রাবি ছাত্রলীগের সম্মেলন আজ: আলোচনায় ড্রপ-আউট ছাত্রনেতারা
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক: দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর আজ সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের ২৬ তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বিদ্যাপীঠে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তঃত ডজন খানেক নেতা।
ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান জানান দিতে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে শোডাউনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে গিয়ে চালাচ্ছেন জোর তদবির।
তবে এদের মধ্যে ড্রপ আউট অনিয়মিতরাই রয়েছেন বেশ আলোচনায়। যদিও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ বলছেন ক্লিন ইমেজ, নিয়মিত ছাত্র ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা রয়েছে এমন নেতারাই নেতৃত্বে আসবে।
রাবি ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১২ নভেম্বর ২৬তম সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে সম্মেলন স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে চলতি মাসের শুরুতে ঘোষণা দেওয়া হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কাঙিক্ষত সেই সম্মেলন আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাবি ছাত্রলীগের উপপ্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব। গালিব সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ড্রপআউট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব ড্রপ-আউটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘অন্য একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্য মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি।
আরেক ড্রপ-আউট শিক্ষার্থী হলেন রাবি ছালীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ড্রপ-আউট হলেও তার বিরুদ্ধেও রয়েছে অভিযোগ। রাবিতে ছাত্রত্ব না থাকলেও ভর্তি রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাংগুজের একটি কোর্সে।
অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমকে মিশু বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমার সঙ্গে যারা রাজনীতি করে তাদের কিছু অপকর্মের অভিযোগ আমার দিকে এসেছে। তবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনায় জড়িত নই।
আলোচনায় থাকা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী (ড্রপআউট) ও মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অনিক মাহমুদ বনির বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা অনেক নেতাই শীর্ষ পদে আসতে চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যাম্পাসের অনেক ত্যাগী নেতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রমে দেখা যায়নি বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম জ্যাককে।
তবে করোনা পরবর্তীতে গত বছরের নভেম্বরে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করলে তিনি ক্যাম্পাসে আসেন। এ বিষয়ে জানতে জাকিরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো সব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। করোনাকালীন সময়েও আমি ক্যাম্পাসে থেকেছি। তাছাড়া প্রোগ্রামগুলোতেও আমি নিয়মিত থাকি।
কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমেদ ক্যাম্পাসে অনিয়মিত। অভিযোগ আছে তাকে দীর্ঘদিন কোনো দলীয় কার্যক্রমে দেখা যায় না। গত বছর সম্মেলন বাতিল হবার পর তিনি সক্রিয় ছিলেন না। এ বিষয়ে ফয়েজ বলেন, আমি দীর্ঘদিন অসুস্থতাজনিত কারণে ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। অসুস্থ হবার আগে আমি রাজনীতিতে নিয়মিত ছিলাম।
নিষ্ক্রিয় আরেক নেতা সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্স হল শাখার সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এগুলো সব মিথ্যা অভিযোগ। আমি ক্যাম্পাসের প্রোগ্রামগুলোয় নিয়মিত অংশগ্রহণ করি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সাকিবুল হাসান বাকি। তিনিও এবারের সম্মেলনে পদ প্রত্যাশী। তবে এতোদিন ক্যাম্পাসে তার কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি। এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পদ প্রত্যাশী ত্যাগী নেতা বলেন, ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন সম্মেলন নেই। আমরা সম্মেলন নিয়ে আসি আর একদল নিষ্ক্রিয় নেতা এসময় এসে হাজির হয়। তাদের উদ্দেশ্য নেতা হওয়া না, সম্মেলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। কেউ কেউ আবার নিজের আখের গোছাতেও এসময় এসে হাজির হন। তবে আমরা আশাবাদী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং সংশ্লিষ্ট নেতারা যোগ্যতার মূল্যায়ন করবেন। ক্যাম্পাসে এতোদিন কারা ছিলো সেগুলোও দেখবেন। যারা যোগ্য তারাই নেতা হবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রাণবন্ত একটি সম্মেলনের প্রায় সব প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে অছাত্র, বয়স নেই এমন কারো নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই। এছাড়া যারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে কাজ করেছে সৎ ও যোগ্য এমন প্রার্থীরাই নেতৃত্বে আসবে বলে আশাবাদী।
সোনালী/জেআর