যত্ব আছে তারা কি পারে…, ওই পুলিশ কি দোষটা করেছে, আমি তো পুলিশকে ধন্যবাদ জানাবো যে তারা সেদিন যথেষ্ট সহনশীলতা দেখিয়েছে। তারা সহনশীলতা দেখিয়েছে অথচ ওই পুলিশের ওপর তারা আক্রমণ করেছে। পুলিশ পিছুহটে গেছে তারপরও এক পুলিশকে ধরে মাটিতে ফেলে যেভাবে তাকে লাঠিপেটা করেছে, মাথায় কুপিয়েছে, হেলমেটটা পরা ছিলো, সেটা ফেলে দিয়ে তারপর মাথায় কুপিয়েছে। পুলিশের হাসপতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে। আনসারদের ওপর আক্রমণ করেছে, আমাদোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি বিশেষ করে আমাদের মহিলা নেতাকর্মী তাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন করেছে, তারা মিছিল নিয়ে আসছিলো আমাদের শান্তি সমাবেশে। সেখানে বিএনপির গুণ্ডারা, গুণ্ডারাই বলবো, সন্ত্রাসীরাই বলবো। আজকে না ২০১৩, ১৪, ১৫তে ২৯ জন পুলিশকে হত্যা করেছিলো ওই বিএনপি-জামায়াত। আাজকে অগ্নিসন্ত্রাস, এটাই তাদের কাজ, কথায় কথায় আগুন দেয়। সেই ২০১৩, ১৪, ১৫-তে প্রায় ৩৮০০ মানুষকে তারা পুড়িয়েছে। তার ওপর ৫শ মানুষকে হত্যা করেছে, স্কুল পুড়িয়েছে ৫২৫টি, ৩০০০ গাড়ি পুড়িয়েছে, ২৯টি রেল, সরকারি অফিস, ভূমি অফিস। জ¦ালাও পোড়াও, ধ্বংস করা তাদের যেন উৎসব, এই হলো বিএনপির চরিত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের কাজই হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা আর সব কিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে, তাদের কে অধিকার দিয়েছে। তারা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে সৃষ্টি, কাজেই এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। এটা যদি বন্ধ করতে না পারে, কিভাবে বন্ধ করাতে হয় সেটাও আমাদের জানা আছে। এটা আমরা ছাড়বো না। ঢাকাবাসীসহ আমি দেশবাসীকে আহ্বান করবো, যারা এইভাবে পোড়াবে, এই আগুন দিয়ে যারা পোড়াবে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে, তবেই তাদের শিক্ষা হবে। আর তারা ভুলে গেছে তারা বাসে আগুন দেয়, গাড়িতে আগুন দেয় সাধারণ মানুষের, তাদের গাড়ি নাই? তারা গাড়িতে চড়ে না? তাদের জিনিস পত্র নাই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তখন তারা কোথায় যাবে কি করবে? সেটাও তাদের ভাবা উচিত। আসলে ওসব বিশ্বাস করি না বলে এখন ধৈর্য্য ধরে আছে দেশের মানুষ, কিন্তু কত দিন? আজকে কোনো জিনিসপত্র আসতে দেয় না, কোনো খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না, সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদেরকে সাবধান করে দিচ্ছি, ক্ষমতা দেবার মালিক আল্লাহ, আর এদিকে জনগণের ভোট। খালেদা জিয়া বলেছিলো, আওয়ামমী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে তার ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ এই চার চার বার ক্ষমতায় আছে। ইনশাল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং জনগণের সেবা আমরা করে যাবো। তবে ষড়যন্ত্র তারা চালিয়ে যাচ্ছে, ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই তারা বোঝে। আপনাদের কাছে একটা অনুরোধ, আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ওই ঘাতকের দল, সন্ত্রাসী দল বিএনপি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত এরা যেনো এদেশের মানুষকে আর জ¦ালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে, সজাগ থাকতে হবে।

সোনালী/জেআর